শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

লাভের ঘোড়ার পিঠে চড়েছেন কৃষকরা

এখন বিদেশে কুমিল্লার কচুর লতি

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

কচুর লতি ভাগ্য বদলে দিয়েছে কুমিল্লার বরুড়ার উপজেলার কৃষকদের। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে গত কয়েক বছর ধরে এই লতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, কানাডা, জার্মানি, ডেনর্মাক, সুইডেন ও মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রায় ২৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে। দেশে আসছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।

কচুর লতি রফতানি করে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। আর অল্প সময়ে লতি চাষে লাভবান হচ্ছেন কুমিল্লার কৃষকরা। তাদের কথায়, অন্যান্য সবজি চাষের চেয়ে কম বিনিয়োগে বেশি লাভবান হওয়ায় প্রতি বছর কুমিল্লায় কচুর লতি চাষ বাড়ছে।
বরুড়ার কচুর লতি অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় দেশ-বিদেশে কদর বাড়ছে। এছাড়াও কম খরচ আর পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকদের মাঝেও লতি চাষের আগ্রহ বাড়ছে। কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে কচু চাষে খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। আর লতি বিক্রি করেই ওঠে আসে সেই খরচ।
লাভের অংশ হিসেবে প্রতি বিঘা জমির কচু বিক্রি করা যায় কমপক্ষে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। অন্যদিকে লতি ও কচুর প্রচুর চাহিদা থাকায় জমি থেকে তুলে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে নেওয়ার পরই বিক্রি হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা বরুড়ার কচুর লতি কিনে নিয়ে যান।

বরুড়া উপজেলার কাদবা এলাকার কৃষক মিলন মিয়া জানান, তিনি প্রায় ১২ বছর ধরে এই কচুর আবাদ করছেন। শুরু থেকে এ পর্যন্ত তার লোকসান হয়নি। বর্তমানে অনেকেই আগ্রহী হয়ে কচুর লতি চাষ করছেন। এর ফলে পুরো এলাকা এখন কচুর লতির গ্রামে পরিণত হয়েছে। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন এলাকার অপর কচু লতি চাষি জিন্নাত মিয়া।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বরুড়ার শরাফতি, মগুজি, কসমি, নিশ্চিন্তপুর, পুরাতন কাদবা, বরাইপুর, যশপুর, পেনুয়া, পাক্কামোড়া, লইপুরা, করিয়াগ্রাম, হুরুয়া, পাঠানপাড়া, ল²ীপুর, ঝাঁলগাও, নয়নতলা, পোনতলা, বাতাইছড়ি, খোশবাসসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কচুর লতি চাষ হচ্ছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশপুর গ্রামের প্রথম উদ্ভাবিত এ লতি চাষ শুরুতে ২-১ জন কৃষকের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে দ্রুত বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় বর্তমানে পাশ^বর্তী উপজেলা বুড়িচং এর নিমসার, সদর উপজেলার কালিরবাজার, কমলাপুর, মনষাসন, হাতিগাড়া, কৃষ্ণপুর, জাঙ্গালীয়া, সদর দক্ষিণের বাগমারা, ভূশ্চি, লালমাই, চান্দিনার পিহর, মাইজখার, ছায়কোট, রামমোহনসহ বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লতির চাষ হচ্ছে।
বরুড়ার উপজেলার ঝাঁলগাও গ্রামের সফল লতি চাষি আবেদ আলী জানান, বছরের ৬ মাস এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লতি চাষের মৌসুম। কিন্তু এখন সারা বছর এর ফলন পাওয়া যায়। লতির পাইকার মুমিন ও রনি বলেন, বরুড়ার বাতাইছড়ি বাজার থেকে মৌসুমে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ টন লতি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন তারা।

তারা জানান, কৃষকদের কাছ থেকে প্রকার ভেদে প্রতি কেজি লতি ২৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। বাতাইছড়ি এলাকার কৃষক আমির ও বাতেন মিয়া বলেন, এই একটি সবজি যেটি আবাদে তাদের কখনো লোকসান গুণতে হয়নি। অন্যদিকে বাজারে চাহিদা থাকায় বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারীরা অনেক সময় জমি থেকেই কচুর লতি কিনে নিয়ে যান।

সবজি ব্যবসায়ী নেয়ামত আলী জানান, তিনি সপ্তাহের দুইদিন এখানকার হাট ও কৃষকদের কাছ থেকে কচুর লতি কিনে নিয়ে যান। ঢাকার কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে এখানকার কচুর লতি কিনে কারওয়ান বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পাইকারি বিক্রি করছেন। লতির প্রচুর চাহিদা থাকায় ব্যবসা করে বেশ ভালো আছেন বলে জানান।
কুমিল্লার কৃষি বিভাগ জানায়, এখানকার মাটি কচুর লতি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই এর আবাদ হচ্ছে। চলতি বছর উপজেলায় ৩০৫ হেক্টর জমিতে কচুর লতি আবাদ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে গোবর, ডিএপি, পটাশ, জিপসাম, ইউরিয়া বাবদ ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ করে লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৫ হাজার টাকায়। প্রতি বিঘা জমিতে ৩ থেকে ৪ হাজার কেজি কচুর লতি পেয়ে থাকেন কৃষকরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন