শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারত-মার্কিন সম্পর্কে নতুন সুর

প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতাকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত-মার্কিন সম্পর্কে এখন নতুন সুর বাজছে।
তিনি বিষয়টি আরো ভালো করে বলেননি। বস্তুত যুক্তরাষ্ট্রে তার সর্বশেষ সফর বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ও অন্যতম প্রাচীন গণতন্ত্রের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।
আগামী বছরের গোড়ায় বারাক ওবামার অফিস ত্যাগের আগে এটাই হয়ত দু’পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। ওবামা হলেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় দু’বার ভারত সফর করেন। ভারত-মার্কিন সম্পর্কের এ নতুন মোড় শীতল যুদ্ধ পর্বের অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত। তখন কেউ কারো চোখের দিকে চাইতও না। এমনকি তা মাত্র ক’দিন আগের ভারতের সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) সরকারের শেষদিকের সময়ে যে সম্পর্ক ছিল সে তুলনায় এ পরিবর্তন হচ্ছে সাগর সমতুল্য। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে একজন ভারতীয় কূটনীতিককে নগ্ন করে তল্লাশি করার ঘটনায় দু’দেশের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এখন প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যা ভারতকে সে প্রযুক্তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ করে দেবে যা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও অংশীদারেরাই শুধু পেয়ে থাকে।
মোদির “মেক ইন ইন্ডিয়া” গড়ার ক্ষেত্রে এটা হবে এক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য যার লক্ষ্য হচ্ছে ভারতের উচ্চ বেকারত্ব কমিয়ে আনা।
এ সাথে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েস্টিংহাউস কর্তৃক ৬টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে যা হচ্ছে বহু বিলম্বিত ভারত-মার্কিন বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তির বাণিজ্যিকীকরণ।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার এ আনন্দ-উচ্ছ¡াস পাকিস্তানের ভ্রƒ কুঞ্চিত করেছে। পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অ ন্যাটো মিত্র। এখন সে চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক সরবরাহ গ্রæপে (এনএসজি) ভারতের অন্তর্ভুক্তির সমর্থন করার কারণে পাকিস্তান তার উপর অসন্তুষ্ট।
দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার পিছনে সবাই ওবামা ও মোদির ব্যক্তিগত রসায়ন দেখতে পেলেও এর পিছনে আরো অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বলয়ে দু’দেশের অভিন্ন স্বার্থ যার মধ্যে রয়েছে এ অঞ্চলে চীনের আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ। তবে এ কথা বলা বেশি অনুমানভিত্তিক হয়ে যাবে যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র প্রতিটি বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করবে।
সম্প্রতি চীন দক্ষিণ চীন সাগরে ক্রমবর্ধমানভাবে শক্তি প্রদর্শন করছে। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে চীনের প্রতি কিছুটা কড়া হুঁশিয়ারি জ্ঞাপন করেছে। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট নীতি’র সাথে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে পুনঃভারসাম্য বা সমঝোতা করবে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করাই ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’র লক্ষ্য।
ভারত তার প্রতিবেশিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। সে আফগানিন্তানের অন্যতম বৃহৎ অর্থদাতা দেশ। মোদি ইউরোপ সফরে যাওয়ার আগে ভারতীয় সাহায্যে নির্মিত আফগানিস্তানের আফগান-ভারত মৈত্রী বাঁধ উদ্বোধন করেন।
ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নানা ধরনের অস্ত্র কিনছে। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এক হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে।
২০১১ থেকে ২০১৫ সালে ভারত ছিল বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক। আগে ভারত রুশ অস্ত্রের উপর বিপুল পরিমাণে নির্ভরশীল ছিল। এখন আর সে অবস্থা নেই।
আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে নিজের জায়গা করে নিতে ভারত আমেরিকার সাহায্য চাইছে। নয়াদিল্লী জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হতে চেষ্টা করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তাকে সমর্থন দিচ্ছে। পাশাপাশি ভারত এনএসজি, ওয়াসেনার অ্যারেঞ্জমেন্ট ও অস্ট্রেলিয়া গ্রæপের মত ফোরামগুলোতে প্রবেশ করতে চায়। সে জন্য মার্কিন প্রভাব তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনে ভারতের প্রবেশ প্রায় নিশ্চিত।
ওবামা তার দু’মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি যেভাবে পুনর্বিন্যাস করেছেন সাম্প্রতিক ইতিহাসে আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা করেননি। ইরান, কিউবা, ভিয়েতনামের কাছে পৌঁছেছেন তিনি। তিনি সেই অধ্যায়ের সভাপতিত্ব করেছেন যখন যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানকে এক চোখে দেখা সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করেছে।
এ সময়েই মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির রাডারে পাকিস্তানকে গুরুত্ব প্রদানের অবসান ঘটে। সাম্প্রতিক আফগান তালিবান প্রধানকে হত্যা এবং অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা পাকিস্তানের সাথে মৈত্রীর কারণে ওবামার হাতকে আটকে রাখতে পােেরনি।
এর বাইরে পাকিস্তানের সকল আবহাওয়ার মিত্র চীনের সাথে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা ওয়াশিংটনের নীতি নির্ধারকদের কাছে ঘটনা হিসেবে কাজ করেছে।
ভারত ও যুক্তরাষ্টের মধ্যে নানা বিষয়েই মতপার্থক্য রয়েছে। যেমন সিরিয়া সংকট, কিছু নির্দিষ্ট বাণিজ্য বিষয় এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের অধিকার। পাশাপাশি নয়াদিল্লীর সর্বদাই একটি কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের নীতি রয়েছে এবং তাড়াহুড়ো করে তা বিসর্জন দিতে চায় না।
এ বছরের এপ্রিলে ভারত লজিস্টিক্স এক্সচেঞ্জ মেমোরান্ডাম অব এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে যা থেকে সুস্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক স্থাপনা শেয়ার করতে নয়াদিল্লীর কোনো আপত্তি নেই যতি যুক্তরাষ্ট্রও একইভাবে তা করে।
এটা হচ্ছে এক বিশাল অগ্রগতি যা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি ভারত তার সামরিক ঘাঁটিগুলো বিদেশীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এ চুক্তিতে অবশ্য ভারতের মাটিতে মার্কিন সৈন্য মোতায়েনের অনুমতি নেই। ওয়াশিংটন ভারতকে বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু হিসেবে দেখছে। এ পারস্পরিক আস্থা ও অভিন্ন স্বার্থের কারণে মোদির নিজের ভাষায় ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ইতিহাসের দ্বিধা অতিক্রম করেছে। সূত্র আল জাজিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
বাবু ১৩ জুন, ২০১৬, ১১:০০ এএম says : 0
পুরান সুর নতুন মোড়কে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন