মিজানুর রহমান তোতা : মাঠের চিত্র সোনালি আঁশের পাটের স্বর্ণযুগ ফেরার হাতছানি দিচ্ছে। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে চাষিদের স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা কাটছে না। প্রতি মৌসুমেই চাষিরা সোনালি আঁশ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিনরাত পরিশ্রম করেন পাট উৎপাদনে। হারানো অতীত ঐতিহ্য ফেরানোর সরকারি উদ্যোগে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন পাটচাষিরা। কয়েকটি মৌসুমে চাষিরা লাভবানও হন। কিন্তু গত দু’টি মৌসুমে লোকসানের পাল্লা হয়েছে ভারী। জমি চাষ, বীজ, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আঁশ ছাড়ানো, শুকানো ও বিক্রির জন্য পরিবহনসহ যেসব খরচ হয় তা ওঠে না। একবুক আশা নিয়ে পাট বাচা ও তোলার পরই শুরু হয় নানা দুশ্চিন্তা। চলতি মৌসুমে সারাদেশে পাটের আবাদ খুবই ভালো হয়েছে। অনেক স্বপ্ন দেখছেন পাটচাষিরা। সেই স্বপ্ন যেন ভঙ্গ না হয় তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন পর্যবেক্ষক মহল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (ফিল্ড সার্ভিস উইং) চৈতন্যকুমার দাস গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চলতি মৌসুমে ৮ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। পাটের অবস্থা এবার খুবই ভালো। গ্রোথ এবার কয়েক বছরের মধ্যে ভালো হওয়ার কারণ পাটের জন্য উপযোগী রোদ ও বৃষ্টি হয়েছে। বড় কোনো দুর্যোগ না হলে এবার পাটের ফলন হবে আশানুরূপ। চাষিরা পাট আবাদ ও উৎপাদনে যেভাবে ঝুঁকেছেন তাতে সোনালি আঁশের স্বর্ণযুগ ফেরার হাতছানি দিচ্ছে। চাষিরা জানান, পুরনো পাট বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১ হাজার ৯০০ টাকা। এই দাম থাকলে চাষিদের লাভ ছাড়া লোকসান হবে না। তাদের কথা, আশাতীত ফলনে তাদের মুখে হাসি ফোটে কিন্তু বাজারে পাট উঠালেই হাসি ম্লান হয়ে যায়। গত মৌসুমে এমনটি হয়েছে, উৎপাদন খরচ উঠাতে পারেননি অনেক চাষি। যার কারণে বারবার সুযোগ সৃষ্টির পরও কেন যেন স্বর্ণযুগ ফেরার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। পাটের বাজার তোলার সময়ে তদারকির অভাবে মুনাফালোভী ফড়িয়া, দালাল ও আড়তদারদের দাপট অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে যায়। এসব ব্যাপারে মৌসুমে নজরদারি না বাড়ানোর কারণেই আশাতীত ফলন হওয়ার পরও চাষিদের লোকসান গুনতে হয়। এবার যেন তা না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মাঠ ভরে গেছে পাটে। কৃষি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদগণ ও চাষিসহ সংশিষ্টদের মন্তব্য, বিরাট সম্ভাবনাময় ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম কৃষির এই খাতটির দিকে সামগ্রিকভাবে নজর দেয়া হয়নি। বাজার বিশৃঙ্খলা মোটেও দূর হয়নি। অতীতের মতো নানা অজুহাতে সহজ সরল নিরীহ চাষিকে রীতিমতো প্রতারিত করা হয়। প্রতিটি মৌসুমে একই কথা বলা সত্ত্বেও পাট বাজারের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হয় না বলে পাটচাষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তাদের মতে, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব ও নানামুখী বিশৃঙ্খলায় পাটের বাজারে মুনাফালোভীদের বরাবরই দাপট চলে। তাতে মন ভেঙে যায় চাষিদের।
মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও চাষিরা জানান, পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন পাটচাষি, জুটমিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও শিল্পোক্তোসহ সংশ্লিষ্টরা। যশোরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষি কর্মকর্তা ও পাটচাষিরা জানান, এবার উপযুক্ত দাম না পেলে মন ভেঙে যাবে পাট আবাদে। ধানের দাম না পেয়ে আর্থিক কষ্টে আছি, পাট বিক্রি করে যদি আশা পূর্ণ না হয় তাহলে কষ্টের সীমা থাকবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ও প্রাইভেট মিলে বর্তমানে ১৮২টি জুট মিল চালু রয়েছে। জুট মিলের উৎপাদিত চট, সুতা, কার্পেট ও বস্তা রফতানি করে আয় হয় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন