শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কর্মকর্তা-দালাল সিন্ডিকেটে জিম্মি খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস

প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে দালাল চক্রের অপতৎপরতা বেড়েছে। একই সাথে কর্মরত কর্মকর্তাদের সাথে দালাল চক্রের সখ্যতার অভিযোগ রয়েছে। সেবা নিতে গেলে দালালরা উৎকোচের পথ দেখান। অন্যথায় শুরু হয় কর্মকর্তাদের খামখেয়ালীপানা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার সমন্বয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসটিতে কর্মকর্তা ও দালাল চক্রের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি সবাই। ঘুষ বাণিজ্যের এক বিশাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে সেবা প্রার্থীরা হরহামেশাই বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। কর্মব্যস্ত যেকোনো দিন গেলে দেখা মেলে, পাসপোর্ট অফিসের বিতরণ শাখায় লম্বা লাইন, বিতরণকারীদের কাজে ধীরগতি, আনসার সদস্য, এমএলএসএস ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আগতদের সাথে দেন-দরবারের দৃশ্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, প্রভাবশালী একটি দালাল চক্রটির কাছে জিম্মি পাসপোর্ট অফিস। সেই সাথে অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সেবার বিপরীতে অতিরিক্ত ২/৩ হাজার টাকা আদায় করছেন। আবার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মচারী-কর্মকর্তারাও এখন দালালের কাজ করছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন গ্রাহককে জরুরি ভিত্তিতে ৭ দিন (সর্বোচ্চ ১৫ দিন) পাসপোর্ট করতে হলে ৬ হাজার টাকা এবং সাধারণ ভিত্তিতে (সর্বোচ্চ ১ মাস) পাসপোর্ট করতে ৩ হাজার টাকার সাথে ১৫% ভ্যাটসহ ব্যাংক ড্রাফট করতে হয়। তবে দালাল চক্রের সাথে যোগাযোগ না করে ফরম জমা বা ছবি তোলার লাইনে দাঁড়ালে বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয়।
ডুমুরিয়া উপজেলার মিটসিমিলের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সেবা নিতে আসলে বিতরণ শাখায় কর্মরত এমএলএসএস শিহাব উদ্দিন অতিরিক্ত ১৫০০ টাকার বিনিময়ে দ্রুত পাসপোর্ট করে দেওয়ার কথা বলেছেন।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, বর্তমানে দালাল ছাড়া কোনো পাসপোর্ট করতে গেলে ফরম পূরণ ভুল, এটা নেই, ওটা নেই, সকল কাগজের মূল কপি দেখাতে হবে এমন নানা অজুহাতে হয়রানির শিকার হতে হয়। তথ্য চাইলে, দায়িত্বরতরা জানায়, ১০ দিনে সাড়ে ৯ হাজার ও ৩০ দিনে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় সহজে পাসপোর্ট করিয়ে দেওয়া যাবে বলে জানান।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের এক শিক্ষার্থী জানান, জরুরি ফি ব্যাংক ড্রাফট করে ১৩ জানুয়ারি ফরম জমা দিলে উচ্চমান সহকারী নুরুল হুদা ছবি তুলতে ১৮ জানুয়ারি আসতে বলেন। ধার্য্যকৃত দিনে আসলে তিনি ফরম খুঁজে পাচ্ছে না, হাতের কাজ শেষ করে দেখছিসহ নানা অজুহাতে ঘুরাচ্ছেন। নাহিদ আক্তার খান নামের এক শিক্ষার্থী জানান, গত ১৭ জানুয়ারি ফরম জমা দিলে স্টুডেন্ট আইডি ও সংযুক্ত সত্যায়িত কপির মূলটি নিয়ে আসতে বলেন। এখন তিনি এই সত্যায়িত চলবে নাসহ নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন।
এছাড়া সেবা প্রত্যাশী সেজে আনসার সদস্য হান্নানের কাছে তথ্য চাইলে, নিজ মোবাইল নম্বর দিয়ে ০১৭২৯৮২৬৫৪১ বলেন, একদিনে ছবি তোলায় খরচ-খরচার ঝামেলা আছে। অতিরিক্ত এক হাজার টাকা দিলে হবে এমন প্রশ্নে জানান, এক হাজার টাকাতো অফিসারকেই দেওয়া লাগবে। আমার কিছু থাকবে না। দেড় হাজার টাকা নিয়ে আসেন। অন্যরা দু/তিন হাজার টাকার নিচে দিনের দিনে ছবি তুলে দিবেন না বলে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বিগত দিনের মতো এখন দালালদের উপদ্রব নেই। কর্মরতরাই দালালের কাজ করছে এমন অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি। সেবা প্রত্যাশীদের অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে দ্রুত পাসপোর্ট করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবনার অভিযোগ ভুক্তভোগীরা লিখিত দিলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। জনভোগান্তি লাঘবে আগামীতে আরও সেবামুখী কার্যক্রম হাতে নেওয়া বলে জানান। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাসপোর্ট নিয়ে সাধারণ মানুষকে যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন