মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে আবারো প্রতারণার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে অস্ত্রের মুখে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা ‘এনভিসি’ নামের কার্ড নিতে বাধ্য করছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নিয়ে জোর করে সেই বিদেশী চিহ্নিত ‹এনভিসি› কার্ড দিয়ে আবারো নিপীড়ন করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় শঙ্কিত রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন বিমুুখ বলে জানা গেছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মিয়ানমার সরকার জোরপ‚র্বক রোহিঙ্গাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) নামের ওই পরিচয়পত্র গছিয়ে দিয়ে তাদেরকে বিদেশি হিসেবেই রাখার চেষ্টা করছে। এর অর্থ হাজার বছরের জন্মভ‚মি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করার শামিল বলেই মনে করা হচ্ছে। ‹ফাইভ স্টার গ্রুপ› নামের একটি মানবাধিকার গোষ্ঠীর বরাতে মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই মানবাধিকার গোষ্ঠীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ বলেন, কার্যকরভাবে মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের কার্যকরভাবে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ওই পরিচয় পত্রে। জোর করে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে মিয়ানমার সরকার প্রকৃতপক্ষে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন ও জোরপ‚র্বক নাগরিক স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে আসছে। মিয়ানমার সরকারের মনোভাবের কোন পরিবর্তন হয়নি। তারা আরো বলেন, হাজার বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারের নাগরিক হলেও তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বহিরাগত আখ্যা দিয়ে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রদান থেকে বিরত রাখা নিপীড়ন তো বটেই। এটি একটি জাতি গোষ্ঠীর নিধন প্রক্রিয়ার শামিল বলেও তারা মন্তব্য করেন ।
মিয়ানমার সরকার গণহত্যা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের নির্ম‚ল করতে চাইলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে আরাকান অঞ্চলের রোহিঙ্গারা দলে দলে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গা সংখ্যা এখন ১২ লাখেরও বেশি। মিয়ানমারের বিশাল এ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। চাপে পড়ে ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার রাজি হলেও তাদের আরোপিত কঠিন শর্তে রোহিঙ্গারা সেখানে আবারো নির্যাতিত হবেনা এমন আস্থা আনতে পারছেনা। এতে করে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে রাজি না হওয়ায় দু’দফায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভন্ডুল হয়ে যায়।
মিয়ানমার সরকারের সে নির্যাতনের কথা জানতে পেরে রোহিঙ্গাদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাই তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে পাঁচ দফা দাবি জুড়ে দেয়। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে তারা এনভিসি কার্ড নেবেনা, সেখানে গিয়ে ক্যাম্পে থাকবেনা, তাদের সহায় সম্পদ ও ভিটে বাড়ি ফেরত দিতে হবে, তাদের ওপর নির্যাতনের বিচার করতে হবে এবং তাদের নাগরিক স্বাধীনতা দিতে হবে। এসব দাবি সামনে রেখে রোহিঙ্গারা গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা নির্যাতনের দ্বিতীয় বর্ষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সমাবেশ করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এতে তারা বলেছে, তারা বাংলাদেশে খুশিতে আসেনি। মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে তারা বাংলাদেশে এসেছে। তারা বাংলাদেশে থাকতে চায় না। তাদের স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা আবারো নির্যাতিত হবে না বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাধ্যমে তার নিশ্চয়তা চায় তারা।
ওই মানবাধিকার গোষ্ঠী তাদের বিবৃতিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল তুন তুন নাই এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তিনি আরও বলেছেন যে, কাউকে বন্দুকের মুখে বা নির্যাতনের মাধ্যমে পরিচয় পত্র নিতে বাধ্য করা হচ্ছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন