বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেফতার প্রধান সাক্ষী নিহতের স্ত্রী মিন্নির জামিন আবেদন শুনানি আজ মঙ্গলবার জেলা জজ আদালতে হচ্ছে। বিচারিক আদালতে জামিন আবেদন খারিজের পরে গত মঙ্গলবার জেলা জজ আদালতে আবেদন করা হলে, নিম্ন আদালতের নথি তলবসহ জামিন শুনানি ৩০ জুলাই দিন ধার্য্য করেন জেলা জজ। স্থানীয় পুলিশ-এর পরিবর্তে পিবিআই’কে দিয়ে এ মামলার তদন্তের দাবিও বরগুনাবাসির।
এদিকে রিফাত হত্যাকান্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে নিহত রিফাতের স্ত্রীকে ফাঁসানের অপচেষ্টা চলছে বলে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট রিফাত হত্যাকান্ডে ‘মূল আসামিদের চেয়ে মিন্নিকে নিয়ে পুলিশ যেন অতি উৎসাহ না দেখায়’ সে ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছেন।
রিফাত হত্যাকান্ডে বাবার দায়ের করা মামলায় স্ত্রী মিন্নি এক নম্বর সাক্ষী হলেও রাজনৈতিক প্রভাবে সে ইতোমধ্যে আসামি হয়েছে বলে অভিযোগ বরগুনাবাসির। রিফাতের বাবা মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করে মামলা দায়ের করলেও রাজনৈতিক প্রভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে তাকেই দোষী সাব্যস্ত করেন তিনি। এমনকি সন্ত্রাসী ও খুনিদের বিচারের পরিবর্তে কতিপয় লোক বরগুনা শহরে মানববন্ধন করে মিন্নির ফাঁসি দাবি করেছে। রিফাতের বাবার ঐ সংবাদ সম্মেলন এবং মানববন্ধনে স্থানীয় এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ উপস্থিত থেকে মানববন্ধনে বক্তব্যও রাখেন। অথচ রিফাতের ঘাতক নয়ন বন্ডসহ অন্য সন্ত্রাসীদের লালন করার জন্য বরগুনাবাসীর অভিযোগের আঙুল ঐ সুনামের বিরুদ্ধেই।
এদিকে ম্যাজিষ্ট্রেট-এর খাস কামরায় মিন্নি জবানবন্দি দেয়ার পর তাকে আদালতে তুলে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়ে জেলে পাঠান হয় বলে অভিযোগ সুপ্রীম কোর্ট বার-এর সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন’র। তার মতে, যদি কাউকে রিমান্ডে নিয়ে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়, তাকে অবশ্যই বিচারিক আদালতে উপস্থিত করতে হবে। যেন সে বলতে পারে রিমান্ডে থাকাকালে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতন যদি করা হয়ে থাকে, তাহলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে- এটা আমাদের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা’ জানিয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, কথিত স্বীকারক্তিমূলক জবানবন্দির পরে তাকে আদালতে না নিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হল। তার আইনজীবী আবেদন করে বললেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চাই। তাকে আদালতে আনা হোক। কিন্তু তাকে আনা হল না- এভাবেই আইনের বরখেলাপ হচ্ছে’ মন্তব্য করেন খন্দকার মাহবুব।
মিন্নিকে আদালতে হাজির করার সময় তার পক্ষে কোন আইনজীবী দাঁড়াননি। মিন্নির বাবার অভিযোগ, তিনি ৩ আইনজীবীর সাথে কথা বলেছিলেন। তারা মিন্নির পক্ষে আদালতে দাঁড়াবার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তা করেননি। ফলে মিন্নিকেই আদালতে কথা বলার সুযোগ দিলে সে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ‘আমার স্বামী রিফাত শরীফ, আমি আমার স্বামী হত্যাকারিদের বিচার চাই। হত্যাকান্ডে আমি জড়িত নই। আমাকে এ মামলায় ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে’ বলে দাবি করে মিন্নি। এরপর আদালত মিন্নির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন জানান, মিন্নিকে জামিন না দেয়ায় আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিধান রয়েছে, যে কোনো অপরাধে আসামি যদি মহিলা এবং অসুস্থ হয় তাহলে আদালত তাকে জামিন দেবেন’ । ‘এক্ষেত্রে মিন্নির জামিনের আবেদন করা হল। কিন্তু আইনের সম্পূর্ণ বরখেলাপ করে রাজনৈতিক প্রভাবে অথবা একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে মামলার মূল আসামিরা যাতে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে সে কারণে তাকে জামিন দেয়া হলো না ’ বলেও অভিযোগ করেন সুপ্রীম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন