চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মোট ৬ মাসে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ২৫৭ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি’র এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গত রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণা জরিপের এ তথ্য জানানো হয়। জাতীয় ও স্থানীয় ২৬টি (জাতীয় ১৫টি ও ১১টি স্থানীয়) দৈনিকের প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ গবেষণা জরিপ করেছে বলে সংস্থাটি জানায়।
জরিপের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-জুন) কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ২৫৭ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ২১০টি দুর্ঘটনায় এ প্রাণহানি হয়। অন্যদিকে, গতবছরের প্রথম ৬ মাসে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩৫২ জন। যেখানে ২৮৫টি দুর্ঘটনা ঘটে।
তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। এই সংখ্যা ১৩৪ জন। এর মধ্যে পরিবহন খাতের শ্রমিকের সংখ্যা ১২৯ জন। তারা বাস, ট্রাক, ভ্যান ও বিভিন্ন যানবাহনের ড্রাইভার, কন্ডাক্টর ও হেলপার হিসেবে কাজ করার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। আর বাকি একজন নির্মাণ শ্রমিক ও চারজন দিনমজুর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যার দিক থেকে পরিবহন খাতের পর নির্মাণ খাতে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে। কর্মক্ষত্রে কাজ করার সময় নির্মাণ খাতে নিহত হয়েছেন ৫১ জন। এক্ষেত্রে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে (ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান) ৩৭ জন এবং কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে ৩৩ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে খোলা আকাশের নিচে মাছ ধরা, কৃষিকাজ করার সময় বজ্রপাত ও বিদ্যুতায়িত হয়ে ৭ জন কৃষিশ্রমিকের মৃত্যু ঘটে।
প্রতিষ্ঠানটি মৃত্যুর কারণ হিসেবে- শক্ত বা ভারী কোনো বস্তুর আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ৩১ জন; বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ২১; ছাদ, মাচা বা ওপর থেকে পড়ে ১৯; পাহাড় বা মাটি ধসে ১৬; বিভিন্ন বিস্ফোরণে ৯; রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে ৭; ব্রিজ, ভবন, ছাদ, বা দেয়াল ধসে ৫ জন শ্রমিক মারা গেছেন বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া আগুনে বা তপ্ত লোহায় পুড়ে ও পানিতে ডুবে ৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা ও প্রাণহানিরোধে সংস্থাটির প্রস্তাবিত সুপারিশের মধ্যে- হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী কোড এনফোর্সমেন্ট অথরিটি গঠন করে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড, ২০০৬’ যথাযথ বাস্তবায়ন; প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন; আইন বাস্তবায়নে রাজউক ও কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা; কমর্রত শ্রমিকদের বিনা মূল্যে যথাযথ নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদান এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের সুপারিশ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন