রাজশাহী ব্যুরো : রমজানের শুরুতেই জমে উঠছে রাজশাহীর ইফতারীর বাজার। বড় বড় হোটেল, রেস্তোরাঁ, চাইনীজ রেস্টুরেন্ট আর ফাস্টফুডের দোকানগুলোয় এ নিয়ে বাড়ছে ব্যস্ততা। এর বাইরেও মহল্লার চা-সিঙ্গাড়ার দোকান আর বিভিন্ন স্থানে ইফতারীর নানা সামগ্রী নিয়ে বসে গেছে অস্থায়ী দোকানও।
পেঁয়াজু, জিলাপী, বেগুনী, ছোলা ভুনা মিলছে সর্বত্র। বিশেষ করে জিলেপীর কদর রয়েছে। রাজশাহীর বাটার মোড়ের জিলাপীর ঐতিহ্য আলাদা। তাছাড়া শামীম সুইটসের জিলেপীও কম যায় না। আর বহুদিনের পুরানো রহমানীয়া এখনও তাদের ঐতিহ্যবাহী ফিরনি ধরে রেখেছে।
দুপুরের পর থেকে চালু হচ্ছে ইফতারীর বাজার। চলছে গরম গরম জিলেপী পেঁয়াজু, বেগুনী ভাঁজা। নিমকী ছোলা আগেই তৈরী করা হচ্ছে। সাহেব বাজার গোরহাঙ্গা লক্ষ্মীপুর মোড়, তালাইমারী, বিনোদপুর, কাশিয়াডাঙ্গা, কোট স্টেশন যেখানেই যাওয়া যাক না কেন। সর্বত্র একই দৃশ্য ভাঁজা পোড়া। বনেদী হোটেল রেস্তোরাঁ চাইনীজ আর ফাস্টফুডগুলো বিভিন্ন নামে আইটেম চালু করেছে। নামের মধ্যে একটা বনেদী ভাব আছে। সাধারণ হোটেলের সবজি পেঁয়াজু ঐসব বড় বড় হোটেলে ভেজিটেবল পাকুড়া আর গোশতের কিমা দিয়ে গোল গোল বড়া নাম পাচ্ছে বিফবল কিংবা মাছ দিয়ে তৈরী ফিসবল। জিনিস একই হলেও প্রতিষ্ঠানের কারণে দামেও রয়েছে অনেক হেরফের। ইফতারীর বাজার ঘুরে দেখা যায় এবার সব কিছুর দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান ইফতারী তৈরির কোন জিনিসের দাম কম নেই। পেঁয়াজু, বেগুনী, আলুর চপসহ বিভিন্ন ভাঁজা পোড়া তৈরীর জন্য দরকার ডাল। এ ডাল দিয়ে তৈরী হয় বেসনও। বিশেষ করে ছোলার ডাল। এরপর রয়েছে খেসারী ও এ্যাংকর ডাল। রমজান শুরুর আগেই এর দাম বেড়েছে কয়েক দফা। আর মিষ্টির জন্য দরকার চিনির। তারও দাম বেড়েছে। ফলে ভাঁজা পোড়া সামগ্রী থেকে জিলেপী সব কিছুতেই খরচ বেড়েছে। সঙ্গত কারণে দামও বেড়েছে। গরু, খাসী, মুরগীর দাম বেড়ে যাবার কারণে এসব দিয়ে তৈরী কাবাব চপ জাতীয় খাবার এবং হালিম তেহারী সব কিছুতেই গতবারের চেয়ে দাম খানিকটা বেশী। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো রমজানের শুরুতে বেগুনের গায়ে আগুন লেগেছে। তাই বেগুনের দাম বেড়েছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায় প্রায় সর্বত্র ব্যবহার হচ্ছে নি¤œমানের সামগ্রী ভাঁজা পোড়ার জন্য তেল হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের পামতেল। দুদিনের পোড়া তেলের মধ্যে আবার নতুন করে তেল মিশিয়ে চলছে ভাঁজার কাজ। যদিও সবাই মানের ব্যাপারে ষোল আনাই খাঁটি বলে দাবী করছেন। কাঁচামালের পাইকারী বাজার ঘুরে দেখা যায় সেখানে খানিকটা নষ্ট আলু আর পেঁয়াজের বেশ চাহিদা। দামও কম। এসব চলে যাচ্ছে খাবার তৈরীর দোকানে। খানিকটা নষ্ট আলু, পেঁয়াজ কাটা আলু পেয়াজ নামে পরিচিত। অনেকে জানান, নামধারী বেশকিছু হোটেল রেস্তোরাঁও এর নিয়মিত গ্রাহক। খালি আলু পেঁয়াজ নয়। খানিকটা নষ্ট মিষ্টি কুমড়ো শসাসহ বিভিন্ন সবজিও যায়।
বিক্রেতারা জানান বড় হোটেল থেকে ফুটপাতের হোটেল প্রায় সবাই এসব কেনে। সারা বছরই বিক্রি হয়। তবে রমজানে এর চাহিদা বাড়ে। রমজান শুরু হয়েছে তীব্র গরমের মধ্যদিয়ে। এতে রোজাদারদের কষ্ট একটু বেড়েছে। একে লম্বা সময় তার উপর গরমরে তীব্রতা। সাথে বিদ্যুতের ভোগান্তি বেশ বিপাকে ফেলেছে রোজাদারদের। প্রচ- গরমে তৃষ্ণাত্ব রোজাদারদের ইফতারীতে প্রশান্তি আনছে আম। এখন চলছেÑ আম, জাম, তাল, শাসের মওসুম। পাকা আম দিয়ে চলছে ইফতারী। আখের রস বিক্রি হচ্ছে ভাল। যাদের পাকা আম খেতে মানা। তারা কাঁচা আমের জুস পান করছেন। বাজারে লেবুর সরবরাহ ভাল লেবু সরবত বিক্রি হচ্ছে। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে চলছে ইফতারীর কেনাকাটা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন