সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা : সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিলে অবস্থিত মক্কীনগর মাদ্রাসায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নামধারী নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ কয়েক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় এ ঘটনাটি ঘটে। ২ কোটি টাকা চাঁদার দাবিতে এ হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া জানান, আমরা কোন হামলা করিনি বরং তারাই আমাদের উপর হামলার করার চেষ্টা করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করে। এসময় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এক হামলাকারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। মাদ্রাসার সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল তাহের আল হোসাইন জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের মক্কীনগর মাদ্রাসার ভিতরে ক্রয়কৃত জমির উপর
মসজিদ ও মাদ্রাসার ভবন নির্মাণের কাজ চলছিল। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় দিকে ভূমিদস্যু মনির, তার ভাই মফিজুল ইসলাম মজু এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া ৩৫-৪০ জন ক্যাডার বাহিনী নিয়ে মক্কীনগর মাদ্রাসায় আসে। এসময় তারা মসজিদ ও মাদ্রাসার সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয়। এসময় তারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের কাছ থেকে ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে বলে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও শিক্ষকরা সাংবাদিকদের জানায়। পরে মাদ্রাসার শিক্ষকরা চাঁদা চাওয়ার প্রতিবাদ করলে ইয়াছিন মিয়ার দেহরক্ষী ও ৭ খুন মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া সন্ত্রাসী আনোয়ার হোসেন আশিক, শরিফুল ইসলাম, মনির, মজুসহ ৩৫-৪০ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মাদ্রাসায় হামলা করে। তাদেরকে বাধা দিলে আমাকে (মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল তাহের আল হোসাঈনকে) মারধর করে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী মাদ্রাসায় আসলে মাদ্রাসার ছাত্র ও এলাকাবাসী তাদেরকে ধাওয়া দিলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া জুতা ফেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা মফিজুল ইসলাম মজুকে আটক করে। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন। এসময় পুলিশ মজুকে আটক করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে মনির, মফিজুল ইসলাম মজু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া, শরীফুল, বডিগার্ড আনোয়ার হোসেন আশিকের নাম উল্লেখ করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এলাকাবাসী জানায়, এলাকার মৃত সাইজউদ্দিন মিয়ার ছেলে ভূমিদস্যু মনির ও মফিজুল ইসলাম মজু ওই মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের কাছে ইতিপূর্বে কয়েক বার চাঁদা দাবি করে আসছিল। এ নিয়ে কয়েকবার উত্তেজনা দেখা দেয়। এমনকি সন্ত্রাসী মনির ও মফিজুল ইসলাম মজু চাঁদা না দেয়ায় ২০০৮ সালের ১২ মে হামলা এবং ছাত্র-শিক্ষকদের মারধর ও ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসায় ককটেল হামলা করে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সরাফতউল্লাহ জানান, হাজী ইয়াসিন মিয়া দখল করতে যাননি। তিনি ওই সময় ঘটনাস্থল দিয়ে যাচ্ছিলেন। হৈচৈ শুনে ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া জানান, মক্কীনগর মাদ্রাসার মসজিদ তাদের সীমানা ছেড়ে বাইরে চলে আসলে মধ্যস্ততা করার জন্য আমি ঐখানে গিয়েছিলাম। তারা আমার কথা শুনেনি। আমরা কোন হামলা করিনি বরং তারাই আমাদের উপর হামলার করার চেষ্টা করেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানায়, মসজিদ নির্মাণ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। আমরা কোন হামলার খবর পাইনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন