ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পৌরসভা এলাকার একজন মিজান শেখ। বাঁকাইল গ্রামে বাড়া বাড়িতে বসবাস করলেও উপজেলা পর্যায়ে একনামে মিজান শেখকে সবাই চিনে। কাহিনীর শুরুটা খুবই কঠিন। নিজের শেষ সম্বল পৈতৃক ভিটা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পরিচিত সবাই নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু কারো কথা না শুনে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বাড়ি ছেড়ে দিলেন। বাড়ি বিক্রির পর দ্রুত ঘুরে যায় জীবনের চাকা। তিনি বাড়ি বিক্রির টাকায় গাভী পালন করে অল্পদিনে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
মিজান শেখ বোয়ালমারী উপজেলার হাসামদিয়া গ্রামের মরহুম রহমান শেখের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে হাসামদিয়া বাজারে বিস্কুট ফ্যাক্টরির ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। বেশ ভালোই চলছিল। এ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিবারের খরচ বহনসহ ছেলে মেয়ের লেখা পড়ায় কোনো অসুবিধা হয়নি।
হঠাৎ করে রাতের আধারে আগুনে পুড়লো সর্বস্ব। প্রায় সাত বছর পূর্বে এ দুর্ঘটনায় মিজান শেখ এলাকা ছেড়ে যান। এরপর অনাহারে অর্ধাহারে পরিবার নিয়ে চলতে থাকে এক কঠিন জীবন। যখন চোখে একেবারে অন্ধকার দেখা শুরু করেন ঠিক তখনই মিজান শেখ শেষ সম্বল পৈতৃক বাড়ি বিক্রি করেন। নিজের এলাকা ছেড়ে আলফাডাঙ্গা বাঁকাইল গ্রামে ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
জীবন বদলে যাওয়ার কাহিনী বললেন মিজান শেখ। তার কথায়, প্রথমে এসে বাড়ি বিক্রির টাকায় তিনটি গাভী ক্রয় করেন। তিন বছরে গাভী পালন শুরু করে বর্তমানে ১৯টি গাভীসহ কয়েকটি বাচ্চা নিয়ে গড়ে তুলেছেন দুধের খামার।
গতকাল দুধের খামার সম্পর্কে মিজান শেখের কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, বর্তমানে ৬টি গাভী দুই বেলা ৬০ থেকে ৬৫ কেজি দুধ দেয়। সারা বছরেই গাভী দুধ দেয়। দুধ বিক্রি করে খামারের খরচ বহনসহ পরিবার চলছে বেশ ভালোই।
মিজান শেখ আরো বলেন, গড় হিসেবে প্রতি বছর প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। এক ছেলে আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স শেষ বর্ষে এবং মেয়ে কামার গ্রাম কলেজে এইসএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করে। বর্তমানে খামার ব্যবসায় মোটামুটি ভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এখন সরকারি ভাবে যদি বেশী পরিমাণ ঋণ সহযোগীতা পেতেন তাহলে আরো গাভী কিততেন। এতে এলাকার বেকার ছেলেদের অর্থের বিনিময় কাজের সুযোগ হতো। সে সঙ্গে বেকার যারা তাদেরও রোজগারের পথ খুলে যেত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন