অর্থমন্ত্রীর মেয়ের কণ্ঠস্বর হুবহু নকল করে প্রতারণা করে আসছিল সে। অবশেষে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারের কাছে পর্যন্ত ফোন কলে তদবির করতে গিয়েই ধরা। সহযোগীসহ গ্রেফতার হয়েছেন শাহীন নামের অতি ধূর্ত ওই প্রতারক। তার প্রতারণার ফাঁদ এবং ফিরিস্তি ও টার্গেট ছিল অবিশ্বাস্য দীর্ঘ।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সোমবার রাতে গ্রেফতার হন মোহাম্মদ শাহীন। বয়স তার ৩০। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে বের হয়ে আসছে প্রতারণার চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। তার সহযোগী মো. হারুনের (৩৫) বাড়িও চৌদ্দগ্রামে।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শাহীন নিজেকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল পরিচয় দিয়ে আমাকে ফোন করেন। চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী দিদারুল আলম তাকে ফোনে ডিসটার্ব করছে এমন অভিযোগ করেন। এই ঘটনায় তিনি বিব্রত উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন। তার আগে একই বিষয়ে কুমিল্লার সদ্য সাবেক ডিসি ও এসপিও ফোনে আমাকে ওই যুবকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
এসপি জানান, এ ব্যাপারে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে আমি মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দিই। ওসি ওই যুবককে তার বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। থানায় এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে কথিত মন্ত্রীর কন্যার সম্পর্কে পিলে চমকানো তথ্য দেয়। সে জানায় ওই প্রতারক একজন ছেলে। সে অর্থমন্ত্রীর মেয়ে পরিচয় দিয়ে অনেকের সাথে প্রতারণা করেছে। সে নিজেও তার প্রতারণার শিকার।
এসপি নুরেআলম মিনা বলেন, তার কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়ে আমি কথিত নাফিসা কামালের ফোনে ফোন করি। তাকে বলি আপনার কথা মতো ওই যুবকে গ্রেফতার করা হয়েছে আপনি এসে তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করুন। জবাবে তিনি খুব ব্যস্ত জানিয়ে বলেন, আমার একজন পিএস আছে তাকে পাঠাচ্ছি। পুলিশ তখন তাকে ধরতে ফাঁদ পাতে। এক পর্যায়ে একটি প্রাইভেট কারে সহযোগী হারুনসহ ওই প্রতারক শাহীন জোরারগঞ্জ থানায় আসে। থানার সামনে পুলিশ দেখেই তারা গাড়ি ঘুরিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে পুলিশ তাদের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। গ্রেফতারের পর ওই প্রতারক দীর্ঘদিন থেকে অর্থমন্ত্রীর মেয়ের কণ্ঠস্বর নকল করে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে নানা তদ্ববির করার কথা স্বীকার করেন। এসপি বলেন, পরে জানতে পারি ওই প্রতারক এমন এক ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলো। সম্প্রতি সে জামিনে বের হয়ে আসে।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে জোরারগঞ্জ থানায় প্রতারণার মামলা হয়েছে। রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার সাথে আরও কারা জড়িত তাদেরও চিহ্নিত করা হবে। সে অনেকের কণ্ঠস্বর নকল করতে পারে জানিয়ে এসপি বলেন, টেলিফোনে তার কণ্ঠ শুনে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছেন।
জোরারগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল জানান, ২০১৬ সালে শাহীন ‘তানিশা আক্তার’ নাম দিয়ে একটি ফেসবুক আইডি খোলেন। সেই আইডি থেকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠান জোরারগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী দিদারুল আলমের কাছে। দিদারুল ও তানিশার (শাহীন) মধ্যে ফেসবুকে বন্ধুত্বের একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তানিশা প্রথমে নিজেকে স্কুলশিক্ষিকা ও পরে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ‘মীরসরাইয়ের এসি ল্যান্ড’ পদে আছে বলে পরিচয় দেয়। দিদারুলের কিছু জমি নিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে দেয়ার নাম করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় শাহীন। স¤প্রতি দিদারুল দেশে ফিরে আসেন এবং শাহীনের প্রতারণার বিষয়টি অবগত হন। এরপর থেকে দিদারুলকে গ্রেফতারে উঠেপড়ে লাগেন শাহীন। কণ্ঠস্বর নকল করে অর্থমন্ত্রীর মেয়ে পরিচয়ে প্রথমে এসপি ও এরপর জোরারগঞ্জ থানার ওসিকে ফোন করে। তার আগে কুমিল্লার ডিসি এসপিকেও ফোন করে।
মোজাম্মেল জানান, জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন জানিয়েছে, কণ্ঠস্বর নকল করে কুমিল্লার জেলা প্রশাসককে ফোন করে শাহীন বেশকিছু তদবির করেন এবং জায়গা-জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করেন। কুমিল্লা ও মীরসরাইয়ের এসি ল্যান্ডকেও সে একইভাবে কয়েকবার ফোন করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন