ই-হজ সিস্টেমে রিয়াদ ব্যাংকে গত ৮ দিনেও হজের টাকা পৌঁছেনি। ব্যাংক এশিয়া প্রিন্সিপাল শাখার মাধ্যমে গত ১৭ জুলাই কয়েকটি বেসরকারি হজ এজেন্সি আইবিএএন-এ হজ ভিসাসহ যাবতীয় খরচের টাকা সউদী রিয়াদ ব্যাংকে পাঠায়। গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত সউদী রিয়াদ ব্যাংক হজযাত্রীদের টাকা ছাড় করেনি। ফলে এজেন্সিগুলোর প্রায় দুইশ’ হজযাত্রীর হজ ভিসা ইস্যু হচ্ছে না। আজ বৃহস্পতিবার সাউদিয়া এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইট (এসভি-৮০৩ এবং এসভি-৩৮১১) যোগে এসব হজযাত্রীর হজে যাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগী একাধিক হজ এজেন্সির মালিক এ তথ্য জানিয়েছেন।
যথাসময়ে হজ ভিসা হাতে না পাওয়ায় এসব অপেক্ষমাণ হজযাত্রী আশকোনাস্থ হজ ক্যাম্পে ও ঢাকার আত্মীয়স্বজনের বাসা-বাড়িতে চরম হতাশায় ভুগছেন। হজ এজেন্সির মালিকরা ব্যাংক এশিয়ার দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়েও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না। আজ ভোর পর্যন্ত বিমান ও সাউদিয়ার হজ ফ্লাইট যোগে ৮২ হাজার ৬৭০ জন হজযাত্রী সউদী পৌঁছেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হজ এজেন্সি এম এ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ক্বারী গোলাম মোস্তফা গত ১৭ জুলাই ৫০ জন হজযাত্রীর হজের খরচ বাবদ ব্যাংক এশিয়া প্রিন্সিপাল শাখার মাধ্যমে আইবিএএন-এ রিয়াদ ব্যাংকে ৮০ হাজার রিয়াল পাঠায়। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সউদী রিয়াদ ব্যাংক এসব হজযাত্রীর ৮০ হাজার রিয়াল ছাড় দেয়নি। ফলে হজযাত্রীদের হজ ভিসা গতকালও ইস্যু হয়নি। এতে আজ এসব হজযাত্রীর হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ক্বারী গোলাম মোস্তফা ইনকিলাবকে বলেন, ব্যাংক এশিয়া প্রিন্সিপাল শাখার চরম উদাসীনতার দরুন হজযাত্রীদের হজের টাকা জমা দেয়ার আট দিন পরও ট্রান্সফার হয়নি। ফলে হজ ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না। এসব হজযাত্রীকে হজে পাঠানোর বিষয়টি অনিশ্চয়তার দিকে গড়াচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গত ১৭ জুলাই বিসমিল্লাহ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান ১৯১ হজযাত্রীর হজের খরচের অর্থ মিরপুর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রিয়াদ ব্যাংকে সউদীতে পাঠায়। পাঁচ দিন পর ২২ জুলাই দুপুরে রিয়াদ ব্যাংকে হজযাত্রীদের টাকা ট্রান্সফার হয়। এসব হজযাত্রীর হজ ভিসা যথাসময়ে ইস্যু না হওয়ায় চরম হতাশায় ভোগেন যাত্রীরা। তড়িঘড়ি হজ ভিসা ইস্যু হওয়ায় ঐদিন দিবাগত রাত ৩টায় সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইটে এসব হজযাত্রীরা হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আল্লাহ পাকের রহমতে এসব হজযাত্রী ঐ দিন রাতে হজে যেতে না পারলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতো এজেন্সিকে। গতকাল রাত পর্যন্ত আরো ২০ জন হজযাত্রীর হজ ভিসা এখনো ইস্যু হয়নি। এসব হজযাত্রীর আগামী ৩০ জুলাই সউদী আরবে যাওয়ার কথা রয়েছে। হজ এজেন্সির মালিক মিজানুর রহমান বলেন, সউদী রিয়াদ ব্যাংকের চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার দরুন হজযাত্রীদের হজের টাকা ট্রান্সফার হতে পাঁচ দিন লাগছে।
এ ছাড়া, জিলানী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী কাজী আব্দুল কাদের জিলানী গত ২১ জুলাই ব্যাংক এশিয়া ১০০ জন হজযাত্রীর ১ লাখ ৬৫ হাজার রিয়াল ব্যাংক এশিয়া প্রিন্সিপাল শাখার মাধ্যমে আইবিএএন-এর মাধ্যমে সউদী রিয়াদ ব্যাংকে পাঠায়। গতকাল দুপুর পর্যন্ত এসব হজযাত্রীদের হজের টাকা ট্রান্সফার হয়নি। ফলে এসব হজযাত্রীর হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ব্যাংক এশিয়ার আন্তর্জাতিক বিভাগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জিয়া আরেফিন বিকেলে ইনকিলাবকে বলেন, আইবিএএন-এ হজের টাকা ট্রান্সফার হতে ব্যাংক এশিয়ার কোনো গাফিলতি ও অবহেলা নেই। সউদী রিয়াদ ব্যাংকে দফায় দাফায় তাগিদ দেয়া হচ্ছে হজের টাকা ট্রান্সফার করতে। আইবিএএন-এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের খরচের টাকা সউদী পৌঁছতে অহেতুক বিলম্বের বিষয়টি হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমকে অবহিত করা হয়েছে। সন্ধ্যায় জিলানী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের স্বত্বাধিকারী কাজী আব্দুল কাদের জিলানী জানান, বহু দৌড়ঝাঁপ করার পড় তার এজেন্সির আইবিএএন-এ হজের টাকা ট্রান্সফার হয়েছে এবং হজ ভিসা ইস্যু শুরু হয়েছে। এ দিকে, চলতি বছর ৫৯৮টি হজ এজেন্সি হজের কার্যক্রমে অংশ নিলেও এবারই প্রথম মুনাজ্জেমরা সউদী সরকারের বারকোড (স্টিকার) পায়নি। ফলে প্রত্যেক হজ এজেন্সির মুনাজ্জেমকে এবার হজ ভিসায় তিন-চার লাখ টাকা ব্যয় করে হাজীদের সেবা দিতে সউদী যেতে হচ্ছে। একাধিক হজ এজেন্সির মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরেই প্রত্যেক হজ এজেন্সির মুনাজ্জেমরা সউদী সরকারের বারকোড লাভের মাধ্যমে হজে গিয়ে হাজীদের নির্বিঘেœ সেবা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার মুনাজ্জেমদের তিন-চার লাখ টাকা ব্যয় করে হজে যেতে হচ্ছে। এতে হজ এজেন্সিগুলো মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। হাবের একজন সাবেক শীর্ষ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবারই প্রথম মুনাজ্জেমরা সউদী বারকোড থেকে বঞ্চিত হলেন। তার মতে, একজন হজযাত্রীর হজে যেতে যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে; মুনাজ্জেমকেও একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে হজে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন