শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নারী-শিশুদের অধিকার রক্ষায় বিএনপির কমিটি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ২৪ আগস্ট, ২০১৯

দেশের নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভ‚মিকা পালনের লক্ষ্যে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ শিরোনামে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান এ কথা জানান। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রধান উপদেষ্টা, বেগম সেলিমা রহমানকে আহ্বায়ক ও নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ চন্দ্র রায়কে সদস্য সচিব করে এ কমিটি গঠন করা হয়।

বেগম সেলিমা রহমান বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি রাজনৈতিক সংগঠন। সমাজ উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে গণভিত্তিক রাজনৈতিক দল অঙ্গীকারবদ্ধ। গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ রাজনৈতিক দল সামাজিক অধঃপতনের অরাজক পরিস্থিতির সময় নির্বিকার বসে থাকতে পারে না। খুন-ধর্ষণের পৈশাচিক বিকৃতি আমাদের রাষ্ট্র সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাষ্ট্র সমাজের সর্বত্র ঘৃণা ছড়ানোর ফলে ক্ষমতাঘনিষ্ঠ সমাজবিরোধীরা আশকারা পাচ্ছে। দেশব্যাপী ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের পরিস্থিতি জনমনে গভীর উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে।

তিনি বলেন, ধর্ষণ ও ধর্ষণ প্রচেষ্টার কারণে শিশু হত্যার ঘটনা এখন সংবাদপত্রের উল্লেখযোগ্য সংবাদ। অভিভাবকরা মেয়ে ও শিশুসন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আইনের প্রয়োগ নেই বলেই সমাজবিরোধীরা ধর্ষণ-নিপীড়নে উৎসাহিত হচ্ছে। আইনের শাসনের অভাবে মাদকের বিস্তার এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়সহ বিভিন্ন কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন বাড়ছে। আমরা মনে করি, এই কারণগুলো সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে।
অনাচারমূলক দুঃশাসনে জবাবদিহিতার অভাবের কারণেই নারী ও শিশু নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে বেগম সেলিমা রহমান বলেন, বিদ্যমান গণতন্ত্রশূন্য দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। নব্য ফ্যাসিবাদী শাসনে একদিকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই, আবার অন্যদিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত নারী ও শিশুরা দুর্বৃত্তদের লালসার শিকার হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলেই নারী ও শিশু নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। কারণ, অধিকাংশ নির্যাতনকারী সরকারি দলের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এ কারণে এ ধরনের জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত থাকার পরও তাদের কেশাগ্রও কেউ স্পর্শ করতে পারছে না। এরা আইনের আওতার বাইরে থাকছে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, প্রিয় বাংলাদেশ আজ পরিণত হয়েছে ধর্ষণের লীলাভ‚মিতে। কিছু বিকৃত মানুষের লালসার শিকার নারী ও শিশুরা। ৯ মাস বয়স থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধা- কেউ ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছে না। এমনকি রেহাই পাচ্ছেন না বাকপ্রতিবন্ধী বা ভবঘুরে পাগলও। রাস্তাঘাট, বাস বা ট্রেন, স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, হাসপাতাল, এমনকি পুলিশ স্টেশন কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়। স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে নারীকে ধর্ষণ, পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে নির্মম কায়দায় শিশু হত্যা, পাশবিক নির্যাতনের পর নারীকে পুড়িয়ে কয়লা করে দেয়া- এভাবে নানা অভিনব কায়দায় ধর্ষক লম্পটের হিংস্র থাবা সর্বত্র বিরাজমান।

সেলিমা রহমান বলেন, সুবর্ণচরের পারুল, ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি, খুলনায় পুলিশ কাস্টডিতে রাতভর নারীর ওপর গণধর্ষণ চালানোর পর মিথ্যা ও সাজানো মাদক মামলা দিয়ে কোর্টে চালান দেয়া, সিরাজগঞ্জের মেয়ে কলেজছাত্রী রুপাকে টাঙ্গাইলের কাছে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করে হত্যা, কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী রিশাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, ইবনে সিনা হাসপাতালের নার্স তানিয়া বাড়ি যাওয়ার পথে কিশোরগঞ্জের বাসে গণধর্ষণ করার পর হত্যা, এভাবে বর্তমান সরকারের আমলে জিম-মিম-তনু-মিতু-খাদিজাদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে। শুধু গত ছয় মাসেই ৪৯৬ জন্য কন্যাশিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, এদের মধ্যে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে ২৩ জনকে। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দেশের নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে আমরা ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’-এর জাতীয় কমিটি গঠন করেছি।

তিনি বলেন, বর্তমান ভয়াবহ অনাচার-দুরাচারের বিরুদ্ধে এটি আমাদের একটি সামাজিক আন্দোলন। নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে- নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার যাবতীয় কার্যক্রমকে শক্তিশালী এবং বেগবান করা। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ নারী ও শিশু, এই জনগোষ্ঠীর জীবন সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধকতাপূর্ণ, এদের মধ্যে যারা ভিকটিম হচ্ছেন তাদেরকে আইনগত ও চিকিৎসাগত সহায়তা দেয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। বিশেষভাবে দুস্থ ভিকটিমদের শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসাসহ সম্ভাব্য আইনগত সহায়তা প্রদান করা। ভিকটিম নারী ও শিশুদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখা। ‘নারীকে নির্যাতন করা অন্যায়’ এটি পরিবার থেকে শিশুকে শেখানো। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন নারী শিক্ষা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল এবং এখন এই কমিটির লক্ষ্য নারীর বর্তমান অবস্থা থেকে আরো বেশি ক্ষমতায়নে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দান। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতন যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করা। যেকোনো গণমাধ্যমে আলাপচারিতা ও পারস্পারিক কথাবার্তায় যাতে নারীবিদ্বেষী বক্তব্য প্রচার না পায়, সেক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগ গড়ে তোলা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের আহ্বায়ক আফরোজা আব্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, অ্যাডভোকেট নিপুণ চন্দ্র রায় প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন