বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

প্রসাদ খাইয়ে স্কুলে শিক্ষার্থীদের হরে কৃষ্ণ হরে রাম মন্ত্র পাঠ

নজিরবিহীন ইসকনকান্ডে বিভিন্ন সংগঠন ও মহলের বিস্ময় এবং নিন্দা

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের প্রসাদ খাওয়ালো আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ-ইসকন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রা উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী ‘ফুড ফর লাইফ’ কর্মসূচির আড়ালে গত ১১ জুলাই থেকে নগরীর প্রায় ৩০টি স্কুলের শিক্ষার্থীর মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। ইসকন কর্মীদের শেখানো মতে, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ মন্ত্র পাঠ করে এ প্রসাদ গ্রহণ করে। শ্লোক-মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রসাদ গ্রহণে উৎসাহিত করায় অনেক শিক্ষার্থী তা গ্রহণে অস্বীকৃত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের নজিরবিহীন কর্মসূচিতে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘটনায় বিস্ময় ও নিন্দা প্রকাশ করে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত কৃষ্ণ কুমারী স্কুলে প্রসাদ বিতরণ করে ইসকন কর্মীরা। ওই স্কুলে তখন ৮০০ ছাত্রী উপস্থিত ছিল। শিক্ষার্থীরা জানান, ইসকনের কর্মীরা তাদের প্রসাদ গ্রহণ করার আগে মন্ত্র পাঠ করতে বলে। হিন্দু শিক্ষার্থীদের অনেকে মন্ত্র পাঠে খাবার গ্রহণ করলেও মুসলিম এবং বৌদ্ধ মেয়েদের অনেকে তাতে বিরক্তি প্রকাশ করে। অনেকে খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আহমেদ হোসেন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, রথযাত্রা উপলক্ষে ইসকনের কর্মীরা স্কুলের ছাত্রীদের মাঝে খাবার বিতরণ করেছে। শিক্ষার্থীদের অনেকে ইসকন কর্মীদের শেখানো নিয়ম অনুযায়ী এ খাবার খেয়েছে। তবে অনেকে খাবার খায়নি।

মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের মাঝেও ইসকন কর্মীরা প্রসাদ বিতরণ করেছে। তাদের অনেকে খেয়েছেও। অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী বলেন, প্রসাদ বিতরণ করা হবে বলে ইসকনের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়। তবে আমি সিটি কর্পোরেশন অথবা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে বলি। জেলা প্রশাসক তাদের মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন বলে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়। আমি তাদের লিখিত অনুমতি দেখাতে বলি। তারা তা দেখাতে পারেনি। এর পরদিন তারা স্কুলে খাবার নিয়ে আসে। তখন স্কুলে ক্লাস শুরু হয়নি। এ অবস্থায় কৃষ্ণ কুমারী স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে আমার স্কুলের কিছু শিক্ষার্থীও ওই খাবার গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রাম সরকারি হাই স্কুলেও এ ধরনের প্রসাদ বিতরণ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই স্কুলে আমার ছেলে পড়ে। সে এ খাবার গ্রহণ করেনি।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের ফুড ফর লাইফ’-এর উদ্যোগে রথযাত্রা উপলক্ষে নগরীর ৩০টিরও অধিক স্কুলে প্রায় ৩০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। শিক্ষার্থীরা এসব প্রসাদ গ্রহণ করে। কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পাথরঘাটা সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুল, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুসুমকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জে এম সেন স্কুল, কৃষ্ণ কুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাথরঘাটা মেনকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাথরঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বান্ডেল সাবিত্রী সুধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রসাদ বিতরণ হয়। প্রসাদ বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন ইসকন চট্টগ্রামের লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী ও দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দাস। কর্মসূচি পরিচালনা করেন ফুড ফর লাইফের পরিচালক পান্ডব গোবিন্দ দাস ব্রহ্মচারী, রামানন্দ দাস, প্রাণেশ্বর পরমাত্মা দাস।

চরম ধৃষ্টতা : হেফাজত মহাসচিব
স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে ইসকনের প্রসাদ বিতরণ করাকে চরম ধৃষ্টতা হিসেবে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হিন্দু স¤প্রদায়ের রথযাত্রা উপলক্ষে মুসলিম শিশুদের মাঝে কৃষ্ণ প্রসাদ বিতরণ করে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন। ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ শ্লোগান দিয়ে এ প্রসাদ বিতরণ করে মুসলিম ধর্মীয় চেতনাবোধেও মারাত্মক আঘাত করেছে। মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদার জায়গা থেকে এসব কুফরি শব্দ মুখে আনতে পারে না। তিনি বলেন, হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষ পুণ্যের ভাবনা থেকে তাদের দেবতার নামে উৎসর্গকৃত খাবারের অবশেষ এসব প্রসাদ আহার করে থাকে। এ প্রসাদ আহার করা মুসলমানদের জন্য হারাম। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবেন। তবে নিজেদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান অন্য ধর্মের কারও উপর চাপিয়ে দেয়া ধর্মীয় অধিকার ও অনুভূতিতে হস্তক্ষেপের শামিল, এটা সংবিধান পরিপন্থী।

আল্লামা বাবুনগরী আরও বলেন, ৯০ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে অবুঝ মুসলিম শিশু-কিশোরদেরকে এভাবে ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম, মাতাজি প্রসাদ কি জয়’ শ্লোগান দেয়ানো চরম ধৃষ্টতার শামিল। মুসলিম শিশুদের পবিত্র মুখে এসব কুফরি শব্দ উচ্চারণ করিয়ে কৌশলে ঈমান হরণের অপচেষ্টা চলছে। আজ তারা কোমলমতি শিশুদেরকে প্রসাদের লোভে ফেলে মন্ত্র বলিয়েছে, কাল ভারতের মতো জোরপূর্বক ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করবে না এর কী নিশ্চয়তা আছে? তিনি বলেন, এদেশে সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে এমন ঘৃণ্য কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি। মূলতঃ এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশেও ভারতের মতো সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে। ইসকন নামের যে সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে এর সদর দফতর নদীয়া জেলার পাশে মায়াপুরে। তিনি বলেন, ইসকন মূলত ঃ ইহুদী পরিচালিত একটি সংগঠন। এ উগ্র সংগঠনটি ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় উস্কানীসহ নানাভাবে উত্তেজনা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। এ সংগঠন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি তৈরি করছে। তাই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইসকনকে নিষিদ্ধ করে তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

আল্লামা বাবুনগরী হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, অনতিবিলম্বে এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সকল স্কুল কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট অনুমতিদাতাদেরকে বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি ইসকনের যারা এ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় মুলমানদের ঈমান আকিদা রক্ষার পাশাপাশি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে এসব উগ্রবাদি সংগঠনের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তৌহিদী জনতা দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।

মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত : মাওলানা আশরাফ আলী
হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী এ ধরনের ঘটনাকে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভ‚মিতে চরম আঘাত উল্লেখ করে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইসলামের পূণ্যভ‚মি চট্টগ্রামে স্কুলের মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের ‘হরে রাম’ শ্লোক পড়িয়ে প্রসাদ বিতরণের ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক। মুসলিম শিশুদের হিন্দুপ্রেমী করে গড়ে তোলার এক হীন ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি বলেন, মুসলমানদের ঈমান আকিদা ধ্বংস করতে ভারতের মতো বাংলাদেশেও হিন্দুত্ববাদের প্রসার ঘটানোর নানা চেষ্টা চলছে। এই দেশের সুন্দর সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতিকে বিনষ্ট করে আগ্রাসী শক্তিকে ঢোকার অজুহাত তৈরির চক্রান্ত চলছে। আমরা মনে করি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা সেই কর্মসূচির অংশ। ইসকন হিন্দুদের কোন সংগঠন নয়, হিন্দুবেশধারী ইহুদীদের একটি সংগঠন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উস্কানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Jomadder Mizan ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
এহেন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই এবং আয়োজোকদের উসকানী মূলক কাজের জন্য আইনের আওতায় আনা দরকার। নচেৎ উত্তেজনা বাড়তে পারে
Total Reply(0)
Mohammad Harunur Rashid ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
ওদেরকে নিষিদ্ধ করা হউক
Total Reply(0)
MD Nasir ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
এটা একটি জঘন্যতম অপরাধ জোর করে ধর্ম প্রচার করা এদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠিনভাবে শাস্তি প্রদান করা হোক
Total Reply(0)
Hossain Imran ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
Total Reply(0)
Morshed Alam ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
উগ্রবাদী হিন্দুদের উস্কানিমূলক কর্মকান্ডের জন্য তাদেরকে বিচারের ব্যবস্থা করতেহবে,বাংলাদেশ সকল জাতির দেশ, এমনই উস্কানিমূলক কাজের জন্য তাদের বিচারের আওতায় আনা না হলে,এরা আরো বাড়তে থাকবে।
Total Reply(0)
MD Motasem Billah ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
তাদের গ্রেপ্তার করা হোক।
Total Reply(0)
Saiful Islam ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 1
আগেও বলেছি, এখনো বলছি,,, দোষ আমাদেরই। আমাকে একজন কিছু দিলো আর আমি সেটা নিয়ে নিলাম,,,,? এরপর আমাকে কিছু বলতে বলা হলো অমনি আমি বলে ফেললাম ? আগে নিজেকে বদলাতে হবে।
Total Reply(0)
Polash Bulbul ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
এটা বাংলাদেশ না ভারত? এতদিন এগুলা ভারতে হচ্ছে শুনতাম, এখন বাংলাদেশে শুনতে হচ্ছে!
Total Reply(0)
আরিফ ১৮ জুলাই, ২০১৯, ৫:৫৪ এএম says : 0
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, নারায়ে তাকবীর শ্লোগান তোলো হে মুসলিম। কুফর নিপাত যাবেই যাবে।
Total Reply(0)
আরিফ ১৮ জুলাই, ২০১৯, ৫:৫৫ এএম says : 0
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, নারায়ে তাকবীর শ্লোগান তোলো হে মুসলিম। কুফর নিপাত যাবেই যাবে।
Total Reply(0)
Nannu chowhan ১৮ জুলাই, ২০১৯, ৯:৫২ এএম says : 0
92% mosolmander deshe eai ogrobadi eak srenir hindu tara kar modode eai rokom dhrishtota molok kaj korte shahosh pai eai shorojontrokariderke khoje bahir korar ahabban janachsi
Total Reply(0)
মহিউদ্দীন ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১১:০১ এএম says : 0
সরকারের উচিত এই মূহুর্তেই ইসকনের গলায় লাগাম দেওয়া। এই উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে অচিরেই নিষিদ্ধ করা হোক!
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন