বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর - রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা

প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:৪৫ এএম, ৩০ মে, ২০১৬

আহমদ আতিক
জাপানে অনুষ্ঠিত জি-সেভেনের আউটরিচ সম্মেলনে যোগদানের সুযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেকে এবং দেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি দেশীয় নেতা থেকে নিজেকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বনেতৃত্বের আসনেÑআন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা এমনটি মনে করেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও দিচ্ছে নতুন বার্তা। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার পর আসছে জাপানি বিনিয়োগ। সার্কের মধ্যে তৈরি হতে যাচ্ছে নতুন অর্থনৈতিক প্রবাহ। জি-সেভেনসহ বিশ্ব নেতাদের কাছে শেখ হাসিনা এখন একটি নাম নয়, একটি প্রেরণা। আর তাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনও বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্পের অংশ হতে চান। ইইউ থেকে বের না হওয়ার বিষয়েও তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ চান।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির ইনকিলাবকে বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর অত্যন্ত গুরুত্ববহ। ইংরেজিতে এটাকে বলা যায় ‘বাংলাদেশ রিচআউট অ্যাট দ্য জি-সেভেন আউটরিচ মিটিং’। আমাদের এখানে যা যা হওয়া সম্ভব প্রধানমন্ত্রী তা বিশ্ব নেত্রীবৃন্দের সামনে হাইলাইট করতে পেরেছেন। সামাজিক ক্ষেত্রেও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বহুপাক্ষিক ফোরামে বিশ্বের ক্ষমতাধর নেতাদের সাথে কূটনৈতিক সুযোগ প্রধানমন্ত্রী কাজে লাগিয়েছেন। আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপানÑএসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে আলোচনা রাজনৈতিক দিক থেকে অবশ্যই নতুন কিছুর ইঙ্গিত বহন করে। সরকার আগের চেয়ে নৈতিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে ওঠায় বিদেশীরাও আগের চেয়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এ ছাড়া জি-সেভেনের দেশগুলোতে আমাদের রপ্তানির ষাট ভাগ যায়। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এটার গুরুত্ব রয়েছে। এ ছাড়া জাপান-চীন আমাদের দেশের বড় প্রকল্পগুলোতে আগ্রহী। বর্তমান অবস্থায় তাদের সাথে আমাদের আলোচনার সুযোগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।  
জাপানে চার দিনের সফর শেষে গতকাল মধ্যরাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতির সাত পরাশক্তির জোট জি-সেভেনের সম্মেলনের পরদিন ওই আউটরিচ মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব ‘স্পষ্ট হয়েছে’। এর ফলে দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক সমাজে সরকারের অবস্থান আরো মজবুত হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জাপানের বিনিয়োগের নতুন নতুন খাত দেশের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক যোগাযোগেরও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একরাশ আশা নিয়েই এবার দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর দেশে ফিরে আবার তিনি রওনা হবেন মুসলিম বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী দেশ সউদী আরব সফরে।
বিগত বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় বিশ্ব দরবারে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, অন্য কোনও সরকারপ্রধান সেটা দিতে পারেননি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রনায়করা যেমন তার আমলে বাংলাদেশ সফর করেছেন, দ্বিপাক্ষিক সফরে তিনিও সেসব দেশে গেছেন। আন্তর্জাতিক ফোরামে গৌরবময় উপস্থিতিতে তিনি দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অবশ্য জি-সেভেনে বাংলাদেশের কোনো নেতার অংশগ্রহণ এই প্রথম নয়। ১৯৮৮ সালে ফ্রান্স যখন এই বৈঠকের আয়োজক, তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পার্থক্য এটাই যে, তিনি যেখানে শেখ হাসিনার মতো মর্যাদা পাননি, অর্থাৎ বাংলাদেশ সেই মাত্রায় সম্মানিত হয়নি, সমাদৃত হয়নি। সে কারণে দেশের অবস্থান কোথায়, নেতৃত্ব কে দিচ্ছেনÑঘুরেফিরে বিশ্ব দরবারে রাষ্ট্রের সম্মানের প্রশ্ন এলে এই প্রশ্নও আসে। সম্পদশালী শিল্পোন্নত সাত জাতির সংস্থা হলো জি-সেভেন। বাংলাদেশ এ সংস্থার কোনো কিছুই নয়। তবু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে সাত জাতির জি-সেভেন সম্মেলনে যোগদান করার জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত দিয়েছেন। জি-সেভেনের নেতারা তাকে খুবই আহ্লাদে নিজেদের মাঝে বসিয়েছেন। আর বাংলাদেশকে তিনি কিভাবে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন তার কাহিনী শুনেছেন। সম্মেলনে জি-সেভেনের নেতারা যারা উপস্থিত হয়েছেন তারা কেউ তাদের স্ব স্ব জাতির নির্মাতা নন। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছেন এবং বহু পূর্ব থেকে তাদের রাষ্ট্রগুলো সুপ্রতিষ্ঠিত। সুতরাং একটা নির্মীয়মান জাতির যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তার কথা শুনার তাদের আগ্রহ অস্বাভাবিক নয়। তাকে যে সম্মান দেখানো হয়েছে তাও অস্বাভাবিক নয়। এ সম্মান বিশ্বসভায় তার পাওনা।
আউটরিচ বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ছাড়া যে দেশগুলেকে মিটিংয়ে দাওয়াত দেয়া হয়েছে, তাদের সবাই কোনো না কোনো গ্রুপকে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিতে আমাদের যে উল্লেখযোগ্য অবদান, সেজন্য বাংলাদেশকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে।
বিশ্ব নেতৃত্বের সারিতে বসে জি-৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণ, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে সৌজন্য বৈঠকসহ গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ কর্মসূচিতে জাপানে তিন দিন ব্যস্ত সফর কাটিয়ে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আউটরিচের দুটি অধিবেশনে অংশ নিয়ে বিশ্বনেতা হিসেবে বিশ্বের সাতশ’ কোটি মানুষের উন্নয়নের বর্তমান অবস্থা, সে বিষয়ে ভাবনা ও দর্শনের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা
অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশলাদি ও মতবিনিময় হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন, আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দসহ অন্যান্য রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রধানদের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় শেখ হাসিনার। দুপুরে সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনের ফাঁকে শেখ হাসিনা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে। সে বৈঠকে ক্যামেরন বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে আগ্রহ প্রকাশ করেন এ উন্নয়নের গল্পের অংশ হওয়ার। ক্যামেরন ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়া-না হওয়ার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ চান।
পরদিন ২৮ মে সকাল থেকেও শুরু হয় তার ব্যস্ততা। সকাল ৯টায় প্রধানমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে। সে বৈঠকে বন্যাকবলিত শ্রীলঙ্কাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা। সিরিসেনা এসময় ঢাকা কলম্বো সরাসরি বিমানের ফ্লাইট চালুর অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ওষুধসহ পাটজাত দ্রব্য আমদানি করতে শ্রীলঙ্কার প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া সার্ক দেশগুলোর প্রবাসী শ্রমিকদের অর্থটা কীভাবে আমাদের দেশগুলোর মাধ্যমে প্রবাহিত করা যায় সেজন্য শ্রীলঙ্কার সাথে কাজ করবে বাংলাদেশ।
এদিনই প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবের সঙ্গে। দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠকে আলোচনা হয় দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে। এসময় ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন শিনজো আবে। বাংলাদেশের তরফ থেকে প্রস্তাব দেয়া হলে নতুন ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ নির্মাণে সহযোগিতার আশ্বাস দেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণেও সহযোগিতার কথা বলেন। বৈঠকে জাপানি প্রধানমন্ত্রী জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসাও করেন। এছাড়া বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরলে শিনজো আবে তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে তার দেশের সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিবদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল স্বাধীনতা বা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনেই নয়, উন্নয়নে এখনও জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু, রূপসা সেতু নির্মাণ জাপানের সহযোগিতায় হয়েছে। পদ্মাসেতু নির্মাণের অর্থায়নেও এগিয়ে এসেছিল জাপান। দেশে যখন কোনো আন্তর্জাতিক মানের হোটেল ছিল না, তখন হোটেল সোনারগাঁও তৈরিতে জাপানই হাত বাড়িয়েছিল। বর্তমানে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পে জাপান অর্থায়ন করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের সমুদয় অবদানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন আবের সাথে বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে। জাপানের ছয় বিলিয়নের মধ্যে চলতি বছর ১ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ‘সফট লোন’ আসবে। তাছাড়া জাপান ‘গুণগত’ অবকাঠামোর উপর গুরুত্বারোপ করেছে। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকায় এমআরটি, বঙ্গবন্ধুর সেতুর পাশে পৃথক রেললাইন স্থাপন এই ‘গুণগত’ অবকাঠামো উন্নয়নের আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব।
মেজবাহউদ্দিন বলেন, বৈঠকে ২০১৯ সালের মধ্যে এই টার্মিনাল আংশিকভাবে চালু করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ২০২০ সালে পুরোপুরি চালু করার বিষয়েও তারা দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ নেবেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিষয়েও জাপানারে সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। এই বিমানবন্দর ঢাকা থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরত্ব এলাকার মধ্যে হবে।
জানা গেছে, পদ্মার ওপারে চর জানাজাতে এই বিমানবন্দর নির্মাণ করা হতে পারে। তার আগে অবশ্য ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষাও করবে জাপান। এছাড়া ‘এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে’ জাপানের বিনিয়োগ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, শিনজো আবে শেখ হাসিনাকে বলেছেন, তার সরকার প্রতিশ্রুত ৬০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা বাংলাদেশকে দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে। চলতি বছরের মধ্যে যার দেড়শ’ কোটি ডলার দেয়া হবে।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, অঅবের সাথে বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ক্ষুদ্র মাঝারি ঋণ, জ্বালানি দক্ষতা, ন্যানো টেকনোলজি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী সহায়তাও চেয়েছেন; প্রতিটি বিষয় বিবেচনার আশ্বাস মিলেছে জাপানের পক্ষ থেকে। রফতানি পণ্যের ক্ষেত্রে রুলস অব অরিজিন শিথিল করায় জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক জোরদার করতে এটি করা হবে বলেও জানান শিনজো আবে। বাই-ব্যাক, মানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে উৎপাদিত পণ্য ফের কিনে নেয়ার যে প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বৈঠকে দেন তা খতিয়ে দেখা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করতে জাইকা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন শিনজো আবে।
গত শনিবার বিকালে টোকিওতে জাপানে বাংলাদেশের নতুন দূতাবাস উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭১৪ বর্গমিটার এলাকায় টোকিও’র কেন্দ্রস্থলে কিওইচো, ছিওদা-কু এলাকায় বাংলাদেশের নতুন চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে।
সফরের চতুর্থ দিন গতকাল রোববার সকালে জাপানের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রাতরাশ বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি বিদেশি নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য জাপানিদের প্রতি আহ্বান জানান। এরপর দুপুরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সকালের প্রাতরাশ বৈঠকে জাপানের ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। আমি চাই বাংলাদেশের এই ঊর্ধ্বমুখী সুযোগ এবং তারুণ্যদ্দীপ্ত জনশক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা আমাদের জাপানি বন্ধুরা ভোগ করুক। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শতাধিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কিছু আইটি পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছি। এর মধ্যে ৩৩টির কাজ এগিয়ে চলেছে। আশা করছি, আগামী চার বছরে বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদনে আরো এক কোটি মানুষ যুক্ত হবে।
তিনি জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমাদের ওষুধ ও জাহাজ নির্মাণখাতেও আগ্রহী হতে পারেন। আমাদের সমুদ্র অর্থনীতি আপনাদের সামনে তুলে ধরছে বিনিয়োগ সুযোগের বিশাল পরিধি। আপনারা নজর দিতে পারেন আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতেও। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সরকার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, জুট, মৎস্য আহরণ, টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং খাত নিয়েও কাজ করছে। একইসঙ্গে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে ‘সবুজ’ হতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুৎ বণ্টনের মতো নানা ক্ষেত্রে প্রয়োজন মেটানোর জন্য জাপান পা বাড়াতে পারে বলেও উল্লেখ করেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টর এই প্রথম জাপানের কাছে স্বীকৃতি পেলো। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা দুই দেশের প্রাইভেট সেক্টরে নতুন নতুন বিনিয়োগের পথ খুঁজতে পারব।
জাপান সফরের শেষ দিন রোববার স্থানীয় সময় বিকেলে টোকিওর ইমপেরিয়াল হোটেলে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আপনাদের একটা বড় অবদান রয়েছে। আপনাদের রেমিট্যান্স আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
উল্লেখ্য, জি-সেভেন জোটের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাদ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নিজে আউটরিচ মিটিংয়ে অংশ নেন।
পাশাপাশি আঞ্চলিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনার জন্য জোটের বাইরে থেকে বিভিন্ন দেশকে আলাদা বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। একেই বলা হচ্ছে জি-সেভেন আউটরিচ মিটিং। এবার বাংলাদেশের পাশাপাশি এশিয়া থেকে লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাপুয়া নিউ গিনি এবং আফ্রিকা থেকে শাদকে আউটরিচ বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আমন্ত্রণে এসেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব, আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপারসন এবং বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফের প্রধানরাও।



 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মিজান ৩০ মে, ২০১৬, ২:৪৬ পিএম says : 1
আশা জাগানো খবর শুনতে ভালোই লাগে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন