ইনকিলাব ডেস্ক : পাকিস্তানের পরমাণু বৈজ্ঞানিক আব্দুল কাদির খান বলেছেন ভারতের রাজধানী দিল্লিকে ৫ মিনিটে উড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডির কাহুতা থেকে ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে এটা সম্ভব বলে জানান তিনি। কাদির খান বলেন, ১৯৮৪ সালেই পাকিস্তান পরমাণু শক্তিসম্পন্ন দেশ হতে পারতো এবং আমাদের সেই সামর্থ্য ছিল। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক। জিয়াউল হকের ভয় ছিল যদি পাকিস্তান পরমাণু পরীক্ষা চালায় তাহলে পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালাতে পারে বিশ্বশক্তি। দেশের সৈন্য দলকে অনেক প্রতিবন্ধকতার সামনে পড়তে হবে বলে তিনি মনে করতেন। আফগানিস্তানের থেকে যে সাহায্য পাওয়া যায় সেটাও বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা ছিল। উল্লেখ্য, কাদির খানের তত্ত্বাবধানে ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানে প্রথম পরমাণু বোমার সফল পরীক্ষা চালানো হয়।
২০০৪ সালে খানকে বদনামের ভাগি হতে হয়েছিল। যখন তিনি বলেছিলেন যে তিনি পরমাণু প্রসারে সামিল আছেন। এই বয়ানের পরে তাকে নজরবন্দি করে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন সেই সময় যে পাকিস্তান সরকারের এই ব্যবহারে তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন। তার সাহায্য ছাড়া পাকিস্তান কোনোদিন পরমাণু বিকাশ করতে পারত না। পৃথক সংবাদের মাধ্যমে পাকিস্তান পাইলটবিহীন মার্কিন বিমান বা ড্রোন ভূপাতিত করার ক্ষমতা রাখে বলে জানিয়েছেন দেশটির পরমাণু বোমার জনক ড. আবদুল কাদির খান। আফগান সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে মার্কিন ড্রোন হামলা জোরদারের প্রেক্ষাপটে এ মন্তব্য করলেন তিনি। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে মার্কিন ড্রোন হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক পাকিস্তানি নিহত হয়েছে। গত শনিবারও এ অঞ্চলে মার্কিন ড্রোন হামলা অন্তত ১২ জন পাকিস্তানির জীবন কেড়ে নিয়েছে। ড. আবদুল কাদির খান বলেছেন, ১৫ বছর আগে নির্মিত পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এসব ড্রোনকে ভূপাতিত করতে সক্ষম। তিনি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, বাইরের দিক থেকে তার দেশের প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থাকে খুবই নিñিদ্র বলে মনে হলেও ঘরোয়া পরিস্থিতির কারণে তা আসলে নিñিদ্র নয়। কাদির খান বলেন, পারমাণবিক ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এমন ধারণা করা ভুল যে আমরা আমেরিকা, ব্রিটেন বা ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারব না, কারণ, আমাদের পরমাণু ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে কেবল ভারতকে মোকাবেলার জন্য। ১৯৯৮ সালে ভারতের চারটি পরমাণু বোমা পরীক্ষার জবাবে পাকিস্তান ৫টি পরমাণু বোমার সফল পরীক্ষা চালিয়েছিল। খানই ছিলেন পাকিস্তানের ওইসব সাফল্যের মূল নায়ক এবং এ জন্যই পাকিস্তানি জনগণের কাছে জাতীয় বীর হিসেবে বিবেচিত হন ড. আবদুল কাদির খান। পাকিস্তানের উচিত উন্নয়ন, শিক্ষা ও শিল্পে অগ্রগতির ওপর জোর দেয়া, কিন্তু শাসকরা জনকল্যাণের ওপর জোর দিচ্ছেন না বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
এর আগে, ড. আবদুল কাদির খান বলেছিলেন, পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের কারণে ভারতের সঙ্গেপ্রচলিত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয়নি দেশটির। তিনি বলেন, এই পরমাণু শক্তির কারণে পাকিস্তানের জনগণ আজ মাথা উঁচু করে চলাফেরা করতে পারছে। নিউজউইক পাকিস্তান এর উদ্বোধনী সংখ্যায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। পাকিস্তানের গোপন পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির জনক কাদির খান বলেন, পরমাণু কর্মসূচি আমাদের বেঁচে থাকা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তা দিয়েছে। আর দেশপ্রেমিক ও দক্ষ সহযোগীদের সহায়তায় এ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পেরে আমি গর্বিত। পাকিস্তানের স্থায়ী জাতি পরিচয় না থাকা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে এই বিজ্ঞানী বলেন, পাকিস্তান কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট কোনো রাষ্ট্র নয়। আমরা মুসলমানেরা অবিভক্ত ভারতে স্বতন্ত্র জাতি ছিলাম। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস, সামাজিক আইন ও ঐতিহ্য ছিল। পরমাণু অস্ত্র ভুল হাতে পড়তে পারে-পশ্চিমা বিশ্বের এমন আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে কাদির খান বলেন, ভালো হোক বা মন্দ হোক পরমাণু বোমা একটি জটিল ও অত্যাধুনিক কৌশলসমৃদ্ধ অস্ত্র। এর প্রায় প্রতিটি অংশই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এর বিভিন্ন অংশের সন্নিবেশ ঘটাতে বিশেষ দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। এমনকি কোনো বিজ্ঞানী বা প্রকৌশলী অভিজ্ঞতা ছাড়া এ কাজটি করতে পারবেন না। তাই কোনো অশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীর পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা নেই। পাকিস্তানের পরমাণু বোমাকে ইসলামী বোমা নামকরণের জবাবে কাদির খান বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব এর মাধ্যমে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করে অন্যান্য দেশের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করছে। তিনি বলেন, মুসলমানদের ধ্বংস এবং ইসলাম ও এর মূল্যবোধকে হাস্যকর করতে পশ্চিমা বিশ্ব আজ একত্রিত হয়েছে। ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস্ অব ইন্ডিয়া, রেডিও তেহরান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন