শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের লুটপাট পুকুর নয়, সাগর চুরি : সংসদে অর্থমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে আর্থিক অনিয়মের কথা স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে লুটপাট পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরির মতো হয়েছে। আমাদের এখানে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যে চুরি হয়েছে সেটা ছোট চুরি নয়, যা হয়েছে অনেক বড় চুরি। গতকাল সংসদের সম্পূরক বাজেটের ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আর্থিক খাতে অনেক দোষ-ত্রুটি হয়েছে বটে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান কেটে ফেলা বা ধুয়েমুছে ফেলে দেয়ার মতো কিছু হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লুটপাট হয়েছে। ফরাজী সাহেবের সঙ্গে আমিও বলতে চাই, এগুলো পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি হয়েছে। এসময় অর্থমন্ত্রী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২৩৮ কোটি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি বরাদ্দের দাবি করেন।
রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ব্যাংক খাত থেকে টাকা চুরি হয়ে গেছে। সব ব্যাংকের একই অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকে পচন ধরেছে। ৮০০ কোটি টাকা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চুরি হলো। সব চুরির সঙ্গে ওই ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত। গত কয়েক বছরে পৌনে তিন লাখ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ৩০ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়েছে। এগুলোকে পুকুর চুরি না বলে সাগর চুরি বলা যায়।
ফরাজী তার বক্তৃতায় ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের কথা বলেন।
এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অর্থমন্ত্রী জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে বলেন, প্রজেকশন ইজ প্রজেকশন। এটা পরিবর্তন হতেই পারে। আমরা যেটা দিয়েছি আগামী তিন মাস পর আমাদেরটাই সঠিক হবে। সেটা তারা মেনে নেবে। আমাদের নিজস্ব গবেষণা আছে। আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরো অনেক দক্ষ। আমাদের তথ্য নিয়েই তারা (আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান) কাজ করে।
ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে বরাদ্দের বিরোধিতা করে এমপিরা বলেন, গত সাত বছরে শুধু ব্যাংকিং খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা হরিলুট হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮ শ’ কোটি টাকার রিজার্ভ চুরি হয়ে গেল। শোনা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তাও নাকি জড়িত। জনগণের টাকা লুট হচ্ছে, কিন্তু জড়িতদের কিছুই হচ্ছে না। ব্যাংকিং খাত যদি প্যারালাইসড হয়ে যায় তবে সর্বনাশ হবে। এ জন্য আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে সংস্কার করা দরকার। ব্যাংকিং খাতের ওপর জনগণের এখন কোনো আস্থা নেই। পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন।
সুদের হার সুনির্দিষ্ট করার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে অর্থনীতির স্বাস্থ্যকে চাঙ্গা করা, সুদের হার নির্ধারণ করা নয়। সুদের হার নির্ধারণ করে ব্যবসায়ী, ঋণ প্রদানকারী ও বিনিয়োগকারীরা।
জাতীয় পার্টির নয়, এরশাদের বাজেট দিয়েছি
জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর উত্থাপিত দাবির বিষয়ে যুক্তি দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানিয়েছেন, আমি জাতীয় পার্টির বাজেট দিয়েছি, সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি জাতীয় পার্টির কোনো বাজেট দেইনি। আমি জাতীয় পার্টির জন্মের আগে সব বাজেট দিয়েছি। এটা আপনারা ভালো করে মনে রাখবেন। আমি কোনো দিন জাতীয় পার্টির কোনো বাজেট দেইনি। আমি জেনারেল এরশাদ সাহেবের বাজেট দিয়েছি, যেটা নির্দলীয় সরকার ছিল।
অর্থমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন করায় নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, একজন বিশিষ্ট নেতা আমার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও ঐতিহ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন, তার প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক। কারণ তার জন্মের আগে আমি একজন প্রসিদ্ধ রাজনীতিবিদ ছিলাম। আমার সময় আমি অন্যতম ছাত্রনেতা ছিলাম। এটা তার অবশ্য জানার সুযোগ হয়নি, কেননা পড়াশোনা তাদের মধ্যে তেমন একটা আসে না।
আমলাতন্ত্রের কারণে বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দোষ দেয়া যায়, কিন্তু আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই এজন্য যে, আমরা যে বাজেট দিয়েছি তারা তাদের জীবনে এত বড় বাজেট দেখেননি। যা গত ৭ বছরে ৯১ হাজার কোটি থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়, সেটার সাথে যে তারা চলতে পারছেন এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।
অর্থমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে আমাদের রাজস্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। তার আগের বছরগুলোতে সবসময় কম হয়েছে। কিন্তু এরকম কম হয়নি। আমি এটা আমলে নেইনি, এই ঘটনা আমলে না নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটের হিসাব করেছি। কারণ এই যে স্থবিরতা বা একটুখানি শৈথিল্য এটা সাময়িক। তবে এটার পরিবর্তন করার জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে এটা সত্যি কথা দুর্নীতি ‘কস্ট অব প্রজেক্ট’ বাড়িয়ে দেয়।
তিনি বলেন, এটা মনে রাখা উচিত এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের তুলনা সময় সময় ঠিক হয় না। যেমন বাংলাদেশে পাথর আমদানি করতে হয়, ভারত বা অন্য দেশে পাথর আমদানি করতে হয় না। তাই অন্য দেশের সাথে তুলনা করে বাজেট হিসাবে নিলে চলবে না।
মুহিত বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের অনেক পর মেগা প্রকল্প নিয়েছি। অনেক দেরিতে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। ৪৫ বছর পার হয়ে গেছে। তবে আমাদের অগ্র্রগতির যে লক্ষ্য, আমার মনে হয় মেগা প্রকল্প আমরা এখন গ্রহণ করতে পারি। আমরা মেগা প্রকল্পের দিকে নজর দিয়েছি, একটা বইও দিয়েছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন