বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

প্রবল বর্ষণে বরিশালের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দক্ষিণ-পশ্চিম মওসুমী বায়ু উপকূলভাগে প্রবেশের মুখেই গতকাল মধ্যরাত থেকে বিকট শব্দের লাগাতার বজ্রপাতের সাথে প্রবল বর্ষণে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাত আড়াইটা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত একটানা নজীরবিহীন বজ্রপাতে মারাত্মক ভীতি ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে। অনেক বাড়ীঘরে শিশুরা মধ্যরাতে কান্না জুড়ে দেয়।
সাথে বরিশাল মহানগরীসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। সকাল সাড়ে ৫টার পরে বজ্রপাতের পরিমাণ কিছুটা হ্রাস পেলেও থেমে থেমে বজ্রবৃষ্টি চলে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। এসময় বরিশালে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪২ কিলোমিটার। দক্ষিণের নদী বন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি রাখা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার পরে বরিশাল মহানগরীতে ক্রমান্বয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনর্বহাল হতে শুরু করলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এলাকা সমূহ অন্ধকারেই ছিল। গতকাল দুপুর ১২টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে প্রায় ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে গোপালগঞ্জে ১৮৭ মিলিমিটার। এ বর্ষণে বরিশাল মহানগরীর বেশীরভাগ এলাকাই আবারো পানির তলায় চলে যায়। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নগরীর ব্যস্ততম নবগ্রাম রোডসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়ই পানি থৈ থৈ করছিল।
তবে এ বর্ষণের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত বিরামহীন বজ্রপাতে। বিকট শব্দের টানা এ বজ্রপাতে শিশুসহ প্রায় সকলের মধ্যেই মারাত্মক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক বয়স্কদের মতেও এ ধরনের গগনবিদারী আওয়াজের লাগাতার বজ্রপাতের ঘটনা স্মরণকালের মধ্যে ঘটেনি। তবে আবহাওয়া বিভাগের মতে, এটা কিছুটা নজিরবিহীন হলেও খুব একটা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। যেহেতু দক্ষিণ-পশ্চিম মওসুমী বায়ু দেশের উপকূলভাগে প্রবেশ করছে, পাশাপাশি উত্তরের বায়ুও প্রবাহিত ছিল। তাই দু’দিকের বায়ুপ্রবাহের সাথে ভারী মেঘের সংঘর্ষে এত দীর্ঘ সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে।
ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী বর্ষণের আশংকায় বরিশালসহ দক্ষিণের সব নদী বন্দরে ২নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে অনধিক ৬৫ ফুট দৈর্ঘের সব যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরী অব্যাহত থাকার কথা জানান হয়েছে। ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবার আশংকার কারণে পায়রাসহ সব সমুদ্র বন্দরকেই ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে বলে জানিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মওসুমী বায়ু দেশের পূর্ব-দক্ষিণ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে বলে জানান হয়েছে। যা আজ সকালের পরে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল হয়ে সংলগ্ন মূল ভূখÐ পর্যন্ত অগ্রসর হবার কথাও বলা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বরিশাল ও খুলনাসহ দেশের পূর্ব উপকূলীয় এলাকা এবং পূর্বাংশের অধিকাংশ জায়গায় এবং দেশের অন্যত্র কিছু কিছু এলাকায় অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। একই সাথে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত বরিশাল ও খুলনাসহ উপকূলীয় এলাকা এবং অন্যত্রও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সতর্কতাও জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
তবে মধ্যরাত থেকে ভারী বর্ষণের পরে গতকাল দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে বরিশালের আকাশে প্রথম সূর্য উঁকি মারে। এর পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্তই মেঘের সাথে সূর্যের লুকোচুরি খেলা চলে। তবে সকাল সাড়ে ১১টার পরে সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরিশালে আর কোন বৃষ্টিপাত হয়নি। বরিশালে গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা ছিল আগের দিনের প্রবল বর্ষণ পরবর্তী সময়ের চেয়ে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশী। আবহাওয়াবিদদের মতে, বর্ষা মাথায় করে দক্ষিণ-পশ্চিম মওসুমী বায়ু উপকূলে দোরগোরায় পৌঁছলেও দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা এখনো কিছুটা বেশী।
গতমাসে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র প্রভাবে বরিশাল অঞ্চলসহ সমগ্র উপকূলভাগে প্রবল বর্ষণসহ স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট উচ্চতার জোয়ারে বিচ্ছিন্ন দ্বীপসমূহ এবং দক্ষিণের বিশাল জনপদ পানির তলায় চলে যায়। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুর এলাকার বিস্তীর্ণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উপকূলীয় বাঁধের অনেক এলাকাই ভেঙে গেছে ওই জলোচ্ছ¡াস ও প্রবল বর্ষণে। রোয়ানুতে ভর করে বরিশালে প্রায় ৩শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, উত্তর শ্রীলংকা ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় গত ১৭ মে ১১.০ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮১.০ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। এটি প্রথমে উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় ১৯ মে সকাল ৯টায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। পরে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র রূপ নেয়। ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তীতে উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও উত্তর বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে ২১ মে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে। রোয়ানুতে ভর করে আসা গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলকে সয়লাব করে দেয়ার মাত্র ২১ দিন পরে দক্ষিণ-পশ্চিম মওসুমী বায়ু বর্ষা নিয়ে উপকূলে প্রবেশের মুখেও আবার উপকূলীয় জনজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। তবে এসব কিছুর মধ্যেও আবহাওয়াবিদদের আশার কথা হচ্ছে, দীর্ঘ তাপ প্রবাহের পরে এবার উপকূলভাগসহ দেশে বর্ষা আসছে সময়মতই।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন