৬৫দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধে সরকারি নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবিতে সীতাকুন্ড উপজেলার ফৌজদারহাটস্থ এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেড় ঘন্টা অবরোধ করেছে ক্ষুব্ধ জেলেরা। এসময় চরম দুর্ভোগে পড়েন দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আসা শিশুসহ সাধারণ যাত্রীরা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় পৌনে ১২টা পর্যন্ত অবরোধকালে সড়কের উভয় দিকে প্রায় ২০ কি.মি. পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় এমপিসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা দ্রæত সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দিলে সাময়িক ভাবে অবরোধ প্রত্যাহার করেন জেলেরা। তবে তাদের দাবি মানা না হলে বুধবার থেকে আবারো গণ অণশন করবেন বলে হুশিয়ারী দেন জেলে নেতারা।
জানা যায়, সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট বাংলাবাজার পোর্ট কানেকটিং সড়কে উপজেলার চট্টগ্রাম পতেঙ্গা থেকে শুরুকরে ১ নাম্বার সৈয়দপুর পর্যন্ত ৩৮ টি জেলে পাড়ার অসংখ্য জেলে নারী-পূরুষ একত্রিত হয়ে সাগরে মাছ ধরা বন্ধে সরকারি নির্দেশনার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল পালিত, সীতাকুন্ড হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব কুমার দে, মুক্তিযোদ্ধা মানিক লাল বড়–য়া, সংগঠনের দ্বীবেশ চন্দ্র নাথ ও সীতাকুন্ড উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দসহ অনেকে।
এতে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, জেলেদের ভরা মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধের সিদ্ধান্তে জেলেরা আর্থিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে আগামী ১১ জুন বুধবার সকাল থেকে গণ অনশন কর্মসূচিসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। জেলেদের সাথে প্রশাসনের কোনো শত্রæতা নেই। জেলেরা বাধ্যহয়ে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের দাবি মেনে নিলে তারা কোনো দিন মহাসড়কে অবস্থান নিবেনা। এদিকে সড়কে ব্যারিকেটের কারণে রাস্তার উভয় পাশে চট্টগ্রামের অলংকার থেকে শুরু করে ভাটিয়ারী পর্যন্ত অন্তত ২০ কি.মি. পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে স্থানীয় এমপি দিদারুল আলম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন সাবেরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায়, সহকারী কমিশনার(ভ‚মি) মো. মাহবুবুল হক, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এডিশনাল এসপি (দক্ষিণ) টুটুল, চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) মো. জাহাঙ্গীর, সীতাকুন্ডের সার্কেল এডিশনাল এসপি শম্পা রাণী সাহা, ওসি (তদন্ত) মো. আফজাল হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান, মো. নাজিম উদ্দিন, মো. সালাউদ্দীন আজিজ,ওসি (ইন্টিলিজেন্স) সুমন বণিক, ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ টি.আই রফিক আহমেদ মজুমদার, সার্জেন্ট সাইফুলসহ অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স ফৌজদারহাট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
স্থানীয় এমপি দিদারুল আলম তাদেরকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে জেলেরা বেলা পৌনে ১২টার দিকে সড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।
এদিকে উত্তর চট্টলা উপকূলীয় জলদাশ কল্যাণ সমবায় ফেডারেশন সভাপতি লিটন ও সহ-সভাপতি উপেন্দ্র ও সাধারণ সম্পাদক হরি, সহ-সাধারণ দুলাল বলেন, ইলিশ মৌসুমে মা মাছ ধরা বন্ধে সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হতো আগে। আর ইলিশের মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ততদিন জেলেরা আয় উপার্জন করা শেষে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে পারতেন। তবে এবছর হঠাৎ করে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু জুন-জুলাই-আগস্ট এ তিন মাস মাছ ইলিশের ভরা মৌসুম।
আর বছরের বাকি মাসগুলোতে সাগরে বার বার জাল ফেলেও কোনো মাছ পাওয়া যায় না। তারা সকাল থেকে গভীর সমুদ্রে নেমে সন্ধ্যা বেলায় খালি হাতে ঘরে ফিরেন। এ কারণে মাছ ধরা বন্ধের পরিবর্তে সরকার জেলেদের প্রতি পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি করে চাউল পাঠালে তা জেলেরা গ্রহণ করেন নি।
এদিকে এমপি দিদারুল আলম বলেন, জেলেদের দাবির বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষে সাথে আলোচনা করার আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। আমরাও চেষ্টা করছি জেলেদের এ সমস্যা সমাধানের। এ বিষয়ে ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলেরা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মহাসড়কে অবরোধ ও মানববন্ধন করে। পরে তা প্রত্যাহার করলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন