জার্মানি থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের ইঙ্গিত। কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়বে দুই বন্ধুপ্রতিম ন্যাটো দেশের বন্ধুত্ব : হুঁশিয়ারি তুর্কি প্রধানমন্ত্রীর
ইনকিলাব ডেস্ক : একশ’ বছর আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুর্কি অটোমান শাসকদের নৃশংসতায় প্রায় ১৫ লাখ আর্মেনীয় হত্যার ঘটনাকে গণহত্যা ঘোষণা দিয়ে জার্মানির পার্লামেন্ট একটি প্রতীকী প্রস্তাবনা অনুমোদন করে তুরস্কের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে। জার্মানির এ পদক্ষেপকে ঐতিহাসিক ভুল আখ্যা দিয়ে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই বলেছেন তারা জার্মানি থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তিনি এ পদক্ষেপকে অযৌক্তিক আখ্যা দেন। এতে করে দুই ন্যাটো দেশের বন্ধুত্ব কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়বে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। তবে আর্মেনিয়া জার্মানির পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
জার্মানির এ উদ্যোগ তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ককে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের ক্ষমতাসীন একে পার্টির মুখপাত্র। আর্মেনীয়দের দাবি, ১৫ লাখ আর্মেনীয় তুর্কি অটোমানদের হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিল। কিন্তু তুরস্ক সবসময়ই এ গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। নিহতের সংখ্যা আরও কম ছিল এবং ওই সহিংসতা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিণতিতে হয়েছিল বলে দাবি তাদের। ফ্রান্স ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর বিপরীতে বার্লিনই দীর্ঘদিন যাবত গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার করার বিরোধী ছিল। এ যাবত শুধু বামদলের প্রস্তাবেই গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছিল; অন্যান্য দলগুলো বিতাড়ন ও হত্যাকা- বলত। কিন্তু চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের কোয়ালিশন সরকার পার্লামেন্ট সদস্যদের চাপে শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবনায় গণহত্যা ঘোষণা করল। প্রস্তাবনার শিরোনাম এবং টেক্সটে গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। ওই হত্যা বন্ধে কোনও কিছু না করার কারণে জার্মানিও কিছুটা দায়ী বলে প্রস্তাবনায় স্বীকার করা হয়েছে।
জার্মানির ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বিরোধী গ্রিন পার্টে আর্মেনীয় গণহত্যাবিষয়ক এ প্রস্তাব আনে। ফলে জার্মান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্ডেস্টাগের ভোটের সময় মার্কেল উপস্থিত না থাকলেও পার্লামেন্টারি দলগুলো একযোগে প্রস্তাবনার পক্ষে ভোট দেয়। উদ্যোগটি এমন সময় এল যখন অভিবাসীর ঢল সামলাতে ইইউ’র তুরস্কের সহায়তা প্রয়োজন। নিয়ে জার্মানি-তুরস্ক সংঘাতে অভিবাসীর বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তবে আর্মেনিয়া জার্মানির পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। ১৯১৫ সালের ওই হত্যাকা-কে আর্মেনিয়া গণহত্যা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্য অনেকদিন থেকেই দাবি জানিয়ে আসছে। আর্মেনিয়াসহ অনেক দেশের ইতিহাসবিদরাও মনে করেন আর্মেনীয়দেরকে অটোমান বাহিনী ১৯১৫ সালে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।
আরও বেশ কিছু পশ্চিমা দেশও এ বিষয়ে একমত। ইউরোপীয় পার্লামেন্টও আর্মেনীয় হত্যাকা-কে গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব পেশ করেছে। এর আগে পোপ ফ্রান্সিস গত ১৩ এপ্রিল প্রকাশ্যে আর্মেনীয় হত্যাকা-কে বিংশ শতাব্দীর প্রথম গণহত্যা অভিহিত করে তুরস্কের সঙ্গে বিরোধে জড়ান। ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ২৪ ও ২৫ এপ্রিলÑ দুই দিনে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ নিহত হয় আর্মেনিয়ায়। সেই যুদ্ধের পর ধ্বংস হয় অটোমান সাম্রাজ্য। অটোমানদের হামলাতেই নিহত হয়েছিল এ মানুষগুলো। পরে ১৯২৩ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের ভস্মের ওপর গড়ে ওঠে আধুনিক প্রজাতান্ত্রিক তুরস্ক। রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন