বরিশাল ব্যুরো : দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া পরিস্থিতি এখন কৃষি ও জনস্বাস্থ্যের অনুকূল নয়। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে তাপমাত্রার পারদ ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস-বৃদ্ধির ঘটনাসহ গত এক দশকের সর্বনি¤œ তাপমাত্রার শৈত্য প্রবাহের পর পরই মেঘলা আকাশসহ হালকা কুয়াশায় কৃষি ও জনস্বাস্থের জন্য ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। ইতোমধ্যে বরিশাল ও ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের প্রকপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপমাত্রার পারদ স্বভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে ৭.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যাবার কারণে অন্যতম প্রধান খাদ্য ফসল বোরো ধানের বীজতলাসহ রোপা ধানের ক্ষতির ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শীতকালীন সবজিসহ নানা রবি ফসল।
মাত্র ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে তাপমাত্রার পারদ ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে ২৪ জানুয়ারি বরিশালে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের স্থির হয়। কিন্তু এর ২৪ঘন্টা পরেই তা সাম্প্রতিক কালের সর্বনি¤œ ৭.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পায়। ২৬জানুয়ারি ৮ডিগ্রি এবং ২৭ জানুয়ারি বরিশালে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রীর ওপরে উঠলেও মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যধানে গতকাল তাপমাত্রার পারদ আরো ৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়ে ১৪.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠেছে। তবে উত্তর-পূবের হীমেল হাওয়ায় শীতের অনুভুতি ছিল যথেষ্ঠ বেশী।
আবহাওয়া বিভাগের মতে পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের গঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। সাথে এ মওশুমের স্বাভাবিক লঘু চাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বরিশাল, ফরিদপুর ও মাদারীপুর অঞ্চল সহ উপকূলীয় এলাকায় হালকা বা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কথাও বলা হয়েছে। গত বুধবার দুপুর থেকেই বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের আকাশ হালকা মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। গতকালও দিনভরই সূর্যকে বার বারই আড়াল করেছে মেঘমালা। আবহাওয়া বিভাগ থেকে মেঘনা অববাহিকায় হালকা থেকে মাঝারী কুয়াশার কথাও বলা হয়েছে। গতকাল পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও মোংলা এলাকার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠলেও পূর্ব-উত্তরের মওশুমী বায়ুসহ দিনের বেশীরভাগ সময়ই সূর্যকে মেঘ আড়ালে রাখায় শীতের কাপুনী অব্যাহত ছিল পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে।
তবে এবারে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে নিকট অতীতের নিজরবিহীন শৈত্য প্রবাহের কারনে গমের উৎপাদন আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে পৌঁছার সম্ভবনা রয়েছে। শীত প্রধান দেশের প্রধান খাদ্য ফসলÑগম গত প্রায় এক দশকেরও কিছ বেশী সময় ধরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও বাণিজ্যিকভাবে আবাদ হচ্ছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে শীতের তীব্রতা কম থাকায় এর আবাদ ভাল হলেও উৎপাদন আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে পৌঁছছে না। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই গম আবাদে বিশ্বের ৮ম থেকে ১০ম স্থানে পৌঁছেছে। তবে যে বছর শীতের তীব্রতা যত বেশী থাকে উৎপাদনও ততটা বৃদ্ধি পায়। যদিও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীগণ ইতোমধ্যে কম তাপমাত্রায় অধিক উৎপাদনক্ষম গম বীজ উদ্ভাবন করে তা কৃষক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করেছে। কিন্তু বিএডিসি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদাশীনতায় তার আবাদ প্রযুক্তি ও বীজ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছ ভালভাবে পৌঁছেনি।
তবে এবারের নজীরবিহীন শৈত্য প্রবাহে গমের ভাল উৎপাদন নিয়ে আশা থাকলেও বোরা বীজতলা, গোল আলু ও শীতকালীন সবজির বাগানকে ব্যাপাক ঝুঁকির কবলে ঠেলে দিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। এ তিনটি ফসলই সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিÑঅর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে আগামী দু-এক দিনে তাপমাত্রার খুব একটা পরিবর্তনের সম্ভবনা নেই বলেও জানান হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন