শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারত-নির্ভরশীলতার খেসারত

৩০ টাকার পেঁয়াজ ৭০, সচিব বললেন দাম স্বাভাবিক হবে ২৪ ঘণ্টায়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

রমজান মাসে কার্যত সব নিত্যপণ্যের দাব বাড়ে। সেই রমজানের মূল্য বৃদ্ধিকেও হার মানিয়েছে পেঁয়াজ। হঠাৎ করেই মসলা-জাতীয় এই পেঁয়াজের দাম হয়েছে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। এ অবস্থায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, অংশীজনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক শেষে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন।
পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের ওপর অধিক নির্ভরশীল হওয়ায় পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। ভারতে পেঁয়াজের সঙ্কট বুঝতে পারলেই এদেশে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে ভোক্তাদের দ্বিগুণ দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়। এক মাস আগেও হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সেই দাম কিছুটা কমে এলে দুই দিন আগে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেদের ভারতপ্রীতি এবং ব্যর্থতা আড়াল করতে পেঁয়াজের সঙ্কট নেই; পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে ঘোষণা দেয়। কিন্তু ততক্ষণে শত শত কোটি টাকা ভোক্তাদের পকেট থেকে সিন্ডিকেট নিয়ে নেয়। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যে বৈঠকের আয়োজন করা হয় সেখানে পেঁয়াজের ব্যবসা করেন এমন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দেখা যায়নি।

অবশ্য এর মধ্যেই রাজধানী ঢাকায় কয়েকটি স্পটে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। গতকাল ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিজনের কাছে দুই কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছে। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এই বিক্রি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে টিসিবি।
সচিবালয়ে বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন বলেন, আমি খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, ভারতের মহারাষ্ট্রে বন্যা হওয়ায় তারা পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি ২৫০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছে। এতে বাংলাদেশে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।

এ বক্তব্যের পরপরই সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন বাণিজ্য সচিব। একজন সাংবাদিক জানান, ভারত গত ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বাজারে ৩০ টাকার পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। যে পেঁয়াজের দাম আগের একদিন আগে ছিল ৩০ টাকা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা বেড়ে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা হয় কী করে? এটা সরকারের ব্যর্থতার প্রমাণ কি না?
এ প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আমাদের পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আমরা মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। তাছাড়া আমাদের দেশেও পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। টিসিবি খোলা ট্রাকে বিক্রি শুরু করেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

বাণিজ্য সচিব বলেন, আমরা হিসাব করে দেখলাম আমদানি পর্যায়ে যেগুলো পাইপলাইনে আছে এবং বর্তমানে যে মজুদ আছে, তা সন্তোষজনক। কাজেই আমার মনে হয় পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কারণ নেই। তিনি বলেন, পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে বেশি গ্যাপ মনে হচ্ছে। এটা যাতে কমে আসে, সেজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ থেকে শুরু করে আরও কিছু এজেন্সি এগুলো মনিটরিং করে থাকে। আশা করি, মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। এই সমস্যা আর থাকবে না।

মাত্র পাঁচ দিন আগে যে পেঁয়াজের খুচরা দাম ছিল প্রতি কেজি ৩০ টাকা। আজও তা বিভিন্ন বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জরুরি বৈঠক করে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করে ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবিরুনী বলেন, পেঁয়াজ সিজনাল এবং পচনশীল হওয়ার কারণে আমদানি করতে হয়। আমাদের চাহিদা ২৪ লাখ টন। উৎপাদনও প্রায় ২৪ লাখ টন। কিন্তু পচনের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সাড়ে ৭ লাখ টন। এ জন্য আমরা ১০ থেকে ১১ লাখ টন আমদানি করি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য দিয়ে ট্যারিফ কমিশন সদস্য বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ টনের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। আমদানির পর্যায়ে রয়েছে ৪০ হাজার টন। এটা আসলে আমাদের লিংক পিরিয়ড দেড় মাসে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশীয় নতুন পেঁয়াজ আসবে এবং ভারতে এর এক মাস আগে নতুন পেঁয়াজ নামবে। তখন ভারত বেরিয়ার উঠিয়ে দেবে। তখন স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এটা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।

সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির অনুপস্থিতিতে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে টিসিবির চেয়ারম্যান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কমকর্তাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেয়ার কথা থাকলেও একজন অপরিচিত ব্যবসায়ী ছাড়া আর কেউ অংশ নেননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Mohammed Kowaj Ali khan ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:১০ এএম says : 0
ভারত হইতে সকল আমদানি বন্ধ করা হোক। ইনশাআল্লাহ ।
Total Reply(0)
Nazmul Hasan ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৪:০১ এএম says : 0
জেলা পর্যায়ে পেয়াজ ৭০ টাকা কেজি। বাজার মনিটরিং কে করবে। সেখানে পাইকারী ও খূচরা বাজার পরিদর্শন করবে কে?
Total Reply(0)
গোলাম রাব্বানি চৌধুরী মানিক ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৪:০২ এএম says : 0
টিসিবির খোলা বাজারে যে পেঁয়াজ বিক্রি হবে সে সুবিধা কতজন ক্রেতা পাবে?এটা অনেকটা সুধের স্বাধ সাধা জাতীয় তরল গিলে মিটানো।
Total Reply(0)
ইমরান ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৪:০২ এএম says : 0
কত দিনে ২৪ ঘণ্টা হবে ?
Total Reply(0)
Razaul Karim Shahin ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৪:০৩ এএম says : 0
ইন্ডিয়া গরু দেওয়া বন্ধ করেছিল। বাংলাদেশ এখন গরু তে স্বাবলম্বী। পেয়াজ আসা বন্ধ হলে পেয়াজে স্বাবলম্বী হবে ।
Total Reply(0)
Naim Hasan Rony ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৪:০৫ এএম says : 0
পিয়াজ কি ভারত ছাড়া বিকল্প কোন দেশ থেকে আমদানি করা যায় না তাহলেই দাম কম হয়,আর ভারতেরও সিন্ডিকেট ব্যবসা বন্ধ হবে।
Total Reply(0)
Mahfuz Ahmed ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:১২ এএম says : 0
ভারত থেকে আমদানি বন্ধ করা হোক
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন