দোলন-ঝিলিক ও শ্রাবণী ওরা সবাই নতুন জন্ম নিয়েছে। ওদের দেখতে ভিড় জমিয়েছে সবাই।
গতকাল ছিল শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় অন্যান্য দিনের চেয়ে দর্শনার্থী ছিল অনেক বেশি। চিড়িয়াখানার বিভিন্ন প্রাণী দেখে শিশুরা বেশ আনন্দ করে মজা পায়। তবে গতকাল অন্য প্রাণীদের চেয়ে নতুন জন্ম নেয়া ছোট্ট প্রাণীদের দেখতেই ভিড় জমায় সবাই।
চিড়িয়াখানার আকর্ষনীয় অ্যারাবিয়ান হর্স দুলকি গত এক সপ্তাহ আগে জন্ম দিয়েছে একটি ফুটফুটে শাবক। ইতোমধ্যে তার নাম দেয়া হয়েছে দোলন। চিড়িয়াখানার সুন্দর জেব্রা যার নাম চাঁদনী। সে জম্ম দিয়েছে মেয়ে শাবক। তার নাম দেয়া হয়েছে ঝিলিক। আর প্রিয়া নামের জিরাফটি জন্ম দিয়েছে আর একটি মেয়ে শাবক। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জিরাফ শাবকের নাম দিয়েছে শ্রাবণী।
জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর এস এম নজরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, জলহস্তী, জিরাফ, জেব্রা ও অ্যারাবিয়ান হর্সে চারটি বাচ্চা জম্ম দিয়েছে। নতুন বাচ্চা জন্ম নেওয়ায় মিরপুরে চিড়িয়াখানায় জিরাফের সংখ্যা আটটি। এর মধ্যে ছয়টি পুরুষ ও দুটি মেয়ে। পাঁচটি জেব্রার মধ্যে চারটি মেয়ে এবং সাতটি অ্যারাবিয়ান হর্সের মধ্যে দুটি পুরুষ রয়েছে। প্রাণীরা সহজে ওদের বাচ্চাদের একা ছাড়ে না। আবার একাকী থাকলেও ওদের সঙ্গীরা নবজাতকের ওপর চড়াও হয়। তবে মা এবং নবজাতককে আলাদা করে রাখা হয়। চিড়িয়াখানায় আছে ২ হাজার ৬৮৭টি প্রাণী। গত কয়েক দিনে বিপুল দর্শনার্থীর আকর্ষণও ছিল তারা। গত শুক্রবার কয়েকগুন দর্শনার্থী ঢুকেছে ১৮৭ একরের এই চিড়িয়াখানায়। অন্য সময়ে দিনে গড়ে ১৫ হাজার মানুষ আসে। তবে ছুটির দিনে সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। জলহস্তী দেখছে দর্শনার্থীরা। বৃষ্টির মধ্যেও অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রের চেয়ে আমাদের এখানে ভিড় সব সময় বেশি। ১৩৯ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে দর্শনার্থীদের আকর্ষণের থাকে বাঘ, সিংহ, জিরাফ, জেব্রা, হরিণ, ময়ূর, জলহস্তী, উটপাখি আর বানর। বানরের খাঁচার সামনেই মানুষের অস্বাভাবিক আচরণটা বেশি দেখা যায়। বানরকে বাদাম, কলা, চিপস, কাঁঠাল পাতা ও আম পাতা খাওয়াতে গিয়ে হাতের কাছে পাওয়া প্লাস্টিকের বোতলসহ এটা-সেটা দিয়ে ঢিল মারার প্রবণতা দেখা গেছে। সাপ দেখেও অনেক শিশু খুশি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মতিঝিল থেকে চিড়িয়াখানায় আসা আব্দুল রহমান বলেন, বাঘের গর্জন শুনে আমার ছেলে আবির খুশি। আমি বাঘের গর্জন টেলিভিশনে অনেক শুনেছি কিন্তু সামনা সামনি এই প্রথম শুনলাম এবং দেখলাম। আমার অনেক আনন্দ লাগছে।
জানা গেছে, ২০ আগস্ট সকালে অ্যারাবিয়ান হর্স দুলকির কোলে আসে দোলন। আগের দিন ১৯ আগস্ট রাতে চাঁদনী নামে জেব্রার ঘরে জন্ম নেয় একটি মেয়ে। তার নাম রাখা হয়েছে ঝিলিক। এর দুদিন আগে ১৭ আগস্ট প্রিয়া নামে জিরাফটি জন্ম দেয় একটি মেয়ে সন্তান। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জিরাফ শাবকের নাম দিয়েছে শ্রাবণী। ১৫ মাস গর্ভে ধারণ করার পর প্রিয়া জন্ম দিয়েছে শ্রাবণীকে। এই চার প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে সংখ্যা বেশি এখন জলহস্তী পরিবারে। সুমন্তকে নিয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানায় জলহস্তীর সংখ্যা এখন ১৪টি। এদের মধ্যে পুরুষ ৯টি এবং মেয়ে জলহস্তী ৫টি। সুমন্ত সবার ছোট হলেও ভীষণ চঞ্চল স্বভাবের। জলহস্তীর খাঁচার ভেতর জলাধারে খেলা করছেই তো করছে। একটুও বিশ্রাম নেই। তাই সন্তানকে রেখে সুমন্তের মা আগন্তু পানি থেকে উঠতে পারছে না। আর মায়ের ছায়ায় থেকে সুমন্তও দুধ পান করছে। কোলজুড়ে এসেছে বেশ কটি ফুটফুটে সন্তান। ওদের নামও বৈচিত্র্যময় সুমন্ত, শ্রাবণী, দোলন আর ঝিলিক। সদ্য জন্ম নেওয়া ওরা। তাই বলে সুমন্ত, শ্রাবণী, দোলন আর ঝিলিকেরা চুপটি করে বসে নেই। মায়ের আদরে-আহ্লাদে খুশিতে আটখানা। মায়েরা যেখানে যাচ্ছে, সেখানেই ছুটে চলছে ওরা। আবার সন্তানেরা যেখানে যাচ্ছে, মায়েরাও ওদের আগলে রাখছে। এদিকে মানুষের ভিড় সামলাতে লোকবল বাড়ানোর পাশাপাশি চিড়িয়াখানা জুড়ে ছিল বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
জলহস্তীদের কেয়ারটেকার ন‚রে আলম ইনকিলাবকে বলেন, মিরপুর চিড়িয়াখানা জলহস্তী ডায়ানা আর টিটু ৩০ বছর আগে আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে আসে। ডায়ানা-টিটুর মেয়ে আগন্তু। আগন্তুর বাবা টিটুর বর্তমান ঠিকানা গাজীপুর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। অন্যদিকে আগন্তুর দুরন্ত নামে আরেকটি ছেলে রয়েছে। আর কদিন পর ডায়ানার কোলে আসতে পারে আরেকটি সন্তান।
তিনি বলেন, সুমন্ত ছেলে না মেয়ে, সেটি এখনই বোঝা যাচ্ছে না। আরেকটু বড় হলে সন্তানকে নিয়ে আগন্তু ডাঙায় উঠে আসবে। তখনই জানা যাবে সুমন্তর সম্প‚র্ণ পরিচয়। এখন সুমন্ত মায়ের দুধ পান করবে। টানা ছয় মাস মায়ের দুধ ওর একমাত্র খাবার। ছয় মাস পর অল্পস্বল্প করে ঘাস খেতে দেওয়া হবে। তবে এক বছর বয়স পর্যন্ত জলহস্তীর বাচ্চারা মায়ের দুধ পান করে থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন