প্রস্তাবিত বাজেটে জনসাধরণকে সুকৌশলে করের ফাঁদে আটকানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। বাজেটে কলরেট বৃদ্ধি, ইন্টারনেটের মূল্যবৃদ্ধি ও ডিভাইসের মূল্যবৃদ্ধি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণকে বাঁধাগ্রস্ত করবে বলে মনে করে সংগঠনটি। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমানে দেশে ৫-জি চালুর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। একদিকে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চায়। অন্যদিকে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ব্যয়ও বৃদ্ধি করতে চায়। এ ধরণের দ্বিমুখী নীতির কারণ কি সরকারের কাছে সে প্রশ্ন রাখে গ্রাহক এসোসিয়েশন। সোমবার (১৭ জুন) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে টেলিযোগাযোগ সেবায় ব্যয়বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, সিপিবি’র সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এড. আবু বক্কর সিদ্দিক, সদস্য সাব্বির আহমেদ প্রমুখ।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, টেলিযোগাযোগ খাত থেকে অদৃশ্য অর্থ আদায় করা যায় বলেই সবচাইতে বেশি চাপ প্রয়োগ করে রাজস্ব আদায় করা হয়। ডিজিটাল মাধ্যমে অর্থ আদায় করার ফলে গ্রাহকরা যেহেতু প্রত্যক্ষভাবে সমস্যায় পড়ে না তাই এ খাত রাজস্ব আদায়ে উত্তম বলে সরকারের কাছে বিবেচিত।
তিনি বলেন, বাজেটে টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন করারোপে গ্রাহকদের মনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। অর্থমন্ত্রী হয়তো অবগত নন যে, গত বছর বাজেটে কলরেট বৃদ্ধির পর পুনরায় নতুন করে ১৫ আগস্ট ২৫ পয়সা সর্বনি¤œ কলরেটের স্থলে ৪৫ পয়সা সর্বনি¤œ কলরেট নির্ধারণ করেছে। গত ১৩ ডিসেম্বর সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে কলরেট বৃদ্ধি না করতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। পরবর্র্তীতে ৪ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট কলরেট বৃদ্ধির উপর নিষেধাজ্ঞ জারি করেন। সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন নতুন করে কলরেট বৃদ্ধিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এমতাবস্থায় সরকারের হাইকোর্টের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নতুন করে করারোপ করা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন ছিল। যদিও প্রভিশনাল কালেকশন অব ট্যাক্সেস অ্যাক্ট ১৯৩১ এর ধারা ৩ অনুযায়ী আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত কিছু পরিবর্তন বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে যায়। কিন্তুহাইকোর্টের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে গ্রাহক সমাজ এই করারোপের কর দিতে বাধ্য নই। মুঠোফোন এসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, আমরা মহামান্য হাইকোর্টের পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকবো। যদি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোন প্রকার অর্থ আদায় করা হয় তার জন্য অপারেটর ও সরকার দায়ী থাকবে।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে প্রকারে চক্রবৃদ্ধি হারে করারোপ করা হয় তাতে করে শতকরা প্রায় ৫৬ শতাংশ অর্থ সরকারি কোষাগারে গ্রাহককে দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে আদায় হবে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। জুন ২০১৫ পর্যন্তও মোবাইল ফোন ব্যবহারে শুধু ১৫ শতাংশ ভ্যাটই দিতেন গ্রাহক। ২০১৫-১৬ সালের বাজেটে প্রথমবার মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক নিয়ে আসা হয়। প্রথমে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিলেও পরে তা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয় বিভিন্ন পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে। কিন্তু দুই বছর বাদেই কিন্তু আবার এই শুল্ক ৫ শতাংশ করে দেওয়া হয়, যেটি এবার ১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হলো। মাঝে যোগ করা হয়েছে ১ শতাংশ সারচার্জ। নতুন সম্পূরক শুল্ক আসার কারণে এখন মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ওপর মোট ট্যাক্স গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশে।
তিনি আরও বলেন, সিম কার্ডের উপর নতুন করে ১০০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা ভ্যাট নির্ধারণ নতুন গ্রাহকদের ব্যয় বৃদ্ধি করবে। অপারেটরদের উৎস আয়ের উপর নতুন করে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ করের বোঝাও গ্রাহকদের চাপবে। মোবাইল ফোন আমদানির ওপরে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করায় গড় খরচ বাড়ল এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। সংগঠনটি প্রস্তাবিত বাজেটে যে অন্যায় করের বোঝা চাপানো হয়েছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন