শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাবির ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকার বাজেট

গবেষণায় বরাদ্দ ৫ দশমিক ৪ শতাংশ

নুর হোসেন ইমন : | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সিনেট অধিবেশনে আগামী অর্থবছরের জন্য এ বাজেট পেশ করেন বিশ^বিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. কামাল উদ্দীন। বাজেটে গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৪০ কোটি ৮০ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে এবারের সিনেট অধিবেশনে দীর্ঘ ৩ দশক পর যোগ দেন ডাকসু মনোনীত ৫ ছাত্র প্রতিনিধি। বিকেলে যখন সিনেটের ভিতরে অধিবেশন শুরু হয় এরআগেই সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা।

সিনেটের চেয়ারম্যান ও বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিকাল ৩টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। বাজেটে মুক্তিযুদ্ধে জীবন দানকারী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রয়াত ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারিদের জন্য দাঁড়িয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর তাদের আত্মার শান্তির জন্য মুনাজাত পরিচালনা করেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আব্দুর রশীদ।

অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সামাদ, সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, নির্বাচিত রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধিগণ ও ৫ ছাত্র প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৭৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে এ বছর বাজেট বেড়েছে ৬৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

ঢাবি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ৮১০ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার বাজেটের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ৬৯৪ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাত থেকে ৬৬ কোটি টাকা আসবে। বাজেটে সম্ভাব্য ঘাটতি ধরা হয়েছে ৪৫.৭৭ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এতে ২৫৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মোট বাজেটের ৩১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ভাতাদি বাবদ ১৯৫ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা যা মোট ব্যয়ের ২৪.১৭ শতাংশ। পণ্য ও সেবা বাবদ ১৭১ কোটি ৭৬ টাকা যা মোট ব্যয়ের ২১.১৯ শতাংশ। বিশেষ অনুদান খাতে ১০ কোটি ৫৯ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা যা মোট ব্যয়ের ১.৩১ শতাংশ এবং অন্যান্য অনুদান খাতে ১৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা যা মোট ব্যয়ের ২১.৬৮শতাংশ।

এবারের সিনেট অধিবেশনে আলোচ্য সূচির মধ্যে রয়েছে, উপাচার্যের অভিভাষণ, কোষাধ্যক্ষের বাজেট উপস্থাপন, পূর্ববর্তী অধিবেশনের কার্য-বিবরণী অনুমোদন, ২০১৭-১৮ সালের বার্ষিক বিবরণী বিবেচনা, জগন্নাথ হল ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মনোনয়ন এবং ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য ছয়জনের একটি প্যানেল অনুমোদন।

বাজেট উত্থাপনকালে কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. কামাল উদ্দীন বলেন, সরকার থেকে যে অর্থ বরাদ্দ আমরা পাই, তা দিয়েই আমাদের চলতে হয়। আমাদের নিজস্ব আয় অতি সামান্য। পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার ব্যয় সরকার বহন করবে না ছাত্রী-ছাত্রীকে বহন করা উচিত তা নিয়ে সারা বিশে^ বিতর্ক হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে প্রকৃত মেধা লালনের জন্য ব্যয়ের সিংহভাগ অব্যশ্যই সরকারকে বহন করা উচিত।

ভিসির অভিভাষণ বক্তৃতায় প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং এ বর্তমান অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন মহলে আলোচনা সমালোচনা চলছে। প্রকৃত তথ্য না জেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে ঢালাওভাবে অনেকেই যেসব মন্তব্য করেন, তা খুবই হতাশাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করছি। আর্থিক খাতসহ প্রশাসনের কোনো স্তরেই অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা বা দুর্নীতি কোনোক্রমেই সহ্য করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়বৃদ্ধি বা সম্পদ আহরণকে উৎসাহিত করে না।

৩ দশক পর সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি
এবারের সিনেট অধিবেশনের বিশেষ দিক ছিলো দীর্ঘ তিন দশক পর এতে ছাত্র প্রতিনিধিদের উপস্থিতি। সিনেটে শিক্ষার্থীদের মতের প্রতিফলনে পাঁচজন নির্বাচিত প্রতিনিধি রাখার বিধান রয়েছে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে। ২৮ বছর ডাকসু অচল থাকায় ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই সিনেট সভা আয়োজিত হয়ে আসছেলো। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলনও করেছে শিক্ষার্থীরা। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সিনেটে উপস্থিত ছিলেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানী, সদস্য তিলোত্তমা সিকদার। অন্যদিকে ডাকসুতে অধিকাংশ সদস্য ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত হওয়ায় তাদের মতামতের ভিত্তিতে সিনেট সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস।

সিনেটের বাইরে দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পর ৫ ছাত্র প্রতিনিধিসহ বাজেট অধিবেশন শুরু হলেও সিনেটের বাইরে বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৩টায় সিনেট অধিবেশন শুরুর আগ থেকেই ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে তারা বিভিন্ন দাবি দাওয়া উত্থাপন করে। মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়ার মধ্যে রয়েছে, আবাসন সংকট নিরসনে বরাদ্দ বাড়ানো, লাইব্রেরী ২৪ ঘন্টা চালু রাখা, গেস্টরুম সংকটের সমাধান চাই, সকল উন্নয়ন ফি বাতিল করা, সকল রুটে রাত ৮টা পর্যন্ত বাস চালু রাখা, ক্যাম্পাসে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। মানববন্ধনে অংশ নেয়া ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যা সমাধানে সিনেটের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন