শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশভাগের পর সংখ্যালঘু জনসংখ্যা কখনোই দেড় কোটি ছাড়ায়নি

বাংলাদেশ বিষয়ে বিবিসির বিশ্লেষণ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:৪০ এএম

গত সপ্তাহে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের নেত্রী প্রিয়া সাহা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেদেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে যেসব বক্তব্য তুলে ধরেছেন, তা নিয়ে বাংলাদেশে এখনো আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বিশেষ করে প্রিয়া সাহা ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিখোঁজের যে তথ্য দিয়েছেন তা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, রাজনীতিক এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যেও নানারকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের সংখ্যাগত চিত্রটা আসলে কেমন? আর প্রিয়া সাহার বক্তব্য কতটা বাস্তবসম্মত? এ বিষয়ে গতকাল বিবিসি বাংলা অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে একটি বিশ্লেষণ। বিবিসির পক্ষে তাফসীর বাবু বিশ্লেষণটি করেন।
এতে বলা হয়, ব্রিটিশ আমলের পূর্ববঙ্গ, পাকিস্তান আমলের পূর্ব পাকিস্তান আর বর্তমান বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে জনসংখ্যার একটা হিসাব পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়ে হওয়া আদমশুমারিতে। এসব তথ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে রক্ষিত আছে।
সেখানে আদমশুমারির তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ’৪৭ এর ভারত ভাগের পর থেকে এ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আর এখনকার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের জনসংখ্যা কখনোই দেড় কোটি ছাড়ায়নি। ১৯৫১ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায়, সেসময় পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিলো ৯৭ লাখ ৬ হাজার। ১৯৬১ সালের আদমশুমারিতে এ সংখ্যা ৯৯ লাখ ৫০ হাজার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে এ সংখ্যা হয় ১ কোটি চার লাখ ৩৯ হাজার। আর সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে এই সংখ্যা ১ কোটি ৩৮ লাখ। অর্থাৎ এই ভ‚খন্ডে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কখনোই ৩ কোটি ৭০ লাখ বা এর অর্ধেকও ছিলো না।
নিখোঁজ নিয়ে প্রিয়া সাহার ব্যাখ্যা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, রোববার রাতে ইউটিউবে আপলোড করা এক ভিডিওতে অবশ্য সে বিষয়ে নিজের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন প্রিয়া সাহা। তাতে ৩ কোটি ৭০ লাখ ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিখোঁজ হওয়ার পরিসংখ্যানের ব্যাখ্যা দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের পরিসংখ্যানে সংখ্যালঘুদের উপর একটা চ্যাপ্টার রয়েছে। সেনসাস (আদমশুমারি) অনুসারে দেশভাগের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের সংখ্যা ছিলো মোট জনসংখ্যার ২৯.৭ শতাংশ। এখন তা কমে ৯.৭ শতাংশ।’
প্রিয়া সাহা বলছেন, ‘সংখ্যালঘুদের শতকরা ভাগ যদি এখনো একই রকম থাকতো তাহলে বর্তমানে তাদের সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখের বেশি হতো। সেটাই আমি বলতে চেয়েছি।’
তাহলে নিখোঁজ মানুষগুলো কোথায় গেছে? এমন প্রশ্নের অবশ্য সুনির্দিষ্ট কোন উত্তর দেননি প্রিয়া সাহা।
সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের সংখ্যা কি কমেছে?
আদমশুমারিতে অবশ্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে যাওয়ার কোন তথ্য পাওয়া যায় না। ভারত-ভাগের পর ১৯৫১ সালে ৯৭ লাখ ৬ হাজার থেকে ২০১১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৩৮ লাখে। কিন্তু মোট জনসংখ্যায় সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের আনুপাতিক হার অবশ্য কমেছে। তবে এই কমে যাওয়ার পরিসংখ্যান শুধু পাকিস্তান আমলে কিংবা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরই যে দেখা যাচ্ছে তেমন নয়। বরং ব্রিটিশ আমলেও এই অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের আনুপাতিক হার কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। সেসময় শুমারিতে অবশ্য মূলতঃ হিন্দুদের সংখ্যাই দেয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের পরিসংখ্যান
১৯১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সেসময় পূর্ব বাংলায় হিন্দু জনগোষ্ঠীর আনুপাতিক হার ছিলো ৩১ শতাংশ। ১৯৪১ সালে ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ ২০ বছরে হিন্দু জনগোষ্ঠীর আনুপাতিক হার কমেছে ৩ শতাংশ। তবে এরপরই হিন্দু জনগোষ্ঠীর আনুপাতিক হার দ্রæত গতিতে আরো কমতে থাকে। ১৯৪১ থেকে ১৯৭৪ এই ৩৩ বছরে হিন্দু জনগোষ্ঠীর আনুপাতিক হার কমে যায় প্রায় ১৫ শতাংশ। ১৯৪৭ এর ভারত-ভাগ, সা¤প্রদায়িক দাঙ্গাসহ বিভিন্ন কারণে সেসময় অবশ্য পূর্ব বাংলা থেকে হিন্দু জনগোষ্ঠীর অনেকেই ভারতে চলে গিয়েছিলেন। একইভাবে ভারত থেকেও অনেক মুসলমান পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন। আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও অনেক হিন্দু দেশান্তরি হয়েছিলেন।
স্বাধীনতার পরের চিত্র
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মোট জনসংখ্যায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর কমে যাওয়ার হারে আবারো ধীরগতি দেখা যায়। ১৯৭৪ সালের প্রথম আদমশুমারিতে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার ছিলো ১৪.৬ শতাংশ। ২০১১ সালে সেটি কমে আসে ৯.৬ শতাংশে। অর্থাৎ বাংলাদেশ আমলে ৩৭ বছরে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার কমেছে ৫ শতাংশ।
আদমশুমারিতে অবশ্য সবসময়ই মুসলিম জনগোষ্ঠীর মোট সংখ্যা এবং আনুপাতিক হার দুটোই বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ আমলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার ৫ শতাংশ কমে যাওয়া কতটা অস্বাভাবিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারপার্সন মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম অবশ্য একে অস্বাভাবিক মনে করেন না। তিনি বলছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের হার কমলেও আকার কিন্তু কমছে না, বরং বাড়ছে। কিন্তু আনুপাতিক হার কেন কমছে এমন প্রশ্নে তিনি বলছেন, ‘সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যদি মুসলিম স¤প্রদায়ের তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে মুসলিম স¤প্রদায়ের মধ্যে জন্মহার কিংবা সন্তান বেশি নেবার প্রবণতা বেশি। এটা বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক গবেষণাতেও দেখা গেছে যে, মুসলমানদের মধ্যে জন্মহার বেশি। বাংলাদেশেও আমরা ছোট আকারে বিভিন্ন গবেষণায় এটা দেখেছি।’
তিনি বলছেন, একদিকে মুসলিম জনসংখ্যা অনেক বেশি। অন্যদিকে তাদের মধ্যে জন্মহারও বেশি। ফলে তাদের আকার যেমন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি মোট জনসংখ্যায় আনুপাতিক হারেও এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের আকার বাড়লেও আনুপাতিক হার কমছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Sumaia Athy ২৩ জুলাই, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
Thanks to BBC bangla for sharing this informative news
Total Reply(0)
Kisir Misir ২৩ জুলাই, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 0
অনুসন্ধিৎসু ও তথ্যবহুল প্রতিবেদন। বুঝাই যাচ্ছে অনেক খাটাখাটুনি করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। ক্রনোলজিক্যাল ভাবে সংখ্যালঘুদের সংখ্যার পরিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে সেটি সবার কাছে পরিস্কার ধারণা তৈরী করবে। যাইহোক বিবিসি বাংলা তার অনলাইন সার্ভিসকে গুরুত্ব দিবে এই আশা সব সময়ই করি।
Total Reply(0)
Mahmud Hasan Saddam ২৩ জুলাই, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 0
অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী,তাই হয়েছে প্রিয়া সাহার অবস্থা,ধন্যবাদ বিবিসি সুন্দর তথ্যবহুল অালোচনার জন্য,প্রিয়া সাহা যে তথ্য দিয়েছেন তা ভুল প্রথমে উচিত তার ক্ষমা চাওয়া,তিনি যদি বুঝাতে চান সংখ্যালঘুর অানুপাতিক হার তাহলে শব্দ টা মিসিং কেন ব্যবহার করলেন,বিবিসি যে তথ্য দিয়েছেন তাতে স্পষ্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে সনাতন বা সংখ্যালঘু কখনো 3 কোটি হয়নি,47 থেকে অাজ পর্যন্ত,তাহলে 3 কোটি কিভাবে মিসিং হলো,প্রিয়া সাহা যদি শব্দটি মিসিং না বলে রিডিউস (কমা) বলতেন তাও মানা যেত কিন্তু মিসিং( গুম বা হারিয়ে গেছে)এটা মেনে নেয়া যায় না
Total Reply(0)
Ali Akbar ২৩ জুলাই, ২০১৯, ২:০৭ এএম says : 0
বাংলাদেশ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এই দেশে মহারাজার হালে আছে । তারা যেই পরিমানে সূযোগ সুবিধা পায় , সেই হিসাবে মুসলমানদের নগন্য । তাদের জন্য বড় বড় স্কুল ও কলেজে ভর্তির সুবিধা । চাকুরীর বাজার তো তাঁরাই শীর্ষে । এনজিও সহ বিদেশী অনেক সুবিধা । এবার বলুন মুসলমান কি পাচ্ছে ?
Total Reply(0)
Abdul Quayyum ২৩ জুলাই, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
বিষয় তো সেটা না । হিন্দু বাড়ল বা কমল কিনা । মূল বিষয় হল হিন্দু ভাইয়েরা কেউ কেউ নিজের এক সম্পত্তি কয়েক বার ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির নিকট বিক্রি করে মামলা মোকদ্দমা সৃস্টি করে টাকা গুলি ভারতে ইনভেস্ট করে । যেমন দোকান পাট জায়গা জমি খরিদ করে । চার ভাই হলে দুই ভাই পরিবার পরিজন নিয়ে ইন্ডিয়াতে বসবাস শুরু করে । বাংলা দেশে যারা থাকে তাঁরা ব্যবসা বাণিজ্য করে টাকা ইন্ডিয়াতে ইনভেস্ট করে । তাঁরা বাংলাদেশ কে কখন ও নিজের দেশ মনে করে না । আমার হাতে অনেক উদাহরণ আছে । এ ছাড়া মাননীয় প্রধান মন্ত্রী হিন্দু ভাইদের উদ্দেশে সাবধান করে দিয়ে একবার বলেছেন , আপনারা দুই নৌকাতে পা দিবেন না ।
Total Reply(0)
Tajran Chowdhury Bijoy ২৩ জুলাই, ২০১৯, ২:০৮ এএম says : 0
খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। এখানে আমি কিছু বলতে চাই।আমাদের দেশের হিন্দু নেতৃবৃন্দ আবুল বারাকাত সাহেবের রিপোর্টকেই খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। যে রিপোর্টটি উনি মাতাল অবস্হায় করেছেন বলেই আমার বিশ্বাস।যে রিপোর্টে উনি দেখিয়েছেন একসময় এদেশে সংখ্যালগু ছিলো ৩০%, দেশছাড়া হতে হতে এখন তা দাড়িয়েছে ৭-৮% এ, ২০৩০ সাল নাগাদ যা শুন্যের কোটায় দাড়াবে। যা সম্পূর্ন পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।এখন আমাদের হিন্দু ভাইদের মনমানসিকতা এমন হয়েছে যে, ভালো চাকুরী পেয়ে কেউ যদি ভারতে পাড়ি জমায় সেটাও তারা মুসলমানদের অত্যাচারে দেশ ছেড়েছে বলে প্রচার করা শুরু করে।এধরনের ভুরি ভুরি প্রমান আমার হাতে আছে।
Total Reply(0)
Md Arfatur Rhaman Anan ২৩ জুলাই, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
বর্তমানে সংখ্যালগুরা সব দিক দিয়ে এগিয়ে, সরকার এখন তাদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে, যেখানে ভারতে সংখ্যালগুদের সরকারি কর্মসংস্থান ১১% সেখানে বাংলাদেশে ৩০%, এবার চিন্তা করে দেখুন সরকারি প্রতিটা পদ তারা দখল করে আছে,
Total Reply(0)
Sheikh Muminullah ২৩ জুলাই, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
আশা করি প্রিয়া সাহা নিজের বাড়িঘর পোড়ানো এবং জমি দখলের যে মিথ্যাচার করেছে সে ব্যাপারেও বিবিসি একটা প্রতিবেদন করবে ৷
Total Reply(0)
Nannu chowhan ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১০:২০ এএম says : 0
Bbc ke dhonnobad,Adom shomarir eai shotto tothota prokash kore je pria shahar mittha banowat tottho president trampke nalish dia je,Bangladesher shoonam khunno korese er jonno take bicharer aowtai ana uchit ar ta na hole voboshshote aro onekei eai dhoroner mittha banowat desh birodhi propaganda chalate didhabodh korbena....
Total Reply(0)
kkio ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:৪৯ পিএম says : 0
Madam, decline of Hindu population is a global phenomenon. Since mankind is a tribal animal any group of people can never be happy or feel home in a minority status. This is how our gene works and it is a proven theory. Besides, Hinduism does not give the minimum spiritual strength to Hindus to endure the natural difficulties of being minority. If you don't believe this compare the suicide rate in India and Yamen. So Hindus need the majoritarian status to gain the spiritual strength they need to combat difficulties in life. This is why they migrate to India from Bangladesh. Regarding Islam, it can support muslim to function perfectly in any hell one can imagine let alone India.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন