সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেছেন, ‘নির্বাচনের হলফনামার তথ্যানুযায়ী, দেশের শীর্ষ ১০ ধনীর একজন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি কি আমাদের মতো গরিব মানুষের দুঃখ বুঝবেন? মাথাপিছু আয়ের হিসাব করার সময় তিনি তো আমার আয় আর তার আয়কে দুই দিয়ে ভাগ করবেন। তখন দেখা যাবে, আমি অনেক আয় করি! এই হলো আমাদের সার্বিক মাথাপিছু আয়ের অবস্থা। আমার এত বছর বয়স হয়েছে। আমি চাকরি জীবনে বহু বছরই বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কোনো সময় দেখি নাই সাধারণ মানুষের কথা, তাদের সমস্যা আর যারা প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতিবিদ আছেন, তাদের কথা কানে নিয়েছে; এমন নজির নেই।’
গতকাল রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাজেট ২০১৯-২০ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন এম হাফিজউদ্দিন খান। গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সুজন। বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ, সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজনের সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, সাবেক সচিব ও কলামিস্ট আব্দুল লতিফ মন্ডল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ প্রমুখ।
এম হাফিজউদ্দিন বলেন, ‘বাজেট আলোচনায় প্রান্তিক মানুষের সমস্যা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। আমরা দেখেছি, বাজেটে কৃষকের সমস্যা দেখা হয়নি। ধানের উৎপাদন মূল্য কম হওয়ার জন্য ভর্তুকি দেয়ার দরকার ছিল। সে বিষয়ে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ বাজেটে নেয়া হয়নি।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বর্তমানে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে। এর অনেকগুলো জিডিপি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখলেও রামপাল এবং রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো অনেক প্রকল্প হলো আমাদের জন্য ভয়ানক প্রকল্প। ভূমিকম্প হলে রূপপুর প্রকল্প আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে নিয়ে আসবে। রূপপুর প্রকল্প থেকে যে বর্জ্য নির্গত হবে তার কী ব্যবস্থা হবে, আমরা সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানি না। যাদের টাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন হয়ে থাকে, দেশের উন্নয়নের জন্য বাজেট দেয়া হবে আর সেই বাজেটে সাধারণ জনগণের জন্য কিছু থাকবে না, এটা হতে পারে না। বাজেট শুধু দিলেই হবে না, সেই বাজেটে সাধারণ জনগণের জন্য কী আছে সেটা নিশ্চিত করা দরকার।’
অর্থনীতিবীদ ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বাজেটের আকার বৃদ্ধি কোনো চমক নয়। এটা বয়স বাড়ার মতো, প্রতি বছর বাড়তেই থাকবে। বরং বিভিন্ন খাতে বাজেটে যে বরাদ্দ দেয়া হয় পরিমাণ ও গুণগত মান ঠিক রেখে তা কতটা বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। বাজেটে জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরকারের আগ্রহ দেখা যায়, অন্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আগ্রহ দেখা যায় না।’
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, ‘বাজেটে সুশাসন ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা দরকার। দরকার দরিদ্র মানুষের জন্য মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো। বর্তমানে আমাদের বাজেট হয়ে গেছে অনেকটা ছকবাঁধা। তাই বাজেটের কাঠামোগত সংস্কার দরকার বলে আমি মনে করি।’
এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল বলেন, ‘এ বাজেটের কিছু ভালো ও মন্দ দিক রয়েছে। এ বাজেটের একটি ভালো দিক হলো বাজেটের আকার ও পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। বাজেট উচ্চাভিলাষী মনে হলেও উচ্চাভিলাষ থাকা ভালো। কারণ, আমরা যদি এ বাজেটের ৭০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে নিশ্চয়ই কম পাওয়া হবে না। আমাদের মানবসম্পদ এবং প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির আকাক্সক্ষাও একটি ইতিবাচক দিক।’
বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘ভোগ বাড়লেও কিলোক্যালরি গ্রহণ কমছে। আমরা দেখছি, চালের ভোগ কমেছে, কারণ সবাই এখন শুধু ভাতের ওপর নির্ভরশীল নয়। তাই সাধারণভাবে কিলোক্যালরি গ্রহণ কমে যাওয়া এখনো দুশ্চিন্তার বিষয় নয়। প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে কর্মসংস্থান কমে, তাই বিকল্প কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন