শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

যমযমের পানিতে আল্লাহর অলৌকিক নিদর্শন

ফিরোজ আহমাদ | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৯, ৮:৪১ পিএম

আল্লাহর কুদরতের কোনো সীমা পরিসীমা নেই। তিনি যেমন অসীম ও অনন্ত, তাঁর নিদর্শনাবলীর শেষ বলতে কিছু নেই। আল্লাহর কুদরতের বিষ্ময়কর নিদর্শন হলো যমযমের পানি। পৃথিবীর জমিনের সর্বোৎকৃষ্ট পানি হলো যমযমের পানি। এ পানি যেমন পবিত্র, তেমনি বরকতময় ও সুস্বাদু। যমযমের পানি খাওয়ার স্বাদ কখনো মিটে না। যমযমের পানি পানে শুধু তৃষ্ণাই মিটে না; বরং ক্ষুধা নিবারণ হয়, রোগ-বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হযরত রাসূল (সা) সবসময় যমযমের পানি সঙ্গে রাখতেন। তিনি নিজে যমযমের পানি পান করতে পছন্দ করতেন। রোগ বিমারের দাওয়াই হিসেবে অন্যদেরকে যমযমের পানি পান করতে বলতেন। হজরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘হযরত রাসূল (সা) যমযমের পানি পান করতেন। সফরে বের হলে যমযমের পানি সঙ্গে রাখতেন। এ পানি অসুস্থদের ওপর ছিটিয়ে দিতেন এবং তাদের পান করাতেন।’(সুনানে তিরিমিযি ও বায়হাকি)।

পবিত্র কাবা ঘর থেকে মাত্র ২১ মিটার দক্ষিণ পূর্বে যমযম ক‚পের অবস্থান। আজ থেকে প্রায় ৪০০০ বছর পূর্বে হযরত ইব্রাহিম (আ) আল্লাহর নির্দেশে নিজের স্ত্রী হাজেরা (আ) এবং শিশু পুত্র ইসমাঈল (আ) কে মক্কার ফারান পাহাড়ের পাদদেশে এক জনমানবহীন স্থানে নির্বাসন দেন। হযরত ইব্রাহিম (আ) প্রিয়তমা স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে বিরান মরুভ‚মির পাহাড়ের পাদদেশে রেখে সামান্য আহার সামগ্রী সঙ্গে দিয়ে ফেরত চলে আসেন। ঐ সময়কালে আল্লাহতায়ালা ব্যতিত বিবি হাজেরা (আ) এবং হযরত ইসমাঈল (আ) এর আশপাশে দ্বিতীয় কেউ ছিলো না। হযরত ইব্রাহিম (আ) এর রেখে যাওয়া সামান্য আহার সামগ্রী শেষ হয়ে যাওয়ার পর; কোনো একসময় হযরত ইসমাঈল (আ) পানির পিপাসায় কান্নাকাটি করতে থাকেন। বিবি হাজেরা শিশু পুত্রের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানির খোঁজে চারিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন। বিবি হাজেরা (আ) পানির খোঁজে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে সাতবার ছুটাছুটি করেছেন। কোথাও কোনো পানির সন্ধান পাননি। অবশেষে পানির খোঁজে ব্যর্থ হয়ে শিশু পুত্রের নিকট ফিরে আসেন। হঠাৎ করে বিবি হাজেরা দেখতে পান শিশু পুত্রের পায়ের গোড়ালির ঘষাতে আল্লাহর হুকুমে নীচ থেকে পানি উঠছে। এবং একটি ঝর্ণার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ঝর্ণাটি পরবর্তীতে যমযম ক‚প হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
যমযম ক‚পের পানি আল্লাহর কুদরতের এক বিষ্ময়কর নিদর্শন। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব হাজি সাহেবরা হজ করতে যান, তারা নিজেরা যমযমের পানি পান করে থাকেন এবং দেশে ফিরার পথে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য যমযমের পানি নিয়ে আসেন। আল্লাহতায়ালার তৌহিদের বিষ্ময়কর নিদর্শন এ ক‚পের পানি উত্তোলন শেষে, মাত্র ১১ মিনিটে ক‚পটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যমযম ক‚পের সৃষ্টি থেকে আজও পানির স্বাদ, গন্ধ ও গুনাগুনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যমযমের পানিতে ফু¬রাইডের পরিমান বেশি থাকায়, এ পানিতে কোন জীবানু জন্মাতে পারে না। আজ পর্যন্ত যমযমের পানিতে একটি ছত্রাক কিংবা শৈবালও জন্মায়নি। অলৌকিকভাবে যমযমের পানি পরিশোধন হয়ে যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা যমযম ক‚পের পানি রহস্যে উদঘাটনের জন্য গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোন ক‚ল -কিনারা করতে পারছেন না।
যমযমের পানি সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস এবং বর্ণনায় এসেছে, যে উদ্দেশ্যে নিয়ে যমযমের পানি পান করবে। আল্লাহতায়ালা ঐ ব্যক্তির ইচ্ছা পূরণ করে দেন। হাজী সাহেবদের অনেকে যমযমের পানি রোগ-বিমার থেকে আরোগ্য উদ্দেশ্যে পান করে থাকেন। আল্লাহতায়ালা হাজী সাহেবদের অনেকেরই শেফা দান করেছেন। তাদের ইচ্ছা পূরণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদেরকে যমযমের পানি পানের তৌফিক দান করুক। আমীন। (লেখক: ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষক)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন