শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ওষুধে কাজ হচ্ছে না, আল্লাহই আমাদের বাঁচাচ্ছেন

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতায় হাইকোর্টের অসন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ওষুধ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রতিদিন নতুন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আল্লাহই আমাদের বাঁচাচ্ছেন। এ মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম এবং বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর ডিভিশন বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা প্রতিবেদন আকারে দাখিল করা হয় আদালত। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আইনজীবী এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে দুই সিটির গৃহীত ১০ পদক্ষেপ তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন দাখিলের পর আদালত দুই সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কখন কিভাবে কোন ওয়ার্ডে কী কাজ করছেন তা প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানাতে বলেন। সেই সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর প্রকৃত সংখ্যাও জানাতে বলা হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কী ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে- জানাতে বলেছেন সেটিও। পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী সোমবার।

এদিকে ডেঙ্গু রোধে সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান আদালতকে জানান, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই সিটি করপোরেশনকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আদালত তখন জানতে চান, যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা ঠিকমতো ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা দেখা হচ্ছে কি না? জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ দেয়ার অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। উত্তর সিটি করপোরেশনকে ১ হাজার ৬২০ জন কর্মী এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ২ হাজার ২৫০ জন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আদালত জানতে চান, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কোনো মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে কি না? একটা মনিটরিং টিম করা হয়েছে বলে তথ্য দেন এই সরকারি আইন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ আনা হয়েছে। আদালত তখন বলেন, তার মানে আপনারা স্বীকার করছেন, আগের ওষুধ অকার্যকর ছিল। আগের ওষুধ কখন থেকে কাজ করছে না, তা কবে জানলেন? আদালতের এই প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি কাজী মাইনুল। আদালত সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, আপনি অ্যাকটিভ হলে তো হবে না। মশা নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দেয়া হলো। তারা কী কাজ করছে? সবাই রাজা-বাদশাহ হয়ে গেছেন!

আদালত তখন এই আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ওষুধ এনেছেন কি না? নতুন জনবল কী কাজ করছে? কোনো উন্নতি হয়েছে কি না? ওষুধ মারার পর কার্যকর কী ফলাফল আসছে? আগের ওষুধে কি মশা মরছে? নাকি দক্ষিণের মশা উত্তরে যাচ্ছে? এটা টোটালি আপনাদের গাফিলতি। প্রতিদিনই নতুন করে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির আইনজীবী তৌফিক এনাম টিপু ১০ অগ্রগতি প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। এ সময় উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা উপস্থিত ছিলেন। আদালত তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ওষুধ দিয়ে তো কোনো লাভ হচ্ছে না। এই ওষুধ কি কাজ করছে? তখন দক্ষিণের আইনজীবী তৌফিক এনাম বলেন, সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমছে।

আদালত তখন বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশন তো আর সারা দেশে স্প্রে করছে না। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। এর কারণ প্রকৃতি। তখন উত্তর সিটির এই আইনজীবী বলেন, ঢাকায়ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত মশা মারার ওষুধ আনা হয়েছে। আইনজীবীর কাছ থেকে এমন তথ্য জানার পর আদালত বলেন, এই ওষুধ কি কাজ করছে? জবাবে আইনজীবী বলেন, হ্যাঁ, এই ওষুধ কাজ করছে। ল্যাবরেটরির রিপোর্ট তাই বলছে।

আদালত তখন বলেন, এই ওষুধে কাজ হচ্ছে কি না, তা জানা যাবে হাসপাতালে গেলে। হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলে বোঝা যাবে ওষুধ কাজ করছে না। উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় হাসপাতালের সংখ্যা কম। তার মানে এই নয় যে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি। ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে আদালত বলেন, আমরা এত কিছু দেখব না। হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী না এলে আমাদের কনসার্ন (উদ্বেগ) থাকবে না। তখন আবারো সাঈদ আহমেদ রাজা দাবি করেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। গাবতলী বাস টার্মিনালে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। সেখানে স্প্রে করা হয়েছে। এই তথ্য জানার পর আদালত বলেন, এটা তো পাবলিক প্লেস। এখন আপনারা নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করছেন। আদালত বলেন, সিটি করপোরেশনের জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

উত্তর সিটির আইনজীবী বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০ জন কাজ করছেন। আদালত তখন বলেন, ‘হোয়াট ওয়াজ দ্য রেজাল্ট। এত দিনের রেজাল্ট কোথায়? দক্ষিণের আইনজীবী তৌফিক ইনাম বলেন, যারা স্প্রে করছেন তাদের কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। মোবাইল ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। আদালত বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সে জন্য তদন্ত হওয়া দরকার। আদালত থেকে বেরিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই সিটি করপোরেশনকে সাড়ে ৭ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর আগে মশাবাহিত রোগ ছড়ানো বিষয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে গত ১৪ জুলাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপ আদালতকে জানাতে বলা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন