বঙ্গোপসাগরের মেঘমালা শুষে নিচ্ছে পশ্চিমা লঘুচাপ
ভাদ্র মাসের তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। অথচ স্বাভাবিক বৃষ্টিটুকু নেই। বরং প্রায় দেশজুড়ে চলছে অকাল খরা-অনাবৃষ্টি-তাপদাহ। বিদঘুটে খটখটে রুক্ষ আবহাওয়ায় বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। পানির উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। বর্ষার মৌসুম শেষ হতে না হতেই দেশে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট তীব্র। গেল আগস্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) মাসে সারাদেশে গড় বৃষ্টিপাত হয় স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় চার ভাগের এক ভাগ কম। দেশের কোনো কোনো জেলায় বৃষ্টি ঝরেছে স্বাভাবিক হার ও পরিমানের চেয়ে অর্ধেকেরও নিচে। এ মাসে স্বাভাবিক বর্ষণের পূর্বাভাস থাকলেও তার আলামত নেই।
টানা তপ্ত আবহাওয়া বঙ্গোপসাগরের বুকে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াস সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে এমনটি শঙ্কা বিশেষজ্ঞ মহলের। গত এপ্রিল মাস থেকে ‘এল-নিনো’ অবস্থার প্রভাবে খরা-তাপদাহ, অনাবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যার প্রকোপ রয়েছে বাংলাদেশসহ এ উপমাহাদেশ-জুড়ে। জনস্বাস্থ্যেও ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনায় কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। দেশের অন্যান্য স্থানে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি পড়েছে। শ্রীমঙ্গলে ৩২, নেত্রকোনায় ২১, যশোর ও ভোলায় ১১ মিলিমিটার ছাড়া গতকাল সারাদিনে তেমন কোনো বৃষ্টির রেকর্ড নেই। আবহাওয়া পূর্বাভাস মতে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উল্লেখযোগ্য বর্ষণের সম্ভাবনা নেই।
এদিকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন ওডিশা উপকূলের কাছে সৃষ্ট লঘুচাপটি বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসেনি। এটি ভারতের ওডিশার দিকে অবস্থান করছে। পশ্চিমা এই লঘুচাপটি বঙ্গোপসাগরের মেঘমালা শুষে নিচ্ছে। গত মাসেও একে একে চারটি লঘুচাপ থেকে বৃষ্টি আসেনি। উল্টো আবহাওয়াকে আরো খরতপ্ত করে তুলেছে। অব্যাহত রয়েছে অনাবৃষ্টি ও তাপদাহ।
অনাবৃষ্টির সঙ্গে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমান অত্যধিক বেশি থাকায় তীব্র গরম ও ঘামে নাকাল অবস্থা বিরাজ করছে। গতকাল ঢাকায় বাতাসে জলীয়বাষ্পের হার ছিল সকালে ৯৪ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৬৮ শতাংশ। এতে করে শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশি। বৈরী আবহাওয়ায় সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়েছে। হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর ভিড় অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে ৩৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩৩.৮ এবং সর্বনিম্ন ২৭.৪ ডিগ্রি সে.।
আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং অন্যান্য বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বন্দরে ৩ নম্বর সঙ্কেত
আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে ওডিশা উপকূল এবং সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র বন্দরসূমহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন