বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

প্রশ্নবিদ্ধ ইউপি নির্বাচন - একচেটিয়া বিজয়েও স্বস্তি নেই আ.লীগে

প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, ভোটে কারচুপি ও রক্তাক্ত সহিংসতার তা-বে প্রশ্নবিদ্ধ চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জয়ের ধারা অব্যাহত থাকলেও স্বস্তিতে নেই দলটি। এ পর্যন্ত পাঁচ ধাপে মোট ৩ হাজার ৫৯৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। আর বাকীদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি দলটির দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে গত শনিবার পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত সহিংসতায় মারা গেছে ১১৩ জনেরও বেশি মানুষ। আহত হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোয় ভোট কারচুপির অভিযোগ, প্রার্থী বাছাই নিয়ে তৃণমূলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর আধিক্যের মতো স্পর্শকাতর ইস্যু আওয়ামী লীগকে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে। এসব কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে এখন ‘শাঁখের করাত’ মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারকদের কেউ কেউ।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই-প্রক্রিয়া নির্ভুল করা সম্ভব হয়নি। এতে তৃণমূলে চরম অসন্তোষ কাজ করছে। অনেক যোগ্য প্রার্থীই মনোনয়বঞ্চিত হয়েছেন। এ কারণে তারা মনঃক্ষুণœ হয়ে দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। এটা কেন্দ্র মনিটরিং করেও সামাল দিতে পারেনি।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় জয় নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করছেন না। বিপরীতে অস্বস্তি প্রকাশ করছেন। তারা মনে করছেন, দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে খুনোখুনি-দ্বন্দ্ব-সংঘাত তৃণমূল আওয়ামী লীগকে বিশৃঙ্খল করে তুলছে। এতে তৃণমূলের ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়ছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভেতরে যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, তা শিগগিরই দূর হবে বলে মনে করছেন না দলটির শীর্ষ নেতারা। মতে, তৃণমূলের চলমান বিরোধ কেন্দ্র থেকে হুকুম দিয়ে দ্রুত মিটিয়ে ফেলা সম্ভব নয়।
আওয়ামী লীগ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, জয় আসছে ঠিকই, কিন্তু সংঘাত-সংঘর্ষ ঠেকানো যাচ্ছে না। আর এসব সংঘাত-সংঘর্ষ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভেতরেই চলছে। তাই নির্বাচনী সহিংসতা আমাদের জয়ের উৎসবকে মøান করে দিচ্ছে। সহিংসতামুক্ত নির্বাচন ও জয় নিশ্চিত করতে পারলে জয় নিয়ে স্বস্তি পাওয়া যেত।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, সহিংসতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এটা দুশ্চিন্তার কারণ। বিএনপি নির্বাচনী মাঠে না থাকায় এসব সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে। নির্বাচনী মাঠে প্রতিপক্ষ থাকলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষ মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকতেন। এখন প্রতিপক্ষহীন নির্বাচন হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগই দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজি জাফরউল্লাহ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কিছু পাওয়ার যেমন আছে, তেমনি কিছু হারানোর বিষয়ও রয়েছে। এটাই রাজনীতি।
তিনি বলেন, এগুলো মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আওয়ামী লীগে অসংখ্য নেতাকর্মী রয়েছেন। সবাইকে খুশি করা যাবে না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূলে এক ধরনের অসন্তুষ্টি কাজ করছে। কেউ পাওয়ার আনন্দে আনন্দিত, কেউ হারানোর ব্যথায় ব্যথিত।
তিনি বলেন, দলীয় ব্যানারে প্রথমবারের মতো নির্বাচন হওয়ায় এসব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে এসব ঝামেলা আর থাকবে না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে খানিকটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের সামাল দেয়া যায়নি বলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পরে আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বিশৃঙ্খলা দূর করব। প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হওয়ায় অনেক জায়গায় ঝামেলা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে এসব ঝামেলা আর থাকবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন