মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আরো ১৫ চালানে শূকরের বর্জ্য

চট্টগ্রাম বন্দরে দু’দফায় ১৮ চালানে আটক ২,৭১১ মেট্রিক টন মাছের খাবার

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

মাছের খাবারের নামে আনা আরও ১৫টি চালানে পাওয়া গেছে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও হারাম বস্তু শূকরের বর্জ্য। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা এসব চালানে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা ১৩শ’ তিন মেট্রিক টন মাছের খাদ্য রয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিজস্ব পরীক্ষাগারসহ দেশের নামকরা তিনটি পরীক্ষাগারে এসব চালানের নমুনা পরীক্ষায় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও আমদানি নিষিদ্ধ মিট অ্যান্ড বোন মিলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

মাছ-মুরগির খাবারের আড়ালে আনা এসব চালান জব্দ করেছে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার উপ-কমিশনার অনুপম চাকমা গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য থাকার সন্দেহে অর্ধশত চালানের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

এরমধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১৫টি চালানে শূকরসহ গবাদিপশুর বর্জ্যযুক্ত মাছের খাবার পাওয়া গেছে। আরও অন্তত ৩০টি চালানের নমুনা পরীক্ষা চলছে। তিনি বলেন, মাছের খাবারের নামে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ও নিষিদ্ধ পণ্য যারা আমদানি করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। একটি চালানও পরীক্ষা ছাড়া খালাস করতে দেয়া হবে না।
এ নিয়ে গত এক মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা ১৮টি চালানে আমদানি নিষিদ্ধ মিট অ্যান্ড বোন মিল পাওয়া গেল। এসব চালানে পণ্যের পরিমাণ দুই হাজার ৭১১ মেট্রিক টন। গত ২৪ জুলাই প্রথম দফায় তিনটি চালানে আসা ৮৫ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি এক হাজার ৪০৯ টন মাছের খাবারে শূকরের বর্জ্য পাওয়া যায়। এরপর নড়েচড়ে বসে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি চালানের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। কাস্টম হাউসের নিজস্ব পরীক্ষাগার ছাড়াও ঢাকার আইসিডিডিআর বি, চট্টগ্রামের পোল্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে এসব চালানের নমুনা পাঠানো হয়। এবার কয়েকটি চালানের ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়। এসব নমুনা পরীক্ষায় গতকাল পর্যন্ত ১৫টি চালানে ক্ষতিকর বর্জ্য থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, ১১০ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি এসব চালানের পরিমাণ ১৩ লাখ ৩ হাজার ৭৫০ কেজি বা ১,৩০৩ মেট্রিক টন। জব্দকৃত ১৫টি চালানের মধ্যে ১৩টি আমদানি হয় ভিয়েতনাম থেকে। বাকি দুটি বেলজিয়াম ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা। এসব চালানের মধ্যে সবচেয়ে বড় ৩০ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি তিন লাখ ৭৫ হাজার কেজি চালানটির আমদানিকারক রাজশাহীর ফিশটেক বিডি লিমিটেড। ভাসমান মাছের খাবার হিসেবে ভিয়েতনাম থেকে এ চালানটি আমদানি করে তারা।

চালানটি খালাসের দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রামের এশিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। একই আমদানিকারকের নামে আনা ছয় টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি ৭৫ হাজার কেজি আরও একটি চালান জব্দ করা হয়। ১২ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি এক লাখ ৫০ হাজার কেজি মাছের খাবার আমদানি করে সিরাজগঞ্জের মিশাম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ। এ প্রতিষ্ঠানটিরও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রামের এশিয়া এন্টারপ্রাইজ। এ দুটি চালানসহ আটক চালানের মধ্যে মোট ছয়টি চালান খালাসের দায়িত্বে রয়েছে এশিয়া এন্টারপ্রাইজ।

জব্দকৃত চালানের মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের একোয়াটেক অ্যাগ্রো লিমিটেডের ১০ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি এক লাখ আট হাজার কেজি মাছের খাবার। এ চালানটির ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়েছে। ঢাকার এডভান্স অ্যাগ্রোর ১০ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি মাছের খাবারের পরিমাণ এক লাখ ৩৮ হাজার ৭৫০ কেজি। এছাড়া গাজীপুরের কোয়ালিটি ফিডসের আনা দুই লাখ কেজি, পাবনার আর আর পি অ্যাগ্রো ফার্মসের ২৭ হাজার কেজি, ঢাকার ইন্টার অ্যাগ্রোর ৭০ হাজার কেজি, ম্যাগনিফাই অ্যাগ্রোর ২৬ হাজার কেজি, ময়মনসিংহের ভিএনএফ অ্যাগ্রোর ৫০ হাজার কেজি, কক্সবাজারের এমকেএ হ্যাচারীর ২১ হাজার কেজি চালানে ক্ষতিকর বর্জ্য পাওয়া যায়।

উন্নত দেশগুলোতে শূকর ও গবাদিপশুর বর্জ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রফতানি করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানায়, বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করতে গিয়ে অনেক সময় অ্যানথ্রাক্স, মেডকাউসহ বিভিন্ন মারাত্মক মহামারি আক্রান্ত শূকর ও গবাদিপশুকে মেরে ক্রাশ করা হয়। এরপর এসব বর্জ্য সার ও পশুখাদ্য হিসেবে অনুন্নত দেশে রফতানি করা হয়।

দাম কম হওয়ায় বাংলাদেশসহ অনেক দেশের আমদানিকারকেরা মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে এসব পণ্য নিয়ে আসে। ফলে এসব বর্জ্যে ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক, টেনারি উপজাত ও মেলামাইনের মিশ্রণ থাকার আশঙ্কা থেকে যায়। এসব খাবার খেয়ে মাছ ও মুরগির বাচ্চা দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আকার ধারণ করে। এসব মাছ এবং মুরগি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন মাছের খাবার আমদানি হয়। একসময় অবাধে এসব চালান খালাস করে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। গেল ডিসেম্বর থেকে সরকার মিট অ্যান্ড বোন মিল আমদানি নিষিদ্ধ করে। এরপর থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ মাছ-মুরগির খাবারের প্রতিটি চালান পরীক্ষা করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (18)
Mohammad Salim ২১ আগস্ট, ২০১৯, ৪:৪৪ এএম says : 0
যথা উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুন।
Total Reply(0)
Ashraf Hossain ২১ আগস্ট, ২০১৯, ৪:৪৪ এএম says : 0
প্রকাশ করা হেক আমদানী কারক ও তা প্রতিষ্ঠানের নাম।
Total Reply(0)
Murtuza Chowdhury ২১ আগস্ট, ২০১৯, ৪:৪৫ এএম says : 0
বাংলাদেশের মত মুসলিম প্রধান দেশে আমদানি নিষিদ্ধ শুকরের বর্জ্য আমদানি কারকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্হা নেওয়া উচিৎ।
Total Reply(0)
Rasel Sikder ২১ আগস্ট, ২০১৯, ৪:৪৫ এএম says : 0
যতই দিন সামনে আগায়ে ততোই আমাদের বিবেক বুদ্ধি লোপ পেতে যাচ্ছে।
Total Reply(0)
MD Akash ২১ আগস্ট, ২০১৯, ৪:৪৭ এএম says : 0
thanks to Custom House, Chattogram
Total Reply(0)
Md. Julhas Islam ২১ আগস্ট, ২০১৯, ৬:৩৬ এএম says : 0
আসলে আমাদের দেশেরমানুষ এতটাই মুর্খ হতে বসছে যা ভাবা যায় না।
Total Reply(0)
মুহাম্মদ-হাছিবুর রহমান ২১ আগস্ট, ২০১৯, ৯:০৯ এএম says : 0
Very sad
Total Reply(0)
মুহাম্মদ-হাছিবুর রহমান ২১ আগস্ট, ২০১৯, ৯:০৯ এএম says : 0
Very sad
Total Reply(0)
মোঃআকবর হোসাইন ২১ আগস্ট, ২০১৯, ১০:২৬ এএম says : 0
এসব আমদানি কারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের কাছে কোনো ধর্মের লোক নিরাপদ নয়।
Total Reply(0)
সাদিকুল ২১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ পিএম says : 0
আমাদের দেশে গভীর চক্রান্ত চলছে
Total Reply(0)
তরিক ২১ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৩৬ পিএম says : 0
আমরা গভির সরজ্ন্তের স্বিকার
Total Reply(0)
Uzzal ২১ আগস্ট, ২০১৯, ৯:০১ পিএম says : 0
there are no company in our Bangladesh are not used meat bone. because meet born is main metals in floating fish feed now many company are supply made bone as fish meal. if you not believe me you can test floating fish feet every company in our Bangladesh then you can see every. I have a great suggest for government please test every company floating fish feed. Otherwise I can not possible to stop use meat.
Total Reply(0)
Uzzal roy ২১ আগস্ট, ২০১৯, ৯:০৬ পিএম says : 0
there are no company in our Bangladesh are not used meat bone. because meet born is main metals in floating fish feed. now many company are supply meet bone as fish meal. if you not believe me you can test floating fish feet every company in our Bangladesh. then you can see. I have a great suggest for our government please test every company floating fish feed. Otherway you can not possible to stop use meat.
Total Reply(0)
Taifur Rahman ২২ আগস্ট, ২০১৯, ৭:৩৯ এএম says : 0
দূর্নীতি সমাজ থেকে রোধ না করলে কোনও অপরাধই বন্ধ করা সম্ভব নয়
Total Reply(0)
Mustafizur Rahman Ansari ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম says : 0
Please action immediate
Total Reply(0)
Mustafizur Rahman Ansari ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম says : 0
Please action immediate
Total Reply(0)
Mustafizur Rahman Ansari ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম says : 0
Please action immediate
Total Reply(0)
ম নাছিরউদ্দীন শাহ ২৬ আগস্ট, ২০১৯, ৬:১২ পিএম says : 0
ঐ সকল ইহুদি কাফেরের জনম দের এলিট ফোর্স র‍্যব হাতে তুলে দেওয়া উচিৎ। এটি মুসলমানদের জন্য ভয়ংকর খারাপ সংবাদ। কোথায় আলেম সমাজ। কোথায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়োজিত মন্ত্রী বাহাদুর গন। এই সব খারাম খাদ্যের অংশ সবার পেটে যাবেন। অনইচ্ছাকৃত ভাবে। আইন শৃংখলা বাহিনী দায়িত্বজ্ঞান কর্মকর্তারা এখন জরুরী এই সকল ইহুদি কাফেরের জনম... গুলো কে গ্রেফতার করা। দেশের সকল জাতীয় পত্রিকা টেলিভিশনে শিরোনাম হিসাবে প্রকাশ করা জরুরী। আল্লাহ আপনি আমাদের কে নাপাক খাদ্যের আহার হতে সবাই কে হেফাজত করুন।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন