ইনকিলাব রিপোর্ট : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানের প্রথম দিনে গতকাল শুক্রবার সারাদেশে সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী। এই অভিযান চলবে আরও ছয়দিন। বিএনপির অভিযোগ, তাদের নেতাকর্মীদের বেছে বেছে আটক করছে পুলিশ। একই সাথে দেশের কোনো কোনো স্থানে গ্রেফতার নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। গণহারের আটকের বিরোধিতা করে বিএনপি ইতিমধ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাঁড়াশি অভিযানের নাম বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদের হয়রানি করছে পুলিশ। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
দেশের চট্টগ্রাম, খুলনা, কিশোরগঞ্জ, মাগুরা, রাজশাহী, যশোর, বাগেরহাট, গাইবান্ধা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, বরিশাল, দিনাজপুর, রংপুরসহ বিভিন্নাঞ্চল থেকে এই আটকের খবর পাওয়া গেছে।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে একই কায়দায় ৪৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে মোট ৪৮ জন নিহত হন। গত আড়াই মাসে খুন হয়েছে ১১ জন। প্রতিটি হত্যাকা-ের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছেÑ এর সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন জড়িত। কেউ বলেছেন, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে এই হত্যাকা- সংঘটিত হচ্ছে। সর্বশেষ চট্টগ্রামের জিইসি মোড়সংলগ্ন মিষ্টির দোকান ওয়েল ফুডের সামনে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে প্রথমে ছুরি মেরে, পরে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যান দুর্বৃত্তরা। এরপরই নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ বলপ্রয়োগ ও বিশেষ পদ্ধতি গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে এক জরুরী বৈঠকে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত চার দিনে সারাদেশে র্যাব-পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে
খুলনায় ১০২ জন গ্রেফতার
খুলনা ব্যুরো : জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ধরতে বিশেষ অভিযানের প্রথম রাতে খুলনায় ১০২ জন গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে জামায়াত নেতা, সাজাপ্রাপ্ত, পরোয়ানা, নিয়মিত মামলার আসামি, মাদক বিক্রেতা ও চাঁদাবাজ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
খুলনা জেলা পুলিশ জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় খুলনার নয় থানায় গ্রেফতার হয়েছে ৭১জন। এরমধ্যে ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি নেছার সরদার ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীসহ পাঁচ জন রয়েছেন। কয়রা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে জামায়াতের আরো ৩জন নেতাকর্মীকে।
খুলনা মেট্রাপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান মিঠু জানিয়েছেন, খুলনা মহানগরীর আট থানা এলাকা থেকে গত ২৪ ঘন্টায় গ্রেফতার হয়েছে ৩১জন। তবে এর মধ্যে অস্ত্র বা তালিকাভুক্ত জঙ্গী-সন্ত্রাসী নেই।
রাজশাহীতে আটক ৩০
রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের বিশেষ অভিযানে ৩০ জনকে আটক করেছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত নগরীর চার থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, রাতে আরএমপির চার থানা পুলিশ ও মহানগর ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। এরা সবাই বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী এবং মাদকসেবী।
বরিশালে গ্রেফতার ২৯
বরিশাল ব্যুরো : বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে গতকাল (শুক্রবার) বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বরিশাল জেলায় ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার এস এম আকতারুজ্জামান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) মুখপাত্র রাসেল আহম্মেদ জানান, মহানগরীর ৪ থানায় শুক্রবার রাত থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার এসএম আকতারুজ্জামান জানান, জেলা পুলিশের অধীন ১০ থানায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিশেষ অভিযানে গতকাল বিকাল পর্যন্ত জেলায় গ্রেফতার হওয়া ২৯ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গৌরনদী থানায় নাশকতা মামলার আসামী মিজান সরদার এবং বাকেরগঞ্জ থানার তালিকাভুক্ত ডাকাত সরোয়ার জামান। তবে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কেউ চিহ্নিত জঙ্গী বা ধর্মীয় সন্ত্রাসী নেই।
নোয়াখালীতে আটক ৭
নোয়াখালী ব্যুরো : সপ্তাহব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানের প্রথম দিনে নোয়াখালীতে জামায়াত-শিবিরের কর্মীসহ ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
জেলা পুলিশ কন্ট্রোলরুম সূত্রে জানা গেছে, আটককৃতদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের দুই কর্মী ও অন্যান্য মামলার সাজাপ্রাপ্ত ৫ আসামী রয়েছে।
সিলেটে গ্রেপ্তার ১০
সিলেট অফিস : সিলেট মহানগরীতে রাতভর সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ১০ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৭ জনকে মহানগর উত্তর ও বাকি ৩ জন আসামিকে মহানগর দক্ষিণ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার সিলেট মহানগর পুলিশের কন্ট্রল রুম থেকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত ১০ জন আমামির মধ্যে ৯ জন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল। এছাড়াও বাকি আরেকজন আসামির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নেত্রকোনায় জামায়াত নেতাসহ
আটক ৮
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা : সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের প্রথম দিনে নেত্রকোনা জেলা পুলিশ বিভিন্ন উপজেলায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৮ জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীকে আটক করেছে।
সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযানে চালিয়ে সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর নজরুল ইসলাম মাস্টার, দুর্গাপুরে উপজেলার আমীর গোলাম রব্বানী, কেন্দুয়া উপজেলার আমীর আতাউর রহমান, মদন উপজেলার সাবেক আমীর মাওলানা রহুল আমীন, বারহাট্টায় জামায়াত কর্মী মোঃ আবুল কাশেম, কলমাকান্দায় শিবির কর্মী শিপুসহ মোহনগঞ্জ ও আটপাড়া উপজেলায় আরো দুই জামায়াত শিবির কর্মীকে আটক করা হয়।
নওগাঁয় ১১৪ জন গ্রেফতার
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : নওগাঁয় বিশেষ অভিযানে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ১১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার মোঃ মোজাজম্মেল হক জানান, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে জেলার যেন কোন প্রকার চাাঁবাজী না হয়, জনগনের জান মাল ও আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে এই অভিযান চালানো হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ২৯ জন, মান্দায় ১১ জন, মহাদেবপুরে ৭ জন, নিয়ামতপুরে ৭ জন, পোরশায় ২ জন, সাপাহারে ৬ জন, রানীনগরে ১২ জন, আত্রাই ১০ জন, বদলগাছী ৮ জন, পতœীতলায় ১২ জন ও ধামুইরহাটে ১০জন সহ মোট ১১৪ জনকে আটক করে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন