শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সংসারের চাকা ৭ মাস সচল দারকিতে

শনিবারের সন্দেশ

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

বছরের চাকা ঘুরে বর্ষা মৌসুম এলেই হাজেরা বেগমের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সন্তানের প্রতিও নজর দেয়ার সময় মেলে না। ঘরের সামনে এক চিলতে উঠানে বসে দিনভর দারকি বাঁধেন নিবিষ্ট মনে। তাকে ঘিরে কাজে ব্যস্ত অন্যরাও। চৈত্র মাসে দারকির জন্য অগ্রিম এক হাজার টাকা নিয়েছেন হাজেরা। চুক্তি মোতাবেক এক কুড়ি দারকি বানিয়ে পাইকারকে দিতে হবে।

এভাবে হাজেরা পাইকারের কাছ থেকে আগ্রিম টাকা নিয়ে দারকি বানাচ্ছেন স্বামীর সংসারে আসার পর থেকেই। সংসার চালাতে উপার্জনের অবলম্বন হিসাবে হাজেরা বেগমের মতো আমেনা, সোলেমান, সেলিনা, রমজান, আবুল কালাম, আলেয়া, হনুফা ও নাজমা নামে আরও অনেক নারী-পুরুষ দারকি বানান। এভাবেই জীবিকার পথ বেছে নিয়েছেন কুমিল্ল­ার চান্দিনা উপজেলার কলাগাঁও গ্রামের প্রায় ২শ’ পরিবার।

বাঁশের শলার তৈরি বিশেষ ধরনের মাছ ধরার ফাঁদের নাম দারকি। অঞ্চলভেদে দারকির অন্য নামও আছে। কোথাও কোথাও দারকিকে বলে ঘুনি। আবার কোথাও বলে বাইর অথবা দিয়াইব, আন্তা। বর্ষা মৌসুমে নদী-নালা, খাল-বিলে মাছ ধরতে কম পানিতে দারকি পাতা হয়।

মাছ ধরার ফাঁদ হিসাবে দারকির ব্যবহার চলে আসছে আবহমান কাল ধরে। গ্রাম বাংলায সর্বত্র দারকি দিয়ে মাছ ধরার প্রচলন এখনও দেখা যায়। খলিশা, টাকি, পুটি, শিং ও কৈসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা হয় দারকি দিয়ে। বাঁশের শলার তৈরি দারকির উভয় দিকে উপরে-নিচে ৩টি করে ৬টি দ্বার (পথ) থাকে মাছ ঢোকার।

দ্বারগুলো এমন ফাঁদবিশিষ্ট যে মাছ একবার ওই দ্বার দিয়ে ঢুকলে আর বের হয়ে আসতে পারে না। দারকির ভেতরকার ঘেরাটোপে মাছ আটকা পড়ে যায়। মাছ ধরার দারকি গ্রামে প্রায় সবার ঘরেই পাওয়া যায়। ব্যাপক হারে চান্দিনার ক্ষুদ্র কুটিরশিল্পে স্থান করে নিয়েছে।

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের গ্রাম কলাগাঁও গ্রামের। এই গ্রামের দারকি বিশেষ এক কুটিরশিল্পে পরিণত হয়েছে। গ্রামের প্রায় পরিবার দারকির ওপর নির্ভরশীল। জীবিকার জন্য সবাই এটাকে প্রধান পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২০০ গজ দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে কলাগাঁও গ্রামে প্রায় ২০০ পবিবার রয়েছে।

কম বেশী সবাই দারকি বানিয়ে আসছেন বংশপরস্পরায়। এদের মাথা গোজার ঘরবাড়ি থাকলেও কারোরই জমি-হালের গরু নেই। অন্য কোন অবলম্বন না থাকায় তারা দারকি বানিয়ে উর্পাজনের অর্থ দিয়ে সংসার চালিয়ে আসছেন।

পুঁজি না থাকায় তারা পাইকারদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে দারকি বানাচ্ছেন। আগের দিনে বাঁশের শলা বেত দিয়ে বুনিয়ে দারকি বানানো হতো। এখন বেত তেমন পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও দাম বেশির কারণে বেতের বদলে নাইলনের সুতা ব্যবহার করা হয়।
কলাগাঁও গ্রামের আবুল কালাম জানালেন, সবাই বংশপরস্পায় জীবিকা নির্বাহ করতে দারকি বানিয়ে আসছেন। এই গ্রামের লোকদের আর কোন পেশা নেই। বছরের ৭ মাস দারকি বানান। বাকি পাঁচ মাস দিনমজুরি করেন। কেউ ভ্যানগাড়ি অথবা রিকশা চালিয়ে উপার্জন করেন।

মহিলারা বেকার সময় বসে না থেকে দারকির শলা কেটে জমিয়ে রাখেন। চৈত্র মাস থেকে দারকি বানানো শুরু হয় হয়ে কার্তিক-অগ্রহায়ণ পর্যন্ত চলে। চৈত্র মাসের দিকে পাইকার এসে দারকির জন্য আগ্রিম টাকা দিয়ে যায়। প্রতি হাজার টাকার বদলে পাইকাররা নিয়ে যায় এক কুড়ি দারকি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন