পৃথিবীর কোথাও কোন মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হলে এবং বিপদগ্রস্থ হলে মানুষ হিসেবে তার বিপদে এগিয়ে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। কারো কষ্ট, বেদনা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সত্যিকার মানুষ কখনো নির্বিকার থাকতে পারে না। ইমানেরও দাবী হচ্ছে, সুখে-দু:খে এক মুমিন অপর মুমীনের পাশে থাকবে। তাদের কষ্ট লাঘবে সদা তৎপর থাকবে। রসুল (সা.) সকল মুসলমানকে একটা দেহের সাথে তুলনা করে বলেছেন, ‘পারস্পারিক ভালোবাসা, দয়া-মায়া ও স্নেহ-মমতার দিক থেকে গোটা মুসলিম সমাজ একটি দেহের সমতুল্য। যদি দেহের কোন বিশেষ অঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও তা অনুভ‚ত হয়; সেটা জাগ্রত অবস্থায় হোক কিংবা জ্বরাক্রান্ত অবস্থায়।’ (মুসলিম : ৬৭৫১ )।
একজন মুসলমানের পরিচয় দিতে গিয়ে রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুসলমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার মুখ ও হাতের ক্ষতি থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি : ১০)। মানুষের প্রতি দরদ ও ভালবাসা হচ্ছে ঈমানের মাপকাঠি। রসুল (সা.) এর ইরশাদ, ঈমান ছাড়া তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা, পর¯পরকে ভালবাসা ছাড়া তোমরা মোমেন হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের কথা বলে দিব না, যাতে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হবে? পর¯পরকে সালাম দিবে। (মুসলিম : ২০৩)। ঘৃণা ছড়ানো বা মানুষকে উত্যক্ত করা মোমিনের কাজ নয়। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তি ইমানদার নয়, আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তি ইমানদার নয়, আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তি ইমানদার নয়।’ সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ, তারা করা? তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তির অনিষ্টতা থেকে প্রতিবেশী নিরাপদ নয়, সেই ব্যক্তি ইমানদার নয়।’ (বুখারি : ৫৬৭০)।
গোটা সৃষ্টিকূল একটি পরিবারের মত। রসুল (সা.) এর ইরশাদ, ‘গোটা সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। অতএব আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় সেই ব্যাক্তি যে তাঁর সৃষ্টির প্রতি উত্তম আচরণ করে।’ (শুআবুল ঈমান : ৭০৪৮)। যেহুত গোটা সৃষ্টিকূল একটি পরিবারের মত তাই সৃষ্টি জীবের সাথে ব্যবহার হবে পরিবারের সদস্যদের মত ও আত্মীয় স্বজনের মত। আবার সমস্ত মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক হচ্ছে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। কারণ সকল মানুষের পিতা একজন, ¯্রষ্টাও একজন। আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ, হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। (সুরা নিসা : ১)। হাদিসের মধ্যে বলা হয়েছে, ‘হে মানুষ! নিশ্চয় তোমাদের প্রভু একজন। তোমাদের বাবা একজন। তোমরা সবাই আদম-সন্তান। সাবধান! আরবের উপর কোন অনারবের শ্রেষ্টত্ব নেই এবং কোন অনারবের উপর আরবেরও শ্রেষ্টত্ব নেই। কোন কালোর উপর লাল তথা সুদর্শন ব্যক্তির শ্রেষ্টত্ব নেই, শ্রেষ্ঠত্ব নেই সুদর্শনের উপর কোন কালোর। শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করা যাবে কেবল তাকওয়া তথা আল্লাহ-ভীতির মাধ্যমে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২৩৪৮৯)।
সৃষ্টিক‚লের প্রতি ভালবাসা ও দয়া প্রদর্শন করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। সৃষ্টি জগতের প্রতি দয়া প্রদর্শন করলে অল্লাহ তায়ালার বিশেষ দয়া লাভ করা যায়। রসুল (সা.) এর ইরশাদ, ‘তোমরা জমিন বাসির প্রতি দয়া কর, তাহলে আসমানওয়ালা (আল্লাহ) তোমাদের প্রতি দয়া করবেন’। (তিরমিজি : ১৯২৪)। সৃষ্টিজগতের মধ্যে মানুষ আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাই মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না সে আল্লাহ তায়ালার পূর্ণ রহমত থেকে বঞ্চিত থাকে। রসুল (সা.) এর ইরশাদ, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।’ (কানযুল আমল : ৫৯৭১)। সৃষ্টির প্রতি কতটুকু অনুগ্রহ ও ভালবাসা প্রদর্শন হবে তার জবাবে আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ, ‘তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না।’ (সূরা কসাস : ৭৭)। যারা সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য-সহযোগীতা করে মানুষের কষ্ট দূর করবে আল্লাহ তাদেরকে পরকালের বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার অনেক মুসিবত দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দেবে, আল্লাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দেবেন এবং আল্লাহ সেই বান্দার সাহায্য করবেন যেই বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে।’ (মুসলিম : ৭০২৮)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন