বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

গ্রেট আলীর ইতিহাসে উপেক্ষিত শহীদ জিয়া

প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : মুষ্টিযুদ্ধ খেলা আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের কাছে তেমন পরিচিত নয়। দেশের কিশোর-তরুণরা টিভিতে মুষ্টিযুদ্ধ খেলা দেখলেও গ্রামগঞ্জে এ খেলার প্রচলন প্রায় নেই বললেই চলে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না এ খেলায়। কিন্তু ৩৮ বছর আগে বাংলাদেশ সফর করা বিশ শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রীড়ানায়ক বিশ্ববিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ক্লে’র নাম সবাই জানেন, প্রায় সবাই তাকে চেনেন। কিংবদন্তি এই মুষ্টিযোদ্ধার মৃত্যুতে সারা পৃথিবীর মানুষের মতো বাংলাদেশের মানুষও শোকাহত। খ্রিস্টান থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ২২ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা গ্রেট এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে তাকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তেমন কর্মসূচি দেখা না গেলেও মিডিয়ার খবরে যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। অনেক মিডিয়ায় খবরের শিরোনাম হয়েছে। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। ১৯৭৮ সালে যারা তার সান্নিধ্য পেয়েছিলেন তারা স্মৃতিচারণ করছেন। মোহাম্মদ আলী ক্লে’র বাংলাদেশ সফরের আয়োজন এবং তার নাগরিকত্ব দেয়া যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সে সময়ের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউর রহমান। যে জিয়াউর রহমান তাকে নিয়ে আসেন, তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেন, রাজকীয় সংবর্ধনা দেন, দেশের অধিকাংশ মিডিয়ার খবরে তার নাম (জিয়াউর রহমান) সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়। যেন জিয়ার নাম মোহাম্মদ আলীর বাংলাদেশ সফরের উদ্যোক্তার ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা। আবার যারা তার নাম উল্লেখ করেছেন, তারা অতি কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। জিয়ার নাম অদৃশ্য করে দিলেই কি ইতিহাস পাল্টানো যাবে? প্রশ্ন হলো গণমাধ্যমের কেন এই আত্মপ্রবঞ্চনা? মোহাম্মদ আলী ক্লে’র বাংলাদেশ সফরে জিয়ার ভূমিকার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরলে কি কেউ অখুশি হবে? নাকি সেলফ সেন্সরশিপের নামে জিয়ার প্রশংসনীয় ভূমিকা উপেক্ষা করা?
গ্রেট মোহাম্মদ আলী ’৬৫ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তার বক্সিং লাইসেন্স ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব কেড়ে নেয় মার্কিন সরকার। তাকে পাঁচ বছর কারাদ- প্রদান করা হয়। সেই মহাবীরকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়ে সফল হন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলাদেশ সফরে আসেন স্ত্রী ভেরোনিকা, মেয়ে লায়লা আলী ও বাবা-মাকে নিয়ে। সেদিন মানুষের ঢল নেমেছিল তেজগাঁও বিমানবন্দরে। ঢাকা মেতেছিল উৎসবে। ৬ দিনে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের নদীতে, পাহাড়ে, সুন্দরবনে, চা-বাগানে আর কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজারে ছাত্রলীগের এক নেতা তাকে জমিও দেন। তিনি রাজা তিনি ছিলেন না, ছিলেন না রাষ্ট্রনায়কও। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ মোহাম্মদ আলীকে রাজকীয় সম্বর্ধনা দেয়। বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেন এবং পাসপোর্ট হস্তান্তর করেন। জিয়াউর রহমান বিশ্বখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে যেভাবে সম্মানিত করেন তাতে আবেগআপ্লুত হন মোহাম্মদ আলী। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, ‘যদি আমেরিকা আমাকে তাড়িয়ে দেয়, তাহলে বাংলাদেশ রইল আমার জন্য। তুমি যদি স্বর্গে যেতে চাও, তবে বাংলাদেশে এসো।’
মোহাম্মদ আলী ক্লে শুধু শত বছরের সেরা মুষ্টিযোদ্ধাই নয়, সেবা মানবতাবাদী। তিনি যুদ্ধে না যাওয়া, সাদাকালো, ধনী-গরিব ইত্যাদি ইস্যুতে তীব্র প্রতিবাদী ছিলেন এবং রাষ্ট্রনায়ক না হয়েও রাষ্ট্রনায়কোচিত সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। সেই বীরকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন শহীদ জিয়া। জিয়াউর রহমান বাক্তিগতভাবে যে আদর্শ, নীতিনৈতিকতা লালন করুক, বা যে আদর্শের বিশ্বাসী হিসেবে দল প্রতিষ্ঠা করুক, সেটা ভিন্ন বিষয়। জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র বা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সবার পছন্দ হবে, এমন নয়। মতভেদ থাকতে পারে, মত-পথে ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু তিনি যে মোহাম্মদ আলী ক্লে’কে বাংলাদেশে এনেছিলেন এটা সত্য। তিনি তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার হাতে তুলে দেন আনুষ্ঠানিকভাবে, সেটা ইতিহাস। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিয়া উদ্যোগ নিয়ে গ্রেট আলীকে বাংলাদেশে এনেছিলেন বলেই তার (মোহাম্মদ আলী) সান্নিধ্যে যেতে পেরেছেন আমাদের দেশের ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, খেলোয়াড়, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ অনেকেই। কিন্তু মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে লেখালেখির মহাযজ্ঞ ও তোলপাড় হলেও জিয়াউর রহমানের নাম অদৃশ্য করে রাখা হচ্ছে। কি পত্রপত্রিকার খবরে, কি টিভির খবরে, কি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের স্মৃতিচারণেÑসর্বত্রই একই দৈন্য। সরকারের তল্পিবাহক মিডিয়াগুলোর অধিকাংশই ‘তখন জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট ছিলেন’, ‘জিয়ার উপস্থিতিতে নাগরিকত্ব দেয়া হয়’ ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার করেন। আবার ইলেট্রনিক মিডিয়ায় ফুটেজ বাছাইয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হয় যাতে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে জিয়ার ছবি দেখা না যায়। অধিকাংশ প্রিন্ট মিডিয়াও একই কৌশল অবলম্ব করেছে। প্রশ্ন হলো মিডিয়ার কেন এই দৈন্য? যতই অদৃশ্য করে রাখা হোক না কেন মোহাম্মদ আলী ক্লেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে এনেছিলেন এ ইতিহাস কি পাল্টে দেয়া যাবে? আর পাল্টানোর চেষ্টা হলেও সেটা কি ইতিহাস থাকবে?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন