ঢাকার সঙ্গে উত্তর জনপদ-পশ্চিম অঞ্চলের ২০টি জেলার সড়ক যোগাযোগের অন্যতম রুট সিরাজগঞ্জের ১২২ কি.মি. জাতীয় মহাসড়ক। প্রতি বছর ঈদ এলেই যানজট ও দুর্ঘটনাসহ নানা ভোগান্তির আশঙ্কা দেখা দেয় এ সড়ক ঘিরে।
সব ভোগান্তির শঙ্কা উড়িয়ে দিতে এবার ঈদের অন্তত ২/১ মাস আগে থেকেই মহাসড়ক সংষ্কারে উদ্যোগ নেয় সওজ কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ঈদের ১ সপ্তাহ পূর্ব থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি সচেতনতামূলক নানা পদক্ষেপ নেয় হাইওয়ে পুলিশ। এজন্য এ বছর কোন প্রকার যানজট বা ভোগান্তি হবে না বলে দাবী করছে সওজ কর্তৃপক্ষ। এজন্যে জনমনে কিছুটা স্বস্তি এলেও হাইওয়ে পুলিশ, পরিবহণ শ্রমিকদের মুখে আশঙ্কার কথা থেকেই যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কে কড্ডার মোড়, নলকা-বনপাড়া মহাসড়কের নলকা ব্রীজ, হাটিকুমরুল গোল চত্ত¡র, মহিষলুটি, মান্নান নগর এবং বগুড়া-নগড়বাড়ী মহাসড়কের ঘুগড়া ও উল্লাপাড়া এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন পরিবহন চালক, হেল্পার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এমন আশঙ্কার কথা শোনা যায়। তারা বলেন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে ১৮ কি.মি. আসার পর ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতু। ইতোপূর্বে এই সেতুর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করায় সেতুটি ডেবে পড়ে উত্তরাঞ্চলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এই শঙ্কা এখনও বিরাজমান। এই সেতুতে আসার পর গাড়ীর গতি একেবারেই কমাতে হয়। এসময় অতিরিক্ত গাড়ীর চাপ দেখাদিলে যানজট সৃষ্টির সংখ্যাও বাড়বে। একই সমস্যা হাটিকুমরুল গোল চত্ত¡রের অদূরে ধোপাকান্দি সেতুতে। হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের মহিষলুটি ও মান্নান নগরের মাঝামাঝি স্থানে বেশকয়েকটি এলাকায় বড় বড় গর্ত রয়েছে। একারনেও বেশ দুর্ভোগের শঙ্কা শোনা গেল চালকের মুখে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশ মনে করছে, কড্ডার মোড় এলাকায় রোড ডিভাইডারের মাধ্যমে ২টি লেন সরু করে ফেলা হয়েছে। এসব লেন দিয়ে একের অধিক গাড়ী যেতে পারবে না। ব্যস্ত ঐ মহাসড়কে সরু লেনের কারনে যানজট সৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। সওজ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ নলকা থেকে কাছিকাটা সেতু পর্যন্ত ২৯ কি.মি. ও চান্দাইকোণা থেকে বাঘাবাড়ী সেতু পর্যন্ত ৫৮ কি.মি. মহাসড়কের মধ্যে বেশীরভাগ অংশেই মেরামত কাজ শেষ হয়েছে। তবে শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা মুলিবাড়ী থেকে নলকা পর্যন্ত ২১.৬ কিঃমিঃ মহাসড়কের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ সড়কের দুই পাশে প্রায় ১২ কিঃমিঃ নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কড্ডার মোড় এলাকায় রোড ডিভাইডারের মাধ্যমে দুটি লেনই সরু করে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনে ১৪ কিঃমিঃ সম্পূর্ণ মহাসড়ক স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবী সংশ্লিষ্টদের। তাই যমুনা সেতু পাড় হয়ে নলকা সেতুর পূর্ব পর্যন্ত যানজটের কোন সমস্যা হবে না। তবে ভূঞাগাঁতী-নিমগাছি, সয়দাবাদ-এনায়েতপুর ও তাড়াশ-রানীহাটের কাজ চলমান রয়েছে। হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশ এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, এবছর মহাসড়কে বেশীরভাগ অংশ আগেভাগেই সংস্কার শেষ হওয়ায় স্বস্তি রয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসগকের কড্ডার মোড় সরু লেন, নলকা সেতু ও ধোপাকান্দি সেতুর কারনে যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ শহিদ আলম বলেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষকে ৬টি সুপারিশ করা হযেছিল। সেই সুপারিশগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় নি। তাই কিছুটা শঙ্কা থেকেই যায়। তবে সড়কে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে।
ঈদ আসতে আর আরও বাকি প্রায় দুই তিন দিন। ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। ঘরমুখো মানুষ আর অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এরই মধ্যে যানজট শুরু হয়েছে। যানজট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে আগে থেকেই নানা পদক্ষেপের কথা বলা হলেও আশ্বাসের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়ার শেরপুর অংশে। ঈদযাত্রার এই ভোগান্তির লাগাম টানতে শত চেষ্টা বিফল হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন