চট্টগ্রাম নগরীতে এখন বেপরোয়া যুবলীগ। আধিপত্য বিস্তারে একের পর এক নিজেদের মধ্যে সংঘাত, সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে তারা। এর ধারাবাহিকতায় দলীয় কোন্দলের জেরে এক কর্মীকে সাপের মতো পিটিয়েছে নিজ দলের কর্মীরা।
নগরীর আকবরশাহ থানার বিশ্বকলোনীতে মধ্যযুগীয় কায়দায় যুবলীগ কর্মী মো. মহসিনকে (২৬) রাস্তায় ফেলে লাঠিপেটা করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ফুটেজ দেখে পুলিশ তাদের পাঁচজনকে গতকাল সোমবার গ্রেফতার করে। তার আগে রোববার বিকেলে বিশ্বকলোনী এন ব্লকে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নিজ দলের কর্মীদের নির্মম মারধরের শিকার মহসিন বিশ্বকলোনী এম ব্লকের বাসিন্দা। তিনি উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার মোর্শেদ কচির অনুসারী বলে জানা গেছে। গুরুতর আহত যুবলীগ কর্মী মহসিন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. মাসুদ (১৮), মো. মিরাজ (১৭), মো. সাজু (২৪), মো. বেলাল (২০) ও মো. তারেক (১৮)।
আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্বকলোনী এন বøকে মহসিন নামে এক যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধরের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় আটজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সবমিলে ১২-১৫ জন ঘটনায় জড়িত ছিল। হামলার শিকার মহসিন থানায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোন মামলা করেনি। তবে আকবরশাহ থানার এসআই ইমদাদ হোসেন বাদী হয়ে মহসিনের উপর হামলাকারীদের আসামি করে একটি মামলা করেছেন বলে জানান ওসি।
মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, লাঠি-সোটা নিয়ে এগিয়ে আসা হামলাকারীদের দেখে প্রথমে পিছিয়ে গিয়ে পালানোর চেষ্টা করে মহসিন। অনেকটা গ্রামের ঝোপঝাঁড়ে মানুষের লাঠির আঘাত থেকে সাপ যেভাবে বাঁচার চেষ্টা করে, তেমনই। যুবকটি দৌড়ে যাওয়ার সময় একটি দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায়। তখন হামলাকারীরা আসে, একজন তার এক পা ধরে রাখে। মাটিতে শোয়া যুবকটিকে তখন আরও ৫ জন লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এ সময় আশপাশে ছিল ১০-১৫ জন। হামলা থেকে বাঁচতে আহাজারিতেও মন গলেনি হামলাকারীদের। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে যুবকটিকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে হামলাকারীরা মাথা উঁচু করে চলে যায়। মহসিনকে পেটানোর এক মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মারধরের সময় এদের মধ্যে একজন মহসিনের পা ধরে রাখে। ওই যুবকের নাম চৌধুরী জুয়েল। জুয়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া ভিডিও ফুটেজ দেখে তুহিন, রাব্বী, পারভেজ, ফারহান ও খোকন নামে আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হামলায় জড়িতরা উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের অনুসারী। উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার মোর্শেদ কচি বলেন, জহুরুল আলম জসিমের নির্দেশে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তার অনুসারীরা। মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করা হয়েছে মহসিনকে। অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম বলেন, মহসিনের গ্রুপের লোকেরাই তাকে মারধর করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো কর্মী জড়িত নয়। আহত মহসিনকে সন্ত্রাসী বলেও দাবি করেন কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম।
এর আগে গত শনিবার সরওয়ার মোর্শেদ কচি গ্রুপের কর্মী মামুনকে মারধর করে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের অনুসারী বেলাল উদ্দিন জুয়েল ও তার সঙ্গীরা। পরে মামুনের বন্ধুরা গিয়ে বেলাল উদ্দিন জুয়েলকে তার ঘরে ঢুকে মারধর করে। আহত বেলাল উদ্দিন জুয়েল ও মামুন দুইজনই চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানায়, লাঠি পেটায় আহত মো. মহসিন মারামারির মামলায় প্রায় একমাস জেল খেটে গত ২৭ জুন জেল থেকে বের হন। দলীয় কোন্দলের জেরে বাসার কাছেই সে হামলার শিকার হয় সে।
এদিকে লালখান বাজারে আধিপত্য বিস্তারের জেরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল আরও চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। খুলশী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী বলেন, এ নিয়ে এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ২২ জনকে গ্রেফতার করা হলো। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে ও শুক্রবার রাতে দিদারুল আলম মাসুম গ্রুপ ও বেলাল গ্রুপের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়। নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে সরকারি দলের যুব সংগঠন-যুবলীগ ও ছাত্র সংগঠন- ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংঘাত, সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন