শফিউল আলম : চলতি জুন (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়) মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই সারা দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু তথা বর্ষার বায়ুমালা বিস্তারলাভ করতে পারে। বাংলাদেশসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর হয়ে সহসা এগিয়ে আসছে বর্ষার মৌসুমি বায়ুমালা। জুন মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি মৌসুমি নি¤œচাপ সৃষ্টি হতে পারে। জুনে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে স্বাভাবিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় উপরোক্ত পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ।
এ বৈঠকে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানানো হয়, চলতি জুন মাসে দেশের দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ৩.৭৫ মিলিমিটার থেকে ৪.৭৫ মি.মি. এবং গড় উজ্জ্বল সূর্যকিরণকাল ৪ ঘণ্টা থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টাকাল স্থায়ী থাকতে পারে। এদিকে গত মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের তুলনায় গড়ে ২৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৯৩ শতাংশ ও খুলনা বিভাগে ৪৪.৭ শতাংশ বেশি বর্ষণ হয়েছে। তবে গত এপ্রিল মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫২ শতাংশ কম বৃষ্টি তথা অনাবৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু গত মার্চ মাসে ৪৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
গত মে মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আবহাওয়া বিভাগ জানায়, গত মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা ২৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিক হারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর সক্রিয় প্রভাবে বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত মাসে দেশের বেশ কিছু জায়গায় কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রবৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া গত মাসের প্রথমার্ধে খুলনা বিভাগ এবং রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১ মে যশোরে ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে উত্তর শ্রীলঙ্কা ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় গত ১৭ মে একটি নি¤œচাপ সৃষ্টি হয়। এটি প্রথমে উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় ১৯ মে সকালে গভীর নি¤œচাপে পরিণত হয়। পরে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে রূপ নেয়। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু পরবর্তীতে উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও উত্তর বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে ২১ মে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে চট্টগ্রামের নিকটবর্তী উপকূল ভাগ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে। বৃষ্টিপাত ও বৃষ্টিপাতের দিনসংখ্যা ছাড়া ঘূর্ণিঝড়, তাপমাত্রা, তাপপ্রবাহ, কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং নদ-নদীর অবস্থা গত মে মাসের পূর্বাভাস প্রকৃত আবহাওয়ার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল বলে জানায় আবহাওয়া দপ্তর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন