বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আটক দুই শতাধিক - গুলিস্তানে পুলিশ হকার ও ব্যবসায়ীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ

প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পুলিশ কর্মকর্তাসহ আহত ৩০ : অগ্নিসংযোগ টিয়ারসেল জলকামান রাবার বুলেট আর ইট-পাটকেল নিক্ষেপে এলাকা রণক্ষেত্র
স্টাফ রিপোর্টার : ফুটপাত দখলমুক্ত করার ইস্যু নিয়ে রাজধানীর গুলিস্তানে ব্যবসায়ী ও হকারদের মধ্যে ফের সংষর্ষ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার কয়েক ঘণ্টার এ সংঘর্ষে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনারসহ অন্ততঃ ৩০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ জলকামান, রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিস্তান এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ডিএমপি পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, যারা এই জন নিরাপত্তায় বিঘœ ঘটাচ্ছে, তাদের এক বিন্দুও ছাড় দেয়া হবে না।
পুলিশ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের বারান্দা ও সামনের ফুটপাত দখল করে পসরা সাজিয়ে বসে ভাসমান হকাররা। এ কারণে ট্রেড সেন্টারে ক্রেতাদের আসা যাওয়ায় বিঘœ ঘটে। সেন্টারের দোকান মালিকরা যে কারণে হকারদের বসতে দিতে রাজি নন। অপরপক্ষে হকাররা ছোট পরিসরে হলেও পসরা নিয়ে বসার দাবি জানান। দু’পক্ষের এ পাল্টাপাল্টি মনোভাবের মধ্যেই সম্প্রতি গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত হকারদের উচ্ছেদ করে নির্বিঘেœ চলার উপযোগী করে পুলিশ। উচ্ছেদের পর গত বৃহস্পতিবার গুলিস্তান এলাকা পরিদর্শন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি চলে যাবার পরই ট্রেড সেন্টারের ব্যবসায়ী ও হকারদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও সেখানে বিরাজ করছিলো থমথমে পরিবেশ।
এহেন পরিস্থিতিতে ঢাকা ট্রেড সেন্টারের দোকান মালিক ও হকার নেতৃবৃন্দ গতকাল শুক্রবার সকালে আলোচনায় বসেন। থমথমে পরিস্থিতির মধেই গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নিতে থাকেন হাকাররা। অপরদিকে স্থানীয় বিপণি বিতানের ব্যবসায়ীরাও তাদের দোকানে যেতে শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ। দু’পক্ষের লাঠি সোটা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। উভয়পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পুলিশের টিয়ারসেল এবং হকারদের চৌকি ও অন্যান্য সামগ্রীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উভয়পক্ষই রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর চালায়। হকারদের পণ্যবিক্রির চৌকিসহ তাদের পণ্যে আগুন দেয় ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে মার্কেটে ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা চালায় হকাররা। এসময় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারসহ পুরো গুলিস্তান এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করায় পুলিশ, হকার ও ব্যবসায়ীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরই মধ্যে সংঘর্ষকালে ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হন মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন। তাকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পুলিশের এ কর্মকর্তার বাম চোখের উপর ইটের আঘাত লেগেছে। এছাড়া সেখানে আরো বেশ কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বেলা ২টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে দুইপক্ষকে রাস্তা হটিয়ে দেয়।
পল্টন থানার ওসি মোরশেদ আলম জানান, সংঘর্ষের পর ওই এলাকা থেকে দুশ’জনের মতো আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে হকার ও দোকান কর্মচারী- দুইপক্ষের লোকজনই আছে। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এডিসি মো. তারেক বিন রশিদ জানান, আটকদের যাচাই-বাছাই করে যারা দোষী, তাদের বৃহস্পতিবার হওয়া দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে দুপুরে ঘটনাস্থলে যান ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যারা এই অপরাধের সাথে জড়িত হয়েছে, যারা আত্মঘাতী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, যারা এই জননিরাপত্তায় বিঘœ ঘটাচ্ছে, তাদের এক বিন্দুও ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, এই রাস্তাগুলোতে হকাররা বসেছিল। আমরা ও সিটি করপোরেশন মিলে এটা উচ্ছেদ করেছি জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে। এখন তারা (হকার) যদি গোলমাল করে, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেব। মামলা হবে, গ্রেফতার হবে। যে আইন ভাঙবে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। গতকালের এ ঘটনায় পল্টন থানায় আরো একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান স্থানীয় থানার ডিউটি অফিসার। সংঘর্ষ থামলেও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনের অংশে যান চালাচল বন্ধ রয়েছে। সেখানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ছিলো। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন