শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে.. আজ বর্ষার প্রথম দিন

প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ‘যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে/এমন দিনে তারে বলা যায়/এমনও ঘনঘোর বরিষায়’। মনের অব্যক্ত কথাগুলো বর্ষাতেই বলার আহ্বান জানিয়ে গেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্বকবির কাছে প্রিয় ঋতু ছিল বর্ষা। আর তাই তার বিভিন্ন গানে প্রজ্বলিত হয়ে উঠে মেঘ-মেদুর বর্ষার রূপ ঐশ্বর্যের শিল্পিত বর্ণনা। আজ পয়লা আষাঢ়। বর্ষা ঋতুর প্রথম দিন। আষাঢ়ের প্রথম দিবসে বৃষ্টি হবে কি হবে না, তা নিশ্চিত করে বলার কোন উপায় নেই। কারণ বদলে গেছে বাংলার আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি। তবে গ্রীষ্মের শেষ দিনে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানেই বৃষ্টি হয়েছে। মেঘদূত কাব্যের অমর ¯্রষ্টা মহাকবি কালিদাস যে যুগে বিরহী যক্ষের বার্তা সজল মেঘকে পত্রদূত কল্পনা করে নীলগিরিতে তার প্রেমিকার উদ্দেশে পাঠিয়েছিলেন আষাঢ়ের প্রথম দিনে, সে যুগে আষাঢ় ছিল অনিবার্যভাবেই বর্ষণমুখর। সেই মুষলধারার বৃষ্টিঝরা বর্ষাও আজ নেই। নগরজীবনে দেখা যায় না রবি ঠাকুরের ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’। গ্রীষ্মের তাপদাহ এখনও বইছে প্রকৃতিতে, বর্ষার মুষলধারার বৃষ্টিতে ভেজার জন্য প্রকৃতি উন্মুখ।
শেষ ক›দিনের ঘাম ঝরানো উত্তাপেই দেশের মানুষের মনে হচ্ছিল বর্ষা যেন বহুকাল বন্দী প্রকৃতির কোন গোপন কন্দরে, আজই ছাড়া পাচ্ছে সেখান থেকে। আর এরই সঙ্গে জলভরা মেঘের আষাঢ় যেন যবনিকা টেনে দিচ্ছে সেই তাপ দহনের জ্বালা যন্ত্রণার অধ্যায়ের, অর্থাৎ গ্রীষ্মের। প্রকৃতি ও উদ্ভিদরাজিও যেন ফিরে পেতে চলেছে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। তাই মানুষ ও প্রকৃতি উভয়ের মধ্যেই চলছে একে বরণ করে নেয়ার নানা আয়োজন।
আজ আসছে বর্ষা। প্রকৃতিতে সবুজের সমারোহ দেখা যাবে আবার। থৈ  থৈ পানিতে নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর-ডোবা কানায় কানায় ভরে উঠবে। বিলে বিলে হেলেঞ্চা ও কলমিলতার সমারোহ দেখা যাবে। আরও দেখা যাবে জাতীয় ফুল শাপলার সমারোহ। বর্ষার প্রধান ফুল কদম।
এছাড়াও কেয়া, কামিনী, জুঁই, কাঠমালতি, কুটরাজ, মালতি, কনকচাঁপা, গন্ধরাজ, হাস্নাহেনা, বেলি ফুল দেখা মিলবে এই বর্ষায়। পেয়ারা, আনারস, বাতাবিলেবু প্রভৃতি ফলে ভরে উঠবে গাছ-গাছালি। কৃষককুল সোনালি আঁশ পাট ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং বন্যামুক্ত আবাদি জমিতে ধানের নতুন চারা রোপণ করেন। বর্ষার বারিধারা লোকালয়ের আবর্জনা ধুয়ে-মুছে দেয়। নাগরিক কোলাহল ছেড়ে বর্ষা মৌসুমে গ্রামবাংলায় বেড়াতে গেলে বাহ্যিক সৌন্দর্যে হয়তো মন ভরে যাবে নাগরিকের। কারণ প্রখর জ্যৈষ্ঠের দগ্ধ প্রকৃতি কোমল বৃষ্টির স্পর্শে প্রাণ ফিরে পায়। নতুন ফুলে-ফসলে ভরে ওঠে চারপাশ। তবে দারিদ্র্যের ছোবলে ক্ষতবিক্ষত অভাবী মানুষের যে দুর্ভোগ আর যন্ত্রণার চিত্র, তা বর্ষার কাব্যগাথা কিংবা সুরের জগৎ থেকে নিয়ে যায় মনোবেদনার এক বিষন্ন ভুবনে, যেখানে বর্ষার বৃষ্টিতে উঠোন কর্দমাক্ত, ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। ভূমিহীন কৃষক, দরিদ্র দিনমজুর, খেটে-খাওয়া মানুষের ছিন্নচালার খড়ের ঘরে দুঃখের মতো চুইয়ে চুইয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি। একটু ভারি বৃষ্টি হলে অন্তহীন কষ্ট।
ঘরে কাকভেজা জীবন। বাইরেও নেই কর্মসংস্থান। ভাতের হাড়িশূন্য আর ঘরের চালা নড়বড়ে দারিদ্র্যের চিত্র সেই কবে সহ¯্রাধিক বছর আগে চর্যাপদের কবির বর্ণনায় পাই, পাই ফুলরার বিরহ যন্ত্রণার ছবি মঙ্গলকাব্যের যুগে। এতকাল পরে আজও বাংলার কৃষকের সেই দারিদ্র্য দূর হয়নি। দুর্ভোগ কমেছে হয়তো কিছুটা, কিন্তু অতিদারিদ্র্যের যন্ত্রণা যেন যে তিমিরে ছিল, সে তিমিরেই রয়ে গেছে। তারপরও বর্ষার ঐতিহ্য অফুরান। বর্ষার কাব্য, গান নিয়ে নগরজীবন, শহুরে জীবন অন্তত মেতে ওঠে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। যথারীতি বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করেছে বর্ষাবরণের নানা অনুষ্ঠান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন