অর্থনৈতিক রিপোর্টার : নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নকে অন্যতম দুর্বলতা বলছে, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গবেষণা সংস্থাটি বাজেটের পথ-নির্দেশনা নিয়ে সমালোচনা না করলেও, লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং আর্থিক কাঠামোর শক্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার, এডিপির বাস্তবায়ন ও কর আহরণের ক্ষেত্রে সমস্যার বিষয়ে তুলে ধরেছে। এছাড়া ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ, নতুন কর্মসংস্থান তৈরিসহ অনেক খাতের জন্য ইতিবাচক পরিকল্পনা অনুপস্থিত থাকায় বাজেট বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হবে বলে উল্লেখ করেন।
গতকাল রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে নানা তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট প্রসঙ্গে সংস্থাটির পক্ষে মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা তুলে ধরেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেন হোসেন, রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশীয় উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রবণতা বাড়ায় ঋণ পরিশোধে ব্যয় বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার, এডিপির বাস্তবায়ন ও কর আদায়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রফতানি লক্ষ্যমাত্রা যুক্তিসঙ্গত। তবে, রেমিট্যান্সের লক্ষ্যপূরণ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। ভর্তুকির ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা থাকা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি বলেছে, ৭ দশমিক ২০ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে যে বিরাট আয় এবং ব্যয় করতে হবে তার জন্য রাজনীতিক উদ্যোগ ও আর্থিক কাঠোমোর প্রয়োজন। এ নিয়েই মূলত সংশয় প্রকাশ করেছে সিপিডি। যারা কর দিচ্ছে তাদের করের আওতা বাড়ানোর চেয়ে বাজেট বাস্তবায়নে সংসদীয় কমিটিগুলোকে আরো বেশি যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, সাধারণত বাজেট অনুন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে উন্নয়ন ব্যয় বাড়নো দরকার। কিন্তু আমাদের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে অনুন্নয়ন ব্যয় তুলনামূলক অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এটি লক্ষ্য করা গেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় বেশি বরাদ্দ রাখা দরকার বলেও মন্তব্য করে তিনি।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রসঙ্গ তুলে ড. দেবপ্রিয় বলেন, এডিপি নিয়ে নতুন কোনো ধরনের অগ্রগতি লক্ষ্য করছি না। মেগা প্রকল্পগুলো আগের মতো অবস্থায় রয়েছে। এডিপির তহবিল গতবারের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। এটা ব্যবহার করতে হলে যে নীতির পরিবর্তন দরকার, যে অবকাঠামো দরকার তা নেই।
তিনি বলেন, এডিপির অনেক প্রকল্প রয়েছে যার ৫০ শতাংশই সম্পন্ন হয়নি, যে প্রকল্পগুলো শেষ হবে বলা হচ্ছে সেগুলোতেও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ১৮টি প্রকল্পে মাত্র ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, ২০টিতে মাত্র ১ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মাসেতু ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া অন্যগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন করা হয়নি।
তিনি বলেন, আর্থিক যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাতে করের হারে পরিবর্তন হচ্ছে না, কাঠামোতে এক ধরনের স্থিতিশীলতা আসছে। করের আহরণের পদ্ধতিগুলোতে এখন জোর দিতে হবে। কী পদ্ধতিতে কর আহরণ করা যায়, মানুষের কাছে কীভাবে পৌঁছানো যায় সে বিষয় জোর দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি আরো বলেন, যারা বর্তমানে কর দেন তাদেরই উপর করের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কারণে এবারের বাজেট প্রণয়ন তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দময় হয়েছে। তাই সরকার বাজেট বড় করতে পেরেছে। তবে বাজেটে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ, নতুন কর্মসংস্থান তৈরিসহ অনেক খাতের জন্য ইতিবাচক পরিকল্পনা অনুপস্থিত থাকায় বাজেট বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
বাজেট বাস্তবায়ন বিষয়ে তিনি বলেন, বাজেটে বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা বাস্তবায়নে ব্যক্তিখাতে বাড়তি ৮০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এ টাকা কোথা থেকে আসবে, ব্যাংক থেকে না পুঁজিবাজার থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট বক্তব্য নেই।
এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটকে তিনি অনেক বড় মনে করছেন না। তার মতে, দেশের পুরো অর্থনীতি বড় হচ্ছে। সেই সাপেক্ষে বাজেটের আকার বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তাই এটা নিয়ে খুব বেশি উচ্ছ্বাসের কিছু নেই। বাজেট নিয়ে যারা ঐতিহাসিক, সাহসী বাজেট বলেছেন তাদের জানা থাকা উচিত দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন