নোয়াখালী ব্যুরো : মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে গৃহহীন হচ্ছে হাতিয়া উপজেলার হাজার হাজার পরিবার। বর্ষা মৌসুমে ভাঙন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাবার পাশাপাশি জনসাধারণের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের নলচিরা, হরনী ও চানন্দী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ এখন হুমকির সম্মুখীন। খর¯্রােত ও জোয়ারের ঢেউয়ে বিলীন হচ্ছে শত শত মানববসতি। মেঘনার করাল গ্রাসে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী হাতিয়া দ্বীপের নয়নাভিরাম জনপদ। ধনাঢ্য পরিবার রাতারাতি গৃহহীনে পরিণত হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার হাজার হাজার পরিবার দেশের বিভিন্ন জেলায় আশ্রয় নিয়েছে। এ যেন প্রকৃতির নির্মম প্রতিশোধ। হাতিয়ার সৌন্দর্যম-িত পুরাতন শহর, ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদ এখন শুধুই স্মৃতি। লক্ষাধিক পরিবার এখন নিঝুমদ্বীপ, হরনী, চানন্দী ইউনিয়নসহ জেগে ওঠা কয়েকটি স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। হাতিয়ার তমরদ্দি,নলচিরা, চরকিং ও সুখচর ইউনিয়নের বিশাল এলাকা ইতিপূর্বে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে নলচিরা ও সুখচর ইউনিয়নের মাত্র ৭টি গ্রাম অবশিষ্ট রয়েছে।
হাতিয়া দ্বীপ রক্ষাকল্পে সরকারী উদ্যোগে এ যাবৎ কয়েকটি উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কখনো আলোর মুখ দেখেনি। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে বিধ্বস্ত বেড়ীবাঁধ সংস্কারের অস্থায়ী উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটা ফলোদয় হচ্ছে না। প্রবল জোয়ারের তোড়ে বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হওয়া ছাড়াও হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে উভয় সংকটে পড়ছে হাতিয়াবাসী। দ্বীপ উপজেলা রক্ষাকারী কয়েকটি স্থানে বেড়ীবাঁধ বিধ্বস্থ হওয়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমে জনসাধারণ আতঙ্কগ্রস্ত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাসের আশংকায় প্রহর গুনছে জনসাধারণ। আর তাই বন্যা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপবাসী সরকারী সাহায্য অর্থাৎ ত্রাণসামগ্রীর পরিবর্তে নদীভাঙন রোধের দাবী জানিয়ে আসছে। জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও হাতিয়া আসনের সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী ইনকিলাবকে জানায়, হাতিয়া উপজেলার প্রধান সমস্যা হচ্ছে নদী ভাঙন। বর্তমানে প্রতি বছর দেড় হাজার পরিবার নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার নতুন চরগুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করছে। তিনি আরো বলেন, স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধ করা গেলে অপার সম্ভাবনাময় হাতিয়া উপজেলা দেশের মানচিত্রে রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত হবে। হাতিয়া আসনের এমপি আয়েশা ফেরদাউস ইনকিলাবকে জানায়, সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব হাতিয়া উপজেলার নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হাতিয়ার নলচিরা, সুখচর ও চরকিং ইউনিয়নের ৬ কিলোমিটার এবং হরনী ও চানন্দী ইউনিয়নের ২ কিলোমিটার এলাকা নদীভাঙন রোধকল্পে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উক্ত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন