নাটোর জেলা সংবাদদাতা : নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় খ্রিস্টান ব্যবসায়ী সুনীল দানিয়েল গমেজ (৬০) কে হত্যার ২৪ ঘন্টা পরও পুলিশ কোন ক্লু বের করতে পারেনি। কারা কি উদ্দেশ্যে তাকে খুন করেছে এ ব্যাপারে সম্পুর্ণ অন্ধকারে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। তবে জঙ্গি সংগঠন আইএস দায় স্বীকার করলেও একাধিক পয়েন্ট সামনে রেখে তদন্ত কাজ চলছে বলে বলে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় রোববার রাতে অজ্ঞাত আসামিদের নামে বড়াইগ্রাম থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের একমাত্র মেয়ে স্বপ্না গমেজ বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় বলা হয়-অজ্ঞাত পরিচয়ের দুষ্কৃতিকারীরা সুনীল গমেজকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। পরে মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। রোববার রাতেই ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার সকালে লাশটি তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নাটোর সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. আবুল কালাম আযাদ ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিকদের জানান, তার ডান ঘাড়ে ভারি ও ধারালো অস্ত্রের একটি মাত্র কোপ দেয়া হয়েছে। এতে তার ঘাড় থেকে কেটে কান অবধি গিয়ে পোঁছেছে। ময়নাতদন্তে বলা হয়েছে-এ কোপের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া তার বাম হাত ও বাহুতেও কাটার চিহ্ন রয়েছে। সোমবার বিকাল ৪টায় বনপাড়া মিশন কবরস্থানে ধর্র্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন শেষে নিহতের লাশ দাফন করা হয়েছে। এ সময় রাজশাহী ধর্ম প্রদেশের চার্চ বিশপ জেভার্স রোজারিও, ফাদার পেট্রিক গমেজ, নিহতের ভাই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার খালিসা মিশনের ফাদার প্রশান্ত গমেজ, বনপাড়া প্যারিস কাউন্সিলের সভাপতি ফাদার বিকাশ হিউবার্ট রিবেরু, সহ-সভাপতি বেনেডিক্ট গমেজসহ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, এ হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে আটক ঐ বাসার ভাড়াটিয়া জেলার লালপুরের কদিমচিলান গ্রামের ট্রাক ড্রাইভার আব্দুল্লাহ আল মামুন সবুজ (৩০) কে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করেছে ডিবি পুলিশ। সুনীল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জেলা ডিবির ওসি আব্দুল হাই বলেন, এখনও বলার মত কোন কিছু পাওয়া যায়নি। তবে রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে এ ঘটনায় আটক সবুজের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে হত্যার সম্ভাব্য কারণ ও দোষীদের সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ হত্যাকা- সম্পর্কে সাংবাদিকদের সাথে এক সাক্ষাৎকারে রাজশাহী ধর্ম প্রদেশের আর্চ বিশপ ফাদার জেভার্স রোজারিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সুনীল হত্যার পর থেকে আইএসের দায় স্বীকারের যে বিষয়টি শুনছি সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে তা খুবই দুঃখজনক। কারণ ইসলামসহ কোন ধর্মই হত্যাকা-কে সমর্থন করে না। তিনি আরো বলেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি বিচারহীনতার কারণেই মসজিদের ইমাম, গীর্জার পুরোহিত, হিন্দুদের ধর্মীয় গুরু কেউই হত্যাকা- থেকে বাদ যাচ্ছে না। তিনি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। এদিকে, সুনীল গমেজ হত্যার মূল ঘটনা উদঘাটনসহ দোষীদের আটক করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সাতদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন স্থানীয় খ্রিস্টান সমাজের নেতৃবৃন্দ। অন্যথায় আগামী রোববার মিশনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে স্থানীয় সব জাতি-ধর্মের লোকজনকে সাথে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা। বিকালে নিহতের লাশ দাফন পূর্ব সমাবেশে বক্তৃতাকালে তারা এসব কথা বলেন। প্রসঙ্গত, রোববার দুপুরে ১২টার দিকে বনপাড়া মা মারিয়া মিশনের পশ্চিম পাশে নিজ বাড়ি সংলগ্ন মুদি দোকানে সুনীল গমেজকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুবর্ৃৃত্তরা। এ ঘটনায় স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মাঝে ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার ৫ ঘন্টা পর জঙ্গি সংগঠণ ইসলামিক স্টেট (আইএস) তাদের সংবাদ মাধ্যম আমাদের এ হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করলে এ আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন