গাজীপুরে ৮৬ জন গ্রেফতার পিস্তল ও গুলি উদ্ধার
গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৬টি থানা এলাকা থেকে ৮৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় একটি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। গতকাল রোববার সকালে গাজীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানকালে জয়দেবপুর থানা এলাকা থেকে ৩১, টঙ্গী থানায় ১৪, কালিয়াকৈর থানায় ১১, শ্রীপুর থানায় ০৯, কাপাসিয়া থানায় ১৩ ও কালীগঞ্জ থানা এলাকা থেকে ০৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
রংপুরে এক জেএমবিসহ ৯৬ জন গ্রেফতার
রংপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, রংপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে এক জেএমবিসহ ৯৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত আট উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বিভিন্ন মামলার চার্জশিটভুক্ত এ আসামি রয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কাউনিয়া উপজেলার জাহিদুল ইসলাম নামে এক জেএমবি সদস্য রয়েছে।
ভালুকায় আটক- ৩
ভালুকা (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, দেশব্যাপী চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে ভালুকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩ জনকে আটক করেছে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ। শনিবার রাতে উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের জীবনতলা ও কাশড় গ্রাম থেকে এবং অপরজনকে পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ড থেকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হচ্ছে জীবনতলা গ্রামের রফিকুল ইসলা, (৫৫), কাশর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ও ভান্ডাব এলাকার শহিদুল ইসলাম।
ল²ীপুরে আটক ১২৬
ল²ীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ল²ীপুরে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে ৭২ ঘন্টায় ১২৬ জনকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ল²ীপুর সদর, চন্দ্রগঞ্জ, রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তদের আটক করা হয়।
প্রথমদিন বৃহস্পতিবার ৫৬, দ্বিতীয়দিন শুক্রবার ৩৩ এবং তৃতীয়দিন শনিবার ৩৭ জনসহ মোট ১২৬ জনকে আটক করা হয়। ল²ীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ শরীফুল ইসলাম জানান, আটককৃতরা সবাই বিভিন্ন মামলার সাজাপ্রাপ্ত এবং গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি।
পঞ্চগড়ে ৪দিনে ৯৩ জনগ্রেফতার
পঞ্চগড় জেলা সংবাদাতা জানান, জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মোঃ আবু বক্করকে সদর উপজেলার জগদলের খালপাড়া হতে আটক করেছে। পঞ্চগড় থানার অফিসার ইনচাজ মোঃ মমিনুল ইসলাম জানান, এর সাথে অপর একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি তাৎক্ষণিক ভাবে তার নাম জানাতে পারেনি। এছাড়াও পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে নিষিদ্ধ সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য সন্দেহে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে খুটামারী এলাকায় বিশেষ অভিযানে পুলিশ তাদের আটক করে। এরা হলেন- উপজেলা সদরের খুটামারী ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মোফাজ্জলের ছেলে আবু বকর সিদ্দিক (২৯) এবং কামাতপাড়া গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে আয়নাল হক (৩০)। এছাড়া শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তিন শিবিরকর্মীসহ আরও ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের বিরুদ্ধে নাশকতা চেষ্টাসহ নানা অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
ঝিনাইদহে ৩৬ জন আটক
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে কথিত এক জেএমবি ও ১১ জামায়াত কর্মীসহ ৩৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযানকালে সদর উপজেলার চাপড়ি গ্রাম থেকে ১টি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। শনিবার রাত ১২টার পর থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ কন্ট্রোল রুম সুত্রে জানা গেছে, আটককৃতদের মধ্যে সদর উপজেলা থেকে ৮ জন, কালীগঞ্জ থেকে ৭ জন, মহেশপুর থেকে ৭ জন, কোটচাঁদপুর থেকে ৬ জন, হরিণাকুন্ডু থেকে ৫ জন ও শৈলকুপা উপজেলা থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৬ জনকে আটক করা হয়ছে। এদের মধ্যে জেএমবি সদস্য ১ জন, জামায়াতের ১১জন ও বিভিন্ন মামলায় ২২ জন রয়েছে।
বালিয়াকান্দিতে ৫জন গ্রেফতার
বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সারা দেশে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ অভিযানের অংশ হিসাবে শনিবার রাতে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদকসহ ৫জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, জামালপুর ইউনিয়নের খালকুলা গ্রামের তছিমদ্দিন মোল্যার ছেলে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য আঃ লতিফ মোল্যা, স্বর্পবেতেঙ্গা গ্রামের জব্বার সরদারের ছেলে হানিফ সরদার ওরফে সাবু, নারুয়া ইউনিয়নের বিলধামু গ্রামের দিয়ানত খানের ছেলে জিয়া খান, বাকসাডাঙ্গী গ্রামের হাতেম মন্ডলের ছেলে ব্যবসায়ী রেজাউল মন্ডল ও একই গ্রামের বক্তার মোল্যার ছেলে সেলিম ওরফে সাবু মোল্যা। গ্রেফতারকৃতদেরকে রবিবার সকালে রাজবাড়ী আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ফুলবাড়িয়ায় জামায়াত নেতা গ্রেফতার
ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ফুলবাড়িয়া সদরের আলহেরা একাডেমিক মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামায়াত নেতা আ. মোতালেব মাস্টারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশ তার কাছ থেকে জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাÐ নিয়ে বিভিন্ন বইসহ সরকার বিরোধী লিফলেট উদ্ধার করে। ফুলবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ রিফাত খান রাজিব জানায়, জামায়াত নেতা মোতালেব মাস্টার গাজিপুরের টঙ্গী এলাকার ৫/৭ জন অপরিচিত লোকজন নিয়ে পৌর সদরের নিজ বাসায় সরকারবিরোধী কর্মকাÐ ও নাশকতার পরিকল্পনা করার সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। গতকাল রোববার পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দিয়ে তাকে আদালতে প্রেরণ করেছে।
বিশেষ অভিযানে
চৌদ্দগ্রামে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ৩
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কনকাপৈত ইউপির জামায়াত সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন মজুমদারসহ ওয়ারেন্টভুক্ত তিন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটককৃত অপর দুইজন হলো; ঘোলপাশা ইউনিয়নের আমানগন্ডা গ্রামের মৃত আলী মিয়ার পুত্র নুরুল ইসলাম(৫০) ও চিওড়া ইউনিয়নের শফিকুর রহমানের পুত্র জাফর আহমেদ (৩৪)। শনিবার বিকেল থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, আটককৃতদেরকে রোববার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
রাজশাহীতে আটক ১৫০
রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহীতে জঙ্গি দমনে পুলিশের অভিযানে জেএমবি ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীসহ ১৫০ জনকে আটক করেছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত জেলা ও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়। রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক (ডিএসবি) শরীফুল ইসলাম জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দু’দিন অভিযান চালিয়ে ৯০ জনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে তিনজন জেএমবি সদস্য ও নয়জন ছাত্রশিবির নেতাকর্মী রয়েছে। মহানগরীর চার থানা এলাকায় ৬০ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চার ছাত্রশিবির নেতাকর্মীসহ এক জেএমবি সদস্য। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুরে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয় বলে জানান নগর পুলিশের মুখপাত্র ও রাজপাড়া জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) ইফতে খায়ের আলম।
এদিকে পুলিশের নির্বিচার গ্রেফতার অভিযান শুরু হওয়ায় আতংকিত বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তারা অভিযোগ করে বলেছেন সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় বিভিন্ন মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের অনেকেই জামিনে বেরিয়ে আসে। তাদের বাড়িতেও পুলিশ হানাদিয়ে আটক করছে। আটককৃতদের অনেক পরিবারের সদস্যদের আ’লীগ নেতাদের বাসার সামনে ধর্ণা দিতে দেখা যায়। কোর্ট চত্বরে বেড়েছে ভীড়। রমজান মাসে কোন কারণ ছাড়াই এমন গণগ্রেফতারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আটককৃতদের স্বজনরা।
যশোরে আটক ৮৪
যশোর ব্যুরো জানায়, যশোরের বিভিন্নস্থানে শনিবার সন্ধ্যার পর হতে রোববার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে জামায়াত ১৫ জন, শিবির ০৩ জন ও বিএনপি ০৪ জন বিভিন্ন মামলার ৮৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় বিদেশি পিস্তল গুলি ও মাদক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, কোতয়ালি থানা ৩১জন, চৌগাছা থানায় ৭ জন, শার্শা থানায় ৯ জন, ঝিকরগাছায় ৯ জন, বেনাপোলে ১, কেশবপুরে ৭ জন, মনিরামপুরে ৯ জন, অভয়নগর ৮ জন ও বাঘারপাড়ায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এসময় উদ্ধার করা হয় ২টি বিদেশি পিস্তল ১০ রাউন্ড গুলি, ১০টি দা’সহ ৬শ’ গ্রাম গাজা ও ৭৫ পিচ ইয়াবা।
মানিকগঞ্জে ৭ জন গ্রেপ্তার
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জ জেলায় শনিবার রাতে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্ততারকৃতরা হলো মানিকগঞ্জ সদরে মাওলানা নুরুল ইসলাম (৪৫), সিংগাইরে ফরিদ (৩৯), সাটুরিয়া থানায় মো. বিল্লাল হোসেন (৩০) শিবালয় থানায় মো. আব্দুল মান্নান খান ওরফে চানাচুর মান্নান, ঘিওর থানায় মো. জয়নাল চিশতী (৪০), হরিরামপুর থানায় মো. সফিকুল ইসলাম (৪৫) এবং দৌলতপুর থানায় ০১ জন।
সখীপুরে গ্রেফতার ৬
সখীপুর উপজেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের সখীপুরে ধর্ষণ ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ ছয় মাদকসেবীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সখীপুর থানা পুলিশ,গত শনিবার রাতে উপজেলার নলুয়া ও পাহাড়কাঞ্চনপুর এলাকা থেকে ওই ছয়জনকে গ্রেফতার করে। এ সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে তাদেরকে টাঙ্গাইল আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গঙ্গাচড়ায় জামায়াতের আমির গ্রেফতার
গঙ্গাচড়া (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গঙ্গাচড়ায় জামায়াতের আমিরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানাগেছে, উপজেলার পাকুড়িয়া শরীফ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা জামায়াতের আমির শফিকুল আলম কলেজের অফিস কক্ষে বসে ছিলেন। গতকাল দুপুর ১টার দিকে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দিনেই তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
তিন দিনে গ্রেফতারের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশী বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি পবিত্র রমজান মাসে ইফতার ও সেহেরির সময়ে বাড়ি বাড়ি পুলিশের হানা
ইনকিলাব রিপোর্ট : সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গি গ্রেফতারের নামে বিরোধী দলের নেতাকর্মী গ্রেফতার এবং পুলিশের বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। পবিত্র রমজান মাসেও পুলিশের হয়রানি ও নির্যাতন থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং নিরীহ লোকজনও রেহাই পাচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ইফতারী কিংবা সেহেরীর সময়েও পুলিশ বাড়ি বাড়ি এসে হানা দিচ্ছে। কোন ধরনের মামলা ও গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়াই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যখন তখন আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাদের দাবী কোন ধরনের হয়রানি নয়, তালিকাভুক্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। জঙ্গিবিরোধী বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান নাম দেয়া হলেও আটক করা হচ্ছে, ছিচকে চোর, সন্দেহভাজন ছিনতাইকারী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার আসামি। পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, গত তিন দিনে (রোববার দুপুর পর্যন্ত) সারা দেশে ৫ হাজার ৭২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৮৫ জঙ্গি গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবী, গতকাল পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশী নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিরোধীদলকে দমন করার জন্যই এ অভিযান। সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, জঙ্গি দমনের নামে সারা দেশে একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকার জঙ্গি দমনের নামে বিএনপি দমনের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। গ্রেফতারের নামে পুলিশ বাণিজ্য করছে। সরকার পুলিশকে ঈদ বকশিস হিসেবে এই গ্রেফতার বাণিজ্যের সুযোগ দিয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এই গণগ্রেফতারের নিন্দা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, পুলিশ জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ গণগ্রেফতার আইনবিরোধী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পুলিশের দাবী, গতকাল রোববার দেশব্যাপী পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৮ জঙ্গিসহ ২১৩২ জন গ্রেফতার। এর মধ্যে ৪৭ জন জেএমবি, ১ জন আনসার উল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। এর আগে শুক্র ও শনিবার দেশব্যাপী বিশেষ অভিযানে ৩ হাজার ১শ’ ৯২ জনকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় পুলিশ বলছে, জঙ্গি দমনের জন্য শুক্রবার থেকে তাদের যে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে তাতে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭শ’ ৫৬ জনকে আটক করা হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত পুলিশের অভিযানে আটককৃত অভিযুক্ত জঙ্গির সংখ্যা দাঁড়ালো সর্বমোট ৮৫ জন। পুলিশ বলছে, জঙ্গি এবং সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত সন্দেহে যে তালিকা রয়েছে, তার ভিত্তিতে এই অভিযানে আটক করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদুর রহমান জানান, রাজধানীতে অভিযান শুরুর পর থেকে ২৩১ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
এদিকে গতকাল পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকার কামারপাড়ার বাসিন্দা সাহেদ আলী অভিযোগ করেছেন, তাঁর কলেজ পড়–য়া ছেলে রাফিকে সেহেরীর পর পুলিশ রাস্তা থেকে আটক করে। রাফি সেহেরী খেয়ে ওই এলাকায় মসজিদে ফজরের নামাজ পড়তে যাচ্ছিল। কোন ধরনের অভিযোগ ছাড়াই তাকে আটক করা হয়। পরে রাফি তার বাবাকে মোবাইল ফোনে খবর দিলে ঘটনাস্থলে আসেন তিনি। সাদে আলী আরো জানান, পুলিশ ৫০ হাজার টাকা দাবী করেছিল, না দিলে জঙ্গি মামলায় আসামী করে আদালতে পাঠানোর হুমকি দেয়া হয়। পরে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে হয়েছে।
রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, গত রাতে বাসা থেকে তার ও ছোট ভাইয়ের ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। রাত ৩টার দিকে মেরাদিয়া এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের পুলিশ তারা করে। পরে বাসায় এসে তাদের আটক করে। সন্দেহভাজন হিসাবে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশেকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতে হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম জুনাইয়েদ মিয়া। তিনি বর্তমানে ভয়ভীতির মধ্যে আছেন বলে জানান।
এছাড়া গতকাল সিলেট, হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভী বাজার, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর থেকেও এ ধরনের প্রচুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীদের অনেকেই জানিয়েছেন, যারা উইপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে কাজ করছেন তাদের টার্গেট করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামে আরও ৩৯৯ জন গ্রেফতার
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে চলমান ‘জঙ্গি বিরোধী’ অভিযানের দ্বিতীয় দিনে জঙ্গি ছাড়াই আরও ৩৯৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এনিয়ে গত দুই দিনের অভিযানে চট্টগ্রামে ৭৭৫ জনে গ্রেফতার করা হলো। তবে তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি অভিযোগ নেই।
জেলার বিভিন্ন থানা থেকে গতকাল আটক ২২০ জনের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের ১১ জন নেতাকর্মী আছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার দিনগত রাতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) রেজাউল মাসুদ জানান, জেলার ১৬ থানায় রাতভর অভিযান চালিয়ে ২২০ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জন শিবির ও ৬ জন জামায়াত দলীয় নেতাকর্মী। একই অভিযানে ৩ হাজার ৭ পিস ইয়াবা, ৬০৩ লিটার চোলাই মদ, ৫০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় জঙ্গি সংগঠনের কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় পুলিশ বাড়ি-ঘরে হানা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যারা টাকা দিতে পারছে, তাদের ছেড়ে দেওয়া হলেও অনেক নিরপরাধ লোকজনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। আবার মামলা নেই এমন লোকজনকেও পুলিশ বিভিন্ন মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতে চালান দিচ্ছে। অভিযানের মুখে বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছেন না বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে যারা ছিলো তাদেরও এ অভিযানে টার্গেট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবার যাদের আটক করা হয় তাদের গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে আইনজীবীরা জানিয়েছেন বেশিরভাগ লোককে পুলিশ কোন কারণ ছাড়াই ধরে নিয়ে এসেছে। যারা পুলিশের দাবি পূরণ করেছে তাদের ছেড়ে দিলেও যারা পুলিশকে খুশি করতে পারেনি তাদের আদালতে তোলা হয়েছে।
সিএমপির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় চব্বিশ ঘন্টায় ১৬১জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় ৬ হাজার ২৬৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১৩টি কিরিচ, একটি কার্তুজ, ২টি গুলি উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার ১৬১ জনের মধ্যে কোন জঙ্গি নেই। তাদের মধ্যে ৫৩ জনকে নিয়মিত মামলায়, ৩০ জনকে গ্রেফতারি পরোয়ানামূলে এবং সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে নগরীর পাঁচলাইশ থানা থেকে ১৫ জন এবং বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের অভিযানে ৮৬ জন গ্রেফতার
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়া পুলিশের অভিযানে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৫জন জেএমবি সদস্য এবং ৮জন জামায়াত শিবিরের নেতাসহ বিভিন্ন মামলার ৮৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। বগুড়া পুলিশের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য শহীদুল ইসলাম ওরফে মোসাদ্দের ওরফে মিজুকে (২৮), শেরপুর উপজেলা থেকে একরামুল হককে (২৮) ধনুট উপজেলা থেকে ও গোলাম মোস্তফা ঝুমুর (২৯) ও রফিকুল ওরফে পলাশকে (২৬) গাবতলী উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের জামায়াতে ইসলামের ইউনিয়ন আমির মোঃ শাহিনুর ইসলাম (৪০), শাজাহানপুর উপজেলার চুপিনগর ইউনিয়নের সাবেক আমির মোঃ মোজাহার আলী (৫০), শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদকে শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বটতলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদেরসহ বিভিন্ন মামলায় মোট ৮৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিলেটে সাঁড়াশি অভিযান : তিন দিনে গ্রেপ্তার ২৬২
সিলেট অফিস জানায়, সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও চলছে সাঁড়াশি অভিযান। ওই অভিযানের তৃতীয় দিনে সিলেটে ৬৮ জনসহ মোট ২৬২জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে এখনো পর্যন্ত কোন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গত তিন দিনে সিলেটে ২৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতার বিভিন্ন মামলা আসামি। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদ দলের নেতাকর্মীরাসহ ছিনতাইকারী, ডাকাতসহ চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনকি ওই অভিযানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হিজবুত তাহরীর এক সদস্য রাজধানী থেকে আটক
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, নোয়াখালী জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল রাজধানীতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ডা. জাকারিয়া হাবিব (৩৫) নামের এক হিজবুত তাহরীর সদস্যকে আটক করেছে। গতকাল রোববার দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকার হাজারীবাগ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটককৃত ডা. জাকারিয়া হাবিব নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের বাসিন্দা।
জেলা বিশেষ শাখা (নোয়াখালী)র কর্মকর্তা মো. আইনুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আটকের পর জাকারিয়া হাবিবকে নোয়াখালীতে আনা হচ্ছে।
নীলফামারীতে জেএমবি সদস্যসহ গ্রেফতার ১৫
নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে নীলফামারীতে পুলিশের বিশেষ সাঁড়াশি অভিযানে একজন জেএমবি সদস্য ও এক জামায়াতকর্মীসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্য হলেন, আমজাদ হোসেন (৪৫)। সে জেলার জলঢাকা উপজেলার পৌর এলাকার ডাঙ্গাপাড়া মহল্লার আফতাব উদ্দিনের ছেলে। গতকাল রোববার ভোর রাতে তাকে নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নীলফামারী পুলিশের কন্ট্রোলরুম সূত্র মতে, পুলিশের বিশেষ সাঁড়াশি অভিযানের তৃতীয় দিনে জেলার ছয় উপজেলার মধ্যে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় এক জেএমবি সদস্যসহ ৪ জন, ডোমার উপজেলায় ১ জন, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় এক জামায়াতকর্মীসহ ৫ জন ও সৈয়দপুর উপজেলায় ৫ জনসহ মোট ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
মাগুরায় গত তিন দিনে ৫৯ জন গ্রেফতার
মাগুরা জেলা সংবাদদাতা জানান, মাগুরা জেলার ৪ থানায় গত তিন দিনে পুলিশের বিশেষ অভিযানে মাগুরা জেলা জামায়াতের আমির, জামায়াত বিএনপির কর্মীসহ বিভিন্ন মামলায় সংশ্লিষ্ট ৫৯ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলা জামায়াতের আমির আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ রাতে অন্যান্য মামলায় আরো ২৩ জনকে বিশেষ অভিযানের আওতায় গ্রেফতার করা হয়। গত শুক্রবার রাতে একই অভিযানের আওতায় বিএনপি জামায়াত কর্মীসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত শনিবার রাতে অভিযানের আওতায় বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতাকর্মীসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন