স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার হওয়ার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, গত দশ বছরে দেশ থেকে ৪০ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরেই পাচার হয়েছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেতো।
রোববার সকালে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে বেলা ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। বৈঠকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ সরকারি দলের চিপ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, আবদুর রহমান, মোসলেম উদ্দিন, কামাল আহমেদ মজুমদার, শফিকুল ইসলাম শিমুল, সফুরা বেগম, কাজী রোজী, এ কে এম ফজলুল হক এবং হাবিবুর রহমান।
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, অর্থমন্ত্রী সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তা মোটেই বিশাল নয়। কিন্তু আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব না।
তিনি বলেন, দেশের টাকা মালয়েশিয়া, আমেরিকা, কানাডা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, পানামায় পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ টাকা ফেরত আসবে না। এ টাকা যদি বিনা বাক্যে ব্যয়, বিনা অজুহাতে আবাসন খাতে, পর্যটন খাতে, শেয়ার মার্কেটে, শিল্প খাতে, মৎস্য খাতে, হাঁস-মুরগি খামারে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়া হতো তাহলে কোনো কথা থাকতো না। কিন্তু এখানে সুযোগ দেয়া হয় না। এনবিআর এমনভাবে ব্যবস্থা করে যে, আয় অল্প দেখায়, বাকি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়।
ফিরোজ রশিদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হলে সর্বাগ্রে আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা-লুণ্ঠন বন্ধ এবং পুঁজিবাজারকে রক্ষা করতে হবে। ব্যাংকিংখাতে পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি হয়েছে। জাতি জানতে চায় এ সাগরচুরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া রিজার্ভ উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৬ কর্মকর্তা জড়িত। এর ফলে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ কমে যাবে, লক্ষ্য অর্জিত হবে না।
তিনি বলেন, গত ৭ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অর্থ কেলেঙ্কারিতে কেউ শাস্তি পায়নি, একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। চলতি বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা, মামলা হয়েছে কিন্তু কেউ চিহ্নিত হয়নি। ২০১০ সালে শেয়ার বাজারে লুট হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা, মামলা নেই, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হলো, তানভীর, জেসমিন চৌধুরীর সাজা হয়নি, বিচারাধীন রয়েছে।
ফিরোজ রশিদ বলেন, বেসিক ব্যাংকের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা, বিসমিল্লাহ গ্রæপ ১১০০ কোটি টাকা লুটপাট করেছে। ডেসটিনি ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, সাজা হয়নি। বিচারাধীন আছে। অগ্রণী ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকা লুটপাট। শত শত, হাজার কোটি টাকা লুটপাট হবে আর আমরা এখানে বসে বসে তামাশা দেখবো, চেয়ে চেয়ে থাকবো, এটা হয় না।
সরকারি ব্যাংকগুলো ধ্বংসের মুখোমুখি। সোনালী ব্যাংক ছাড়া সব ব্যাংক বেসরকারি খাতে দিতে হবে।
বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের ধারক-বাহক
বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসীদের ধারক-বাহক হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত আজ দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা দেশব্যাপী হত্যার রাজনীতি শুরু করেছে। মানুষ মেরে ক্ষমতায় আসা যায় না। ক্ষমতায় আসতে হলে মানুষকে ভালো বাসতে হবে।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা ঘটানোর জন্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। তারা পুলিশ সুপারের স্ত্রীকে হত্যা করেছে। তাদের একটাই উদ্দেশ্য দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা।
তিনি বলেন, যারা নির্বাচন চায় না, নির্বাচন করে না, তারা কি করে ক্ষমতায় আসবে। ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা ভুল করেছে। আর সে ভুল সংশোধনের জন্য মেয়র নির্বাচন ও ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এসব নির্বাচনে এসে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে তারা আছে। কাজেই এই সরকারকে কোনোভাবেই অবৈধ বলতে পারবে না।
প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘দিনবদলের সনদ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত সাত বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কখনো পিছু হটেনি, দ্রæতগতিতে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে খালেদা জিয়া ও তাদের দোসররা শেখ হাসিনা ও বর্তমান সরকারকে সহ্য করতে পারছে না।
আব্দুস শহীদ বলেন, সরকারের উন্নয়ন, সফলতা ও অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে তারা এখন গুপ্তহত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। পুলিশের পরিবারের ওপর হামলা পর্যন্ত করছে। কিন্তু এসব করে জনগণের সমর্থন আদায় করা যাবে না। দেশের জনগণ বিএনপি-জামায়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছে। শুধু দেশের জনগণই নয়, সারাবিশ্বের বাঘা বাঘা নেতারাও এখন শেখ হাসিনার পক্ষে। তাই আগামী নির্বাচনে দেশের জনগণ আবারও শেখ হাসিনাকেই নির্বাচিত করবে।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকায় বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১৩৬৪ মার্কিন ডলারে উপনীত হয়েছে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা বলেন, সরকার দৃঢ় হাতে এসব দমন করছে। এবারো এসব গুপ্তহত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে সক্ষম হবে। তারা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইউপি নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করেছে। এর ফলে দেশের সব ইউপিতে নৌকার বিপুল বিজয় সম্ভব হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন