ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে প্রায় ৬ হাজার কেজি চালভর্তি ট্রাক জব্দসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের নূরপুর সড়ক বাজার থেকে এসব চাল জব্দ করা হয়। তবে এসব চালের দায় নিচ্ছেন না কেউই। স্থানীয়দের অভিযোগ, জব্দ হওয়া এসব চাল ভিজিএফের। গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছোয়াব আহমেদ ঈদের আগে অসহায় ও হতদরিদ্রদের মধ্যে চাল বিতরণে অনিয়ম করেছেন। তবে পুলিশ ও খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, চালের বস্তায় সরকারি দপ্তরের কোনো মোহর নেই।
আটক ব্যক্তিরা হলেন গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছোয়াব আহমেদের চাচাতো ভাই নূরপুর গ্রামের বজলু মিয়ার ছেলে মো. আলাউদ্দিন (৪৫), একই ইউনিয়নের পাঠানিশা গ্রামের জেরবাজ খাঁর ছেলে ট্রাকচালক মিজান মিয়া (৩৮) ও নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা ট্রাকচালকের সহযোগী মাসুক মিয়া (২২)।
গোকর্ণ ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলী জাহান বলেন, ‘রাতে চোরাই পথে পাচারের সময় ট্রাকভর্তি ভিজিএফের চালসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে বলে শুনেছি। থানায় আটক ট্রাকচালক ও ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই চাল ব্যবসায়ী আলাউদ্দিনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এগুলো ভিজিএফের চাল বলে তারা জানিয়েছেন। তবে তারা এসব চাল উপকারভোগী হতদরিদ্রদের কাছ থেকে কিনেছেন। কী পরিমাণ কিনেছেন, তা তারা বলেননি।’
এলাকাবাসী ও পুলিশ স‚ত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত নয়টার দিকে নাসিরনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) পঙ্কজ দেবনাথের নেতৃত্বে তিন ব্যক্তিসহ ওই চাল জব্দ করে পুলিশ। পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজিদুর রহমান জব্দ করা চাল, ট্রাক ও আটক তিনজনকে থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ট্রাকে ১৪৯ বস্তা চাল আছে। প্রতি বস্তায় চালের পরিমাণ ৪০-৪৫ কেজি। গতকাল (শনিবার) বেলা দেড়টার দিকে ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা সামিউল আলিম, গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলী জাহানসহ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে এসব চাল ভিজিএফের কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।
গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে দুস্থদের সহায়তা কর্মসূচির (ভিজিএফ) আওতায় ১ হাজার ৭৫০ জনের জন্য ২৪ টন চাল বরাদ্দ পায় এই ইউপি। উপকারভোগীদের প্রত্যেকে ১৫ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা। কিন্তু চাল বিতরণের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক সংযুক্তকারী কর্মকর্তার (ট্যাগ অফিসার) উপসহকারী প্রকৌশলী ইছাক মিয়া উপস্থিত ছিলেন না।
গোকর্ণ ইউনিয়নের অন্তত ১৫-২০ জন হতদরিদ্র জানান, ঈদুল ফিতরের ভিজিএফের চাল বিতরণে চেয়ারম্যান ছোয়াব আহমেদ অনিয়ম করেছেন। ১৫ কেজি করে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা ৭ থেকে ১০ কেজি করে চাল পেয়েছেন।
ইউপি সদস্য আলী জাহান বলেন, ‘ভিজিএফের চাল বিতরণের জন্য আমি ৯০ জন হতদরিদ্রের নাম দিয়েছিলাম। তারা চাল পেয়ে অভিযোগ করেছেন, ১৫ কেজির স্থলে তাদের ৭ থেকে ৮ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে।’
৩ ও ৪ জুন ভিজিএফের চাল পেয়েছেন এমন ১৫ থেকে ২০ জন জানান, চাল পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বাইরের একটি দোকানে তারা তা ওজন দিয়ে দেখেছেন। এতে তারা ১৫ কেজির স্থলে সর্বোচ্চ ১০ কেজি চাল পেয়েছেন। কারও কারও ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ছিল মাত্র ৭ কেজি।
নাসিরনগরের ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা সামিউল আলিম বলেন, ‘খাদ্য অধিদপ্তরের সিলযুক্ত কোনো বস্তা পাওয়া যায়নি। তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না। চালগুলো সরকারি কি না বা ভিজিএফের কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।’ প্রতি বস্তায় ৪০-৪৫ কেজি চাল রয়েছে বলে জানান তিনি। তার ভাষ্য, এখানে প্রায় ৬ হাজার কেজি চাল রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ছোয়াব আহমেদ অসহায়দের মধ্যে বিতরণের জন্য ভিজিএফের ২৬ হাজার ২৫০ কেজি (প্রায় ২৬.২৫০ টন) চাল বরাদ্দ পেয়েছিলেন।
গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করেও ফোন না ধরায় গোকর্ণ ইউপির চেয়ারম্যান ছোয়াব আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ঈদের আগে তিনি জানিয়েছিলেন, চাল বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়নি। এসব অভিযোগ মিথ্যা। সব চাল বিতরণ হয়েছে। সবাইকে ১৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। কিন্তু সবাই চাল বিক্রি করে দিচ্ছেন।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা ট্রাকভর্তি ১৪৯ বস্তা চালসহ তিনজনকে আটক করেছি। ভারপ্রাপ্ত খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার উপস্থিতিতে চালগুলো সরকারি কি না, যাচাই করেছি। জব্দকৃত চাল সরকারি ভিজিএফের চাল নয় বলে তিনি জানিয়েছেন। কারও কোনো অভিযোগ না থাকলে চালগুলো মালিককে বুঝিয়ে দেয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল কবির ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম জানান, চাল বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না তা তিনি এখনো জানতে পারেননি। তিনি বিস্তারিত জেনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন