শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কুমিল্লার বাজারে চাহিদার শীর্ষে লিচু

প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকে মধুফলে সয়লাব কুমিল্লার ফল দোকানসহ পথ-ঘাট। জ্যৈষ্ঠের আম, কাঁঠাল, জাম, আনারস আর লিচুর বাম্পার ফলনেও বাজার থেকে বেশি দামে কিনে নিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে।
এখনো কুমিল্লার বাজারে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে লিচু। তবে কুমিল্লা নগরীতে মৌসুমী ফলের নির্দিষ্ট আড়ত না থাকায় ফলবাজার খ্যাত রাজগঞ্জের রাস্তার দু’ধারে ভোর থেকে সকাল অব্দি চলে লিচুর পাইকারি বেচাকেনা। ঝুঁড়িভর্তি লিচুর দরদাম নিয়ে ফল দোকানিদের হৈ-হুল্লুড়ে সরগরম হয়ে উঠে পরিবেশ।
কুমিল্লা নগরীর ফল দোকানগুলোতে মধুফলের ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। কাঁঠাল, আম, লিচু, জাম, আনারসের মধ্যে বর্তমান অবস্থানে শীর্ষে রয়েছে লিচু। বৈশাখের শুরুতে কুমিল্লায় ফল বাজার দখলে ছিল ভারতীয় লিচুর। আকারে ছোট ও অনেকটা টক স্বাদের ভারতীয় লিচু আসতো সীমান্ত পথে। চোরাচালানির মতোই নগরীর রাজগঞ্জ ফলপট্রিতে প্রতিদিন আসতো ভারতীয় লিচুর শতশত ঝুড়ি। প্রায় একমাস ভারতীয় লিচুর বাণিজ্য চলেছে। বৈশাখের শেষ সপ্তাহ থেকে বাজারে আসতে শুরু করে ইশ্বরদী, সোনারগাঁও, খাগড়াছড়ি, রংপুর, কুষ্টিয়ার লিচু। বাজার মাতিয়ে তুলে দেশের ওইসব অঞ্চলের সুস্বাদু লিচু। বিশেষ করে সোনাগাঁওয়ের কদমি লিচু জ্যৈষ্ঠের টানা দুই সপ্তাহ ছিল বাজারে। বর্তমানে রাজশাহী, দিনাজপুরের মোটামুটি বড় আকারের লিচু বাজারে মিলছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে দিনাজপুরের দেশিয় প্রজাতির মাদ্রাজি, বোম্বে লিচু, বেদেনা লিচু এবং রংপুর, কুষ্টিয়া অঞ্চলের আপেল লিচুর সমাগম ঘটবে বাজারে।
ভিটামিন বি এবং সি সমৃদ্ধ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম ফল লিচুর উৎপত্তিস্থল চীনের দক্ষিণাঞ্চলে হলেও এটির বাংলাদেশের রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, পাবনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খাগড়াছড়ি, নারয়নগঞ্জ, সোনারগাঁও, ঠাকুরগাঁও, ইশ্বরদীসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে বেদেনাসহ তিন জাতের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে দিনাজপুরের বিখ্যাত বেদেনা লিচু ক্রয়ের অপেক্ষায় রয়েছে কুমিল্লার ক্রেতারা। এবারে জ্যৈষ্ঠের শেষ সপ্তাহের দিকে রোজা শুরু হবে। ইফতারে বিভিন্ন আইটেমের সঙ্গে বেদেনা লিচুও তার রসালু স্বাদ নিয়ে স্থান করে নেবে।
কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ হচ্ছে ফলের অন্যতম এলাকা। বর্তমানে বাজারে রাজশাহীর আমসহ জ্যৈষ্ঠের অন্যান্য ফলের ব্যাপক সমাগমের পাশাপাশি প্রতিটি ফল দোকানের সামনে রয়েছে লিচুর ঝুড়ির সমাহার। এবারে অধিক তাপদাহ ও বৃষ্টি কম হওয়ায় লিচুর ফলনে কিছুটা ক্ষতি হলেও গতবারের চেয়ে ফলন বেশি হয়েছে। কুমিল্লার ফল দোকানিরা জানান, নগরীতে ফলের নির্দিষ্ট আড়ত না থাকায় প্রতিদিন ভোরে রাজগঞ্জ এলাকায় লিচুর ট্রাক, মিনিট্রাক এসে জড়ো হয়। বেপারিরা মধ্যরাতেই ঝুড়িভর্তি লিচুর ট্রাক নিয়ে রাজগঞ্জ এলাকায় আসেন। তারপর ভোরের আলো ফুটে উঠতেই শত শত লিচুর ঝুড়ি ট্রাক থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে রাখা হয়। ঝুড়ির ভেতরে লিচুর আকার কেমন তা না দেখেই একেক দোকানদার ৮/১০ ঝুড়ি কিনে নিচ্ছেন। অনেকে বেশি ঝুড়ি কিনে উপজেলায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত লিচুর ঝুড়ির বেচাকেনা চলে। বেপারীদের কাছ থেকে পাইকারি দরে লিচুর ঝুড়ি কেনা নিয়ে দোকানিদের শোর-চিৎকারে পরিবেশ সরগম হয়ে উঠে।
কুমিল্লার ফল দোকানিরা জানান, বর্তমানে একশ’টির বড় আকারের লিচু আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেদেনা, আপেল মাদ্রাজি ও বোম্বে লিচু বাজারে আসলে এটি প্রতিশত বিক্রি হবে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকায়। নগরীর রাজগঞ্জ, টমসমব্রীজ, চকবাজার, শাসনগাছার ফল দোকান ছাড়াও বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, কারাগার সড়ক, পুলিশ লাইনের মোড় ও মনোহরপুরের রাজবাড়ি কম্পাউন্ড, ছাতিপট্রি, কান্দিরপাড়ের ফুটপাতে, রাণীরবাজার রাস্তার মোড়ে লিচুর পসরা নিয়ে বসেছে মৌসুমী ফল বিক্রেতারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন