ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম খানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে বরখাস্ত করে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে আদেশ জারি করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনা মোহাম্মদ ইব্রাহিম খানকে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ১২(১) অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি পুলিশ অধিদফতরে সংযুক্ত থাকবেন এবং প্রচলিত বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। বিধি ১২(১) অনুযায়ী যদি কোনো কর্মচারী ‘অসদাচরণের দায়ে দোষী হন; অথবা পলায়নের দায়ে দোষী হন; অথবা দুর্নীতিপরায়ণ হন, অথবা নিম্নবর্ণিত কারণে দুর্নীতিপরায়ণ বলিয়া যুক্তিসঙ্গতভাবে বিবেচিত হন- তিনি বা তাহার উরর নির্ভরশীল অথবা অন্য যে কোনো ব্যক্তি তাহার মাধ্যমে বা তাহার পক্ষে যদি তাহার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো অর্থ-সম্পদ বা অন্য কোনো সম্পত্তির (যাহার যুক্তিসঙ্গত হিসাব দিতে তিনি অক্ষম) অধিকারী হন, অথবা তিনি প্রকাশ্য আয়ের সহিত সঙ্গতিবিহীন জীবন-যাপন করেন; অথবা তাহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি পরায়ণতার অব্যাহত কুখ্যাতি থাকে; তবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা যাবে।
ডিসি ইব্রাহিমের বরখান্তের নেপথ্যে
কোনো কারণ উল্লেখ না করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইব্রাহিম খানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি দখল, দখলে সহযোগিতা, দায়িত্বে অবহেলা ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত শহীদ একেএম সামসুল হক খানের পরিবারের নামে বরাদ্দ দেয়া পুরান ঢাকার নবাবপুরের একটি সরকারি জমি ২০১৮ সালে জবরদখল ও ভবন ভেঙ্গে ফেলে ভূমি দস্যু ও সন্ত্রাসীরা। এ বিষয়ে বংশাল থানা ও জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে পরিবারটি। জমি ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করেন তারা। তাদের সম্পত্তির দাম ছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা।
সূত্র আরও জানায়, শহীদ সামসুল হক খানকে ২০১০ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেয় সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে সামসুল হক খানের মা মাসুদা খানকে ঢাকার নবাবপুর রোডের ২২১ নম্বর হোল্ডিংয়ে চার কাঠার প্লটটি ইজারা দেন। পরে তার উত্তরসূরি হিসেবে তার ছেলে আজহারুল হক খানকে ওই জমি হস্তান্তর করেন। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই জমিতে মাসুদা কর্পোরেশন ও এসএইচকে কর্পোরেশন নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। স্থানীয় শেখ জাবেদ উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীসহ কয়েকজন ওই জমি আর বাড়ি দখলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন। এ ব্যাপারে থানায় একাধিকবার জিডিও করা হয়েছে। সর্বশেষ ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাবেদ উদ্দিনের লোকজন জমি দখল করে প্রায় ৫ কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনার পরদিনই তারা এ বিষয়ে বংশাল থানায় মামলা করেন। কিন্তু থানা পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পুলিশের আইজি ও লালবাগ জোনের তৎকালীন ডিসি ইব্রাহিম খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এতে কোনো কাজ হয়নি। পরে এ ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরে ডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে পরিবারটি। অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি করে পুলিশ সদর দফতর।
সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি ডিসি ইব্রাহিম খানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, তদন্তে অসহযোগিতা ও দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পায়। তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছরের ২৩ মে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-১) আমিনুল ইসলাম তাকে একটি চিঠি দিয়ে এসব অপরাধের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান।
চিঠিতে বলা হয়, ভুক্তভোগীর এসব অভিযোগ শুনেও ডিসি ইব্রাহিম বংশাল থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে কোন নির্দেশনা দেননি বা নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। পুলিশ সদর দফতরের ডিসি যে তদারকি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, সেটা তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করে জমা দিয়ে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এ ছাড়াও তিনি দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য ডিসি ইব্রাহিমকে ১০ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়। তার ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার সুপারিশ করে সদর দফতর। অবশেষে সোমবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রাথমিকভাবে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ডিসি ইব্রাহিম খানকে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরো বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে পুলিশ সদর দফতরে, যা তদন্ত করা হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন