আগস্ট মানে বাঙালির শোকের মাস, বেদনার মাস। বছর ঘুরে আবার এসেছে বাঙালি জাতির ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা শোকাবহ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর অজেয় আদর্শ, তার মহান আত্মত্যাগ এবং তার যোগ্য উত্তরসূরির অকুতোভয় সংগ্রামের ফলে বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধুর রচিত পথ ধরেই বিশ্বসভায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু চেতনার বাতিঘর হয়ে বেচে থাকবেন যতদিন এই পৃথিবী থাকবে। বাঙ্গালী অনুপ্রেরনার উৎস হয়ে তিনি থাকবেন সারজীবন এ আমার বিশ্বাস। তিনি চিরঞ্জীব হয়ে আমাদের মাঝে থাকবেন সূর্যের মত দেদীপ্যমান।
শোকের মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে এভাবে স্মরণ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ আয়োজিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এইমাত্র আমরা বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত জাতিসংঘের ভাষনটি শুনলাম। সেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন হুমকীর কথা উল্লেখ করেছেন। যে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকীর বিষয়টি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচ্য বিষয় যা তিনি এত বছর আগে উল্লেখ করে গিয়েছেন। তিনি ছিলেন প্রসাশনিক ও রাজনৈতিভাবে অত্যন্ত দক্ষ ও সুদূর প্রসারী। আমার জীবনের অনেক বড় একটি প্রাপ্তি হচ্ছে আমি চারবার এই মহান নেতার সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পেয়েছিলাম, কিছু নির্দেশনা পেয়েছিলাম। তিনি দেশ পরিচালনার জন্য স্বল্প সময়ে যে যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছিলেন তা এখনো অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং ভবিষ্যতেও এর প্রয়োজনীয়তা ফুরাবেনা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, অতি অল্প দিনে আমাদেরকে দিয়েছেন একটি সংবিধান যেখানে সবকিছু রয়েছে। আমাদের আগামীর পরিকল্পনা, শহর গ্রামের ভেদাভেদ থাকবেনা, ধনী দরিদ্রের ভেদাভেদ থাকবেনা, উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সকল শ্রেনীকে সম্পৃক্ত করতে হবে, যাদের জন্য উন্নয়ন তারা যেন বঞ্চিত না হয় তাদেরকে সম্পৃক্ত করেই উন্নয়ন পরিচালনা করতে হবে- এই ধরনের সকল নির্দেশনা। যারা তাকে হত্যা করেছিল তারা ভেবেছিল তারা বাঙ্গালীর মন থেকে বঙ্গন্ধুকে মুছে দিবে। কিন্তু তারা ভুল করেছিল কারন তারা বুঝতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর মত নেতাকে মুছে দেওয়া যায়না। যতদিন এ পৃথিবী থাকবে, যতদিন সূর্য উঠবে ততদিন তিনি থাকবেন সূর্যের মত দেদীপ্যমান।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমেরিকার মায়েরা তাদের সন্তানদের কোলে নিয়ে বলে বাবা তুমি বড় হয়ে জর্জ ওয়াশিংটন হবে, দক্ষিণ আফ্রিকার মায়েরা বলে বাবা তুমি বড় হয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা হবে কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের মায়েরা বলতে পারেনা যে তুমি বড় হয়ে বঙ্গবন্ধু হবে। কারন কিছু কুচক্রিরা আমাদেরকে সেই জায়গাটাতে পৌছাতে দেয়নি। কিন্তু তারা জানেনা জাতির জনককে কখন জাতির কাছ থেকে দূরে রাখা যায়না, বঙ্গবন্ধুকে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবেনা। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নাই। বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন গগ্রক রূপকথার সেই ফিনিক্স পাখির মতো। ফিনিক্স পাখিরা মরে না। একটি ফিনিক্স পাখি যখন হাজার বছরের কাছাকাছি চলে আসে, তখন সে নিজে একটা ঘর বাঁধে। ঘর বেঁধে সে তার ঘরে ঢুকে যায়। পরে নিজের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়, আগুনে সে আত্মহুতি দেয়। ওখান থেকে যে ছাই-ভস্ম হয়, তা থেকে আরেকটি ফিনিক্স পাখির জন্ম হয়। এভাবে চলতে থাকে। এ জন্য বলা হয়, ফিনিক্স পাখিদের কখনও মৃত্যু হয় না। আসুন, আমরা জাতির জনক হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করি। তার ত্যাগ এবং তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ ধারণ করে সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। প্রতিষ্ঠা করি জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন